ভারতের রোহিঙ্গাদের পুশইন পরিকল্পিত: বিজিবি মহাপরিচালক
Published: 12th, May 2025 GMT
সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে ভারতের পুশইনের ঘটনা সুপরিকল্পিত এবং ন্যক্কারজনক মন্তব্য করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘‘ভারত সেই দেশের শরণার্থী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পুশইন করছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’’
সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে বিজিবির মহাপরিচালক এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘‘গত ৭ ও ৮ মে দুই দিনে আমরা ২০২ জনকে পেয়েছি। তাদের বিএসএফ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় পুশইন করেছে। এমন জায়গায় করেছে যেখানে জনগণ নেই, জনবসতি নেই সে সব জায়গায়। আপনারা জানেন যে সীমান্তের প্রতিটি স্পট ফিজিক্যালি অকুপাই করে রাখা যায় না। যে জায়গায় কেউ ছিল না, সেখানেই পুশইন করেছে।’’
আরো পড়ুন:
ভাসানচর থেকে পালানো ৩৫ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে আটক
আটক ৪ রোহিঙ্গা জেলেকে ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি
তাদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে যাদের বাংলাদেশি পেয়েছি, তারা গত দুই তিন বছর থেকে অতীতে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে নানা কাজে ভারতে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকের সন্তানদি আছে, তারা কিন্তু ভারতের আধার কার্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস পেয়েছে। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ সেগুলো রেখে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘যাদের বাংলাদেশি পাওয়া গেছে তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে। তারা আমাদের রোহিঙ্গা ক্যাস্পের রেজিস্টার্ড ছিল তারা কোনোভাবে পালিয়ে গেছে। তাদের আমরা ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছি।’’
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘এর মধ্যে একটি অ্যালার্মিং বিষয় হলো, কিছু রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে যারা ভারতের ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন) এর শরণার্থী, তারা সেখানে রেজিস্ট্রেশন করা। তাদের আইডি কার্ডও আমাদের কাছে আছে।’’ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সামনে ইউএনএইচসিআর-এর পরিচয়পত্রগুলো তুলে ধরেন।
আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা এই জিনিসটি সবাইকে জানাতে চাই যে এই জিনিসটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের শরণার্থী সেখানেই তাদের রাখার দরকার ছিল। আমরা এমন পাঁচ জন শরণার্থী পেয়েছি।’’
বিএসএফ বরাবরের মতো এ অভিযোগ স্বীকার করছে না জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘‘তারা (বিএসএফ) বলছেন এ বিষয়ে তারা জানেন না। হয়ত তারা নিজেই চলে গিয়েছিল ভারতে, হয়ত তারা নিজেরাই প্রত্যাবর্তন করছে এ ধরনের বলার চেষ্টা করছে। এটা আমরা মানছি না। আমরা পতাকা সভা করে প্রতিবাদ লিপি দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছি। তারা যদি বাংলাদেশি হয় সেটা আমরা গ্রহণ করবো। তবে সেটা ফরমাল প্রসেসের মাধ্যমে। এভাবে লুকোচুরির মাধ্যমে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি খাগড়াছড়ির দিকে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনের মতো শরণার্থী ওপারে আছে। যাদের বিএসএফ পুশইন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের টহল বাড়ানোয় ও সজাগ দৃষ্টি থাকার কারণে গত দুই দিন ধরে তারা চেষ্টা করছে, পারছে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এদিকে স্থল দিয়ে না পেরে তারা সুন্দরবনে দুর্গম মান্দারবাড়িয়া একটি চর আছে, সেখানে ভারতের কোনো একটি জাহাজে করে ৭৮ জন ফেলে গেছে। কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে তাদের নিজ এলাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি, একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
ভারত যে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সেটা কোন সীমান্ত দিয়ে- জানতে চাইলে বিজিবি ডিজি বলেন, ‘‘মূলত খাগড়াছড়ি, বানছগি, জামিনি পাড়া, খেদাছড়ার এলাকে দিয়ে আর কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারির চর অঞ্চল, সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া দিয়ে। যে সব এলাকায় জনবসতি নেই বা টহল যেতে সময় লাগে সেসব এলাকা টার্গেট করে চেষ্টা করছে। এটা সুপরিকল্পিত এবং ন্যক্কারজনক।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শরণ র থ ব এসএফ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনী সীমান্ত দিয়ে আবারও চারজনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
ফেনীর সদর উপজেলার জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে আবারও চার বাংলাদেশিকে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে একই পরিবারের এই চারজনকে ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দল হেফাজতে নেয়। পরে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঠেলে পাঠানো চারজন হলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব মাইজভান্ডার গ্রামের মোহাম্মদ তহিদুল আলম, তাঁর স্ত্রী হাজেরা খাতুন, ছেলে মো. শোয়েব ও মেয়ে মোছাম্মৎ শবনম।
বিজিবির কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে জেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তহিদুল আলম জানান, ১৯৭৯ সালে স্ত্রীকে নিয়ে কাজের খোঁজে ভারতে যান তিনি। সেখানে তাঁদের ছেলে ও মেয়ের জন্ম হয় এবং দীর্ঘদিন তাঁরা সেখানেই বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ তাঁদের আটক করে মুম্বাই থেকে আগরতলায় পাঠায়। পরে ত্রিপুরা সীমান্ত হয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
কুমিল্লা ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, চার বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফের ঠেলে পাঠানোর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান, বিজিবির মাধ্যমে হস্তান্তর করা চারজনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের চট্টগ্রামের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলছে।
বিএসএফের মাধ্যমে ফেনী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর ঘটনা বেড়েছে। গত ২ মাসে ৪ দফায় ৬৫ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ।
সর্বশেষ ২৬ জুন একই পরিবারের চারজনকে ধর্মপুর জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে, এর আগে ১৯ জুন ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ১১ জন, ৩০ মে ১৩ জন এবং ২২ মে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ৯ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ৬ ঘণ্টা আগে