মাঠজুড়ে টানটান উত্তেজনা। চারপাশে দর্শনার্থীদের উল্লাস আর করতালির গুঞ্জন। কারো মুখে বিজয়ের হাসি, কারো চোখে হতাশার ছাপ। ছোট্ট এক ফুটবল মাঠে চলছে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ, যেখানে খেলোয়াড় একজন করেই। বল গড়িয়ে যায় মাঠে, বাঁশির শব্দেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। শুনে অবাক লাগছে? হ্যাঁ, এখানে খেলছে রোবট! চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জাতীয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তি উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই রোবো ফুটবল প্রতিযোগিতা। শুধু ফুটবল নয়, পাশের আরেকটি মাঠে লাইন ধরে ছুটছে রোবোটিক গাড়িগুলো, কেউ পেরোচ্ছে বাঁক, কেউ আবার হোঁচট খাচ্ছে মাঝপথে। আজ শুক্রবার ক্যাম্পাসে এই রোবট যুদ্ধ নিয়ে জমে উঠেছিল ব্যতিক্রমী উৎসবের আসর।

উৎসব শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। প্রথম দিনেই কারিগরি সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিল্প খাতের প্রয়োগ। এরপর শুক্রবার ছিল মূল প্রতিযোগিতার দিন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় রোবো ফুটবল, লাইন অনুসরণকারী রোবট এবং ট্যাকাথন প্রতিযোগিতা।

রোবো ফুটবলে অংশ নিয়েছিল দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ২৬টি দল। প্রতিটি খেলা ছিল ৫ মিনিটের, যেখানে একটি রোবট খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি গোলের জন্য ৩ পয়েন্ট, আর ফাউল বা রোবট বন্ধ হয়ে গেলে কেটে নেওয়া হতো ১ পয়েন্ট। ধাপে ধাপে এগিয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় দুটি দল।

অন্যদিকে লাইন অনুসরণকারী রোবট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩৭টি দল। প্রতিটি রোবটিক গাড়িকে সাদা-কালোর মিশেলে আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করতে হতো দ্রুততম সময়ে। প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে ওঠে ২০টি দল, যেখানে সেরা তিনটি দলকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

ট্যাকাথন প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের কম্পিউটার ল্যাবে। এখানে চূড়ান্ত পর্বে থাকা ১৮টি দলকে দেওয়া হয় বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান তৈরির ওপর ভিত্তি করে তাদের মধ্য থেকে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে।

বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ বলেন, “অনেক হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা অন্যরকম। আগে শুধু সফটওয়্যারে সমাধান করতে হতো, এবার হার্ডওয়্যারও যুক্ত হওয়ায় কাজটি আরও চ্যালেঞ্জিং ছিল।”

রোবো ফুটবলে অংশ নেওয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈমা বলেন, আজকের প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে খুবই ভালো লাগছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। বইয়ে যা পড়তাম, এবার সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ পেলাম। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”

উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ শনিবার রয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনী, সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকশা তৈরি এবং দাবা প্রতিযোগিতা। এরপর সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান ও চুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।

আয়োজকেরা জানান, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৭০০ প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন এবারের উৎসবে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকেও অতিথিরা যোগ দিয়েছেন।

চুয়েটের ম্যাকাট্রনিক্স ও শিল্প প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রসঞ্জীত দাশ বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো এবং তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিতেই এই আয়োজন। এই প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে রোবোটিকস ও প্রযুক্তিচর্চায়।”

উৎসবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য রয়েছে মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা সমমূল্যের পুরস্কার। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।

রোবোটিকসের এমন মহাযজ্ঞে শিক্ষার্থীরা যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরেছেন, তেমনি তৈরি করেছেন নতুন স্বপ্নের ভিত্তি। নতুন প্রযুক্তির পথে তারা এগিয়ে যাবে আরও দৃঢ়ভাবে—এ প্রত্যাশাই এখন সবার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব পালনে পূজা পরিষদের মতবনিময় সভা

আগামী ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী।

উৎসবকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে শহরের চাষাঢ়াস্থ শ্রী শ্রী গোপাল জিউর বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সভাপতি  বিষ্ণুপদ সাহা'র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সংকর কুমার দে এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।

এখানে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে থাকতে চায় কিন্তু গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা সরকার মুসলমানদের আলেম সমাজের উপর নির্মম জুলুম অত্যাচার চালিয়েছিলেন। তারা দেশের মানুষের মধ্যে একটা ধর্মীয় বিরোধ তৈরি করেছিলো।  

তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা সকল ধর্মের মানুষের সুখ দুঃখের পাশে থাকবো। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে যাতে কোনো ধর্মীয় সহিংসতা না ঘটে। আমরাও সেই নির্দেশনা মোতাবেক আপনাদের পাশে ছিলাম এবং এখনো আছি। হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল ধর্মের মানুষ আমরা মিলেমিশে থাকবো। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে কেউ প্রথম শ্রেণীর নাগরিক কিংবা কেউ দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক প্রথা চালু নেই। আমাদের দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার। সকল ধর্মের, সকল পেশার এবং সকল বয়সের নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। তাই নিজেকে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবার সুযোগ নাই। আমরা সবাই মিলেমিশে এদেশে বসবাস করবো।

বিশেষ বক্তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পৃথিবীর সকল ধর্মই শান্তির কথা বলে। সত্য ও ন্যায়নীতির কথা বলে।

আমাদের ইসলাম ধর্মে আমাদের রাসূল আছেন, নবী আছেন, পীর আউলিয়া আছেন। আমরা যাদের আদর্শ মনে কর জীবন যাপন করি, তেমনিভাবে আপনারাদের ধর্মেও  ঠাকুর দেবতা রয়েছে তাদের আদর্শে আপনারা পরিচালিত হন।

সবখানেই আপনি শান্তির বাণী পাবেন। তাই আমরা সকল ধর্মের মানুষ এদেশে সুন্দরভাবে বসবাস করবো। আপনারা যেখানেই ডাকবেন আমরা মহানগর বিএনপি সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।

তিনি বলেন, আসন্ন জন্মাষ্টমীর উৎসব উপলক্ষে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদেরকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা সকল ভয়-ভীতির উর্ধ্বে উঠে জাঁক জমকপূর্ণভাবে জন্মাষ্টমী আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কোথাও কোন বাঁধার সম্মুখীন হলে আমাদেরকে জানাবেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, আমরা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ শান্তিতে একসাথে বসবাস করতে চাই, কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চাই না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা রাখি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করা হবে।

এবার নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে প্রাণবন্তভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলে যেন এই উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সকলকে জন্মাষ্টমীর আগাম শুভেচ্ছা ও নিমন্ত্রণ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চারুকলায় বর্ষা উৎসব ঘিরে প্রাণের মেলা
  • ৫২ বছর আগের ‘রংবাজ’-এর মতো চমকে দিল ‘উৎসব’
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত শহরে ভূগর্ভস্থ কবিতা উৎসব
  • এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ
  • রাখিবন্ধন: ভেদাভেদ ভুলে মানবতার উৎসব
  • জমজমাট ওটিটি, নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা-সিরিজ দেখেছেন কি
  • আনন্দধারার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও অভিষেক অনুষ্ঠান
  • শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব পালনে পূজা পরিষদের মতবনিময় সভা
  • টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আলী’
  • জাপানি সিনেমায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গল্প