যুবদল ও ছাত্রদলের ১০ নেতা-কর্মীকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নিল পুলিশ
Published: 11th, May 2025 GMT
গাজীপুরে ছাত্রদল ও যুবদলের ১০ নেতা-কর্মীকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে নগরের পোড়াবাড়ীর মাস্টারবাড়ি এলাকা থেকে রোববার দুপুরে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ও সদর উপজেলার ভাওয়াল গাজীপুর গ্রামের বোরহান উদ্দিন (২৮), মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য ও দক্ষিণ সালনা এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৪০), মহানগর যুবদলের সদস্য বাওরাইদ এলাকার মকবুল হোসেন (৪৩), ভোলা সদরের ইলিসা গ্রামের মো.
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর নগরের পোড়াবাড়ীর মাস্টারবাড়ি এলাকার সৃজনী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অফিস। ওই সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক সোহেল রানার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আটককৃতরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার জানানোয় তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে যৌথবাহিনী ও গাজীপুর সদর থানায় অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে পোড়াবাড়ী র্যাব ক্যাম্পের আশেপাশের এলাকায় থেকে ১০ জনকে আটক করে। পরে তাদের সদর থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গাজীপুর মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ওই এনজিও এর মালিকের কাছে ঢাকার বিএনপির এক নেতার আত্মীয় টাকা পাবেন। কিন্তু এনজিও মালিক টাকা দিতে টালবাহানা করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রোববার পোড়াবাড়ী এলাকায় একটি অফিসে সমঝোতার বৈঠক চলছিল। ওই এনজিও মালিক সেনাবাহিনীকে কল করে তাদের ধরিয়ে দিয়েছেন। তাদের কাছে কেউ চাঁদা দাবি করতে যায়নি।’
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মো. রোহানুজ্জামান বলেন, ‘একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তারা কেউ চাঁদাবাজি করতে যাননি। এনজিও প্রতিষ্ঠানে টাকা পাওনার বিষয় নিয়ে সমঝোতা করতে গিয়েছিলেন।’
গাজীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কায়সার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। সোমবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বদল ছ ত রদল আটক ছ ত রদল য বদল র এল ক র এনজ ও
এছাড়াও পড়ুন:
মব সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠা ৮০ শতাংশ মানুষের
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ মানুষ, যাঁদের ৫৬ শতাংশ পুরুষ আর ৬৬ শতাংশ নারী। পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে উৎকণ্ঠিত ৬৭ শতাংশ মানুষ। তাদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ আর ৭১ শতাংশ নারী।
এমন চিত্র উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, গত ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহুরে।
উত্তরদাতাদের মধ্যে উচ্চমধ্যবিত্ত ও বিত্তবানেরা ছিলেন না, মতামত দিয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। জরিপে রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে টেলিফোনে প্রশ্ন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর আগে অক্টোবরের তথ্যের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জরিপে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৫ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা, ৯ শতাংশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ১৮ শতাংশ মানুষ নির্বাচিত সরকার না থাকার কথা বলেছেন। গত বছরের অক্টোবরের জরিপে ৫০ শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। আর ১০ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা আর ৭ শতাংশ আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছিলেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতির প্রয়োজনের কথা বলেছেন ১৬ শতাংশ। ১১ শতাংশ মানুষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসা চাঙা করা, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ১০ শতাংশ বেকারত্ব কমানো এবং ১৭ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি দমনের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছেন ১৯ শতাংশ করে মানুষ।
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৫ শতাংশ মানুষের মত হলো, দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। গত বছরের অক্টোবরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৩ শতাংশ বলেছিলেন, অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে।
জরিপ অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন চান ৫১ শতাংশ মানুষ। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচন চান ১৭ শতাংশ। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়া ভালো বলে মনে করেন ১৪ শতাংশ মানুষ। আর সংস্কার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত যেসব প্রচেষ্টা, সেগুলোকে আপনি ১০০-তে কত নম্বর দেবেন—এই প্রশ্নে সরকারকে ৬৩ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা। গত অক্টোবরের জরিপে ছিল ৬৮।
কাকে ভোট দেবেন, সিদ্ধান্তহীন ৪৮.৫০% মানুষআগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন—এই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৩৮ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আট মাস পরে বিআইজিডির জরিপে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বলছেন, কাকে ভোট দেবেন, তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। কাকে ভোট দেবেন, বলতে চান না ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ভোট দেবেন না বলেছেন ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
একই প্রশ্নের উত্তরে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অক্টোবরে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
অক্টোবরের জরিপে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটি এখন কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে।
এবার জরিপে নতুন প্রশ্ন ছিল, আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে। জবাবে ৩৮ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত ও ১ শতাংশ এনসিপির কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ শতাংশ মানুষ।
জাতীয় নির্বাচন কখন চান—এমন একটি প্রশ্নও ছিল জরিপে। জবাবে ৩২ শতাংশ মানুষ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চেয়েছেন। ডিসেম্বর (২০২৬) অথবা পরে নির্বাচনের কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ।
৭০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
‘মব সহিংসতা বন্ধে দরকার আইনের শাসন’জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
প্যানেল আলোচনায় মির্জা এম হাসান বলেন, মব সহিংসতা বন্ধে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন-পরবর্তী সরকার আইনের শাসন মেনে চললে এটা কমবে। নির্বাচন হয়ে গেলে সংস্কার নিয়ে আর কোনো কথা হবে না বলে মানুষ মনে করেন। এ জন্যই তাঁরা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা হাসান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিইনি বা বলতে চাই না—এখানে আওয়ামী লীগও লুকিয়ে আছে। ভোটের চিত্র মোটামুটি আগের মতোই আছে।’
রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান আসিফ মোহাম্মদ শাহান। তিনি বলেন, মানুষ হয়তো মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দল কেউই তাঁদের উদ্বেগগুলো নিয়ে চিন্তিত নয়। হয়তো এ কারণেই ভোটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীন মানুষের সংখ্যা বেশি।