সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ইসলামপন্থী নেতা শারার সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প, সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় আগ্রহ
Published: 14th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বুধবার সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে আকস্মিক এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র জানায়, সিরিয়ার ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে তারা আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
রিয়াদে আজ যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ট্রাম্প এ তথ্য জানান। সম্মেলনের আগে ট্রাম্প শারার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে করমর্দন করেন তাঁরা। এই ছবি সৌদির রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচার করা হয়।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানান, শারাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বানও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু অংশ আল-কায়েদার সঙ্গে শারার অতীত সংযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও রিয়াদে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন; যা যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও ওই সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। দেশটির বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্মেলনে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু অংশ আল–কায়েদার সঙ্গে শারার অতীত সংযোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও রিয়াদে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন; যা যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন।ইসরায়েল শারার প্রশাসন নিয়ে এখনো গভীরভাবে সন্দিহান থাকলেও সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ওই ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা শারাকে এখনো একজন ‘জিহাদি’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন; যদিও ২০১৬ সালে তিনি আল–কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। সিরিয়াকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরায়েল সরকার তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
আরও পড়ুনএক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫আরও পড়ুনসিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প১৩ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত শারার জন্য একটি বড় সাফল্য। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির নিয়ন্ত্রণভার নেন তিনি। তবে গত মার্চে বাশারপন্থীদের আকস্মিত হামলা ও পাল্টা ইসলামপন্থীদের আক্রমণে শত শত লোক নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।
আহমেদ আল–শারা আগে আল-কায়েদার সিরিয়া শাখার নেতা ছিলেন। ইরাকে থাকতে তিনি এই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। পরে পাঁচ বছর সেখানকার মার্কিন কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথার দাম হিসেবে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা তুলে নেয়।
আরও পড়ুনসম্পর্ক উন্নয়নে সৌদি আরব সফরে গেলেন আল–শারা ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনসিরিয়া বাকি বিশ্বের জন্য হুমকি নয়: বিদ্রোহী নেতা শারা১৯ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র য় র ওপর থ ক আল ক য় দ র স ইসর য় ল আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
সার্কভুক্ত ‘দেশি’ ফুটবলার আশীর্বাদ নাকি শঙ্কা
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ফুটবলারদের ‘দেশি’ খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ দেওয়াকে কেউ স্বাগত জানাচ্ছেন, কেউ আবার এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
আবাহনী লিমিটেডের কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের দেশি খেলোয়াড়দের সামনে থাকা উচিত।’ অন্যদিকে সাবেক জাতীয় ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুর প্রশ্ন, ‘দেশি খেলোয়াড়দের সুযোগ না দিলে জাতীয় দল কীভাবে গড়ে উঠবে?’
নতুন মৌসুমের জন্য খেলোয়াড় নিবন্ধন শেষ হয়েছে গতকাল। শেষ খবর, চারটি ক্লাব সার্কভুক্ত দেশের মোট আট ফুটবলারকে বাফুফের কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ এফসি নিয়েছে নেপালের গোলরক্ষক ও অধিনায়ক কিরণ কুমার লিম্বু, ফরোয়ার্ড আয়ুশ ঘালান এবং ভুটানের মিডফিল্ডার ওয়াংচুক শেরিংকে। ফর্টিস এফসিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ও গোলরক্ষক সুজান পেরেরা এবং নেপালের ডিফেন্ডার অনন্ত তামাং। রহমতগঞ্জে নেপালের ডিফেন্ডার অভিষেক লিম্বু। আরামবাগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী ও মিঠুন সামান্তাকে, তাঁদের একজন গোলকিপার একজন ডিফেন্ডার।
কোনোভাবেই সার্কের খেলোয়াড়কে দেশি কোটায় আনা ঠিক হয়নি। দেশিদের সুযোগ না দিলে খেলোয়াড় উঠে আসবে কীভাবে? জাতীয় দলই–বা কীভাবে তৈরি হবে? এগুলো ভাবতে হবে।আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, সাবেক ফুটবলারক্লাবগুলোর সার্কের ফুটবলারের দিক ঝোঁকার বড় কারণ অর্থনৈতিক সুবিধা। স্থানীয় শীর্ষ খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন যেখানে পাঁচ–ছয় লাখ টাকা বা তারও বেশি, সেখানে নেপাল বা ভুটানের জাতীয় দলের খেলোয়াড় পাওয়া যাচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ বা তারও কম টাকায়। অর্থনৈতিক ব্যাপারটা যে বড় কারণ, তা স্বীকার করে নিলেন রহমতগঞ্জের সভাপতি টিপু সুলতান, ‘নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা ভুটানের ফুটবলারদের মান বাংলাদেশিদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। কিন্তু ওদের পাওয়া যাচ্ছে কম টাকায়। ক্লাব এই সুযোগটা নেবেই।’
নতুন নিয়মে প্রতিটি ক্লাব সার্কভুক্ত দেশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড় নিবন্ধন করাতে পারবে এবং তাঁদের সবাইকে এক ম্যাচে খেলানো যাবে। সার্কের বাইরের দেশ থেকে পাঁচজন বিদেশি নেওয়া যাবে, তবে মাঠে একসঙ্গে সর্বোচ্চ তিনজন খেলতে পারবেন। অর্থাৎ, এ মৌসুমে কোনো ক্লাব চাইলে একাদশে সর্বোচ্চ আটজন বিদেশি খেলাতে পারবে। কোনো দল যদি এ সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে, সেই দলের একাদশে দেশি খেলোয়াড় থাকবেন মাত্র তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজন আবার অনূর্ধ্ব–১৯ হতে হবে।
সার্ক দেশগুলোর খেলোয়াড় এলে আমাদের লিগের মান বাড়তে পারে। তবে সার্কের এক বা দুজন ঠিক আছে, পাঁচজন খেললে দেশের খেলোয়াড়দের সুযোগ কমবে, এটা ঠিক।ছাইদ হাছান কানন, বাফুফের সদস্য ও সাবেক ফুটবলারদেশের ফুটবল–বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এত বিদেশি খেলানো জাতীয় দলের জন্য ক্ষতিকর। মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘সার্কভুক্ত খেলোয়াড়দের দেশি কোটায় আনা উচিত নয়। এতে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ কমে যাবে। নতুন নিয়মটা কোনোভাবেই সমর্থন করি না।’ তাঁর প্রস্তাব, সার্কভুক্ত একজন, সার্কের বাইরে তিনজনসহ মোট চারজন বিদেশি খেলানো যেতে পারে।
আটজন বিদেশি খেললে বাকি তিনজন হবে স্থানীয় এবং তারা মানসম্মত হবে। যারা সুযোগ পাবে না, তারা নিজেদের যোগ্যতা বাড়াবে। দুই-তিন মৌসুমের মধ্যে দেশে মানসম্মত খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।মারুফুল হক, কোচ, আবাহনী লিমিটেডবাংলাদেশের ফুটবলে এর আগে পাঁচজন বিদেশি এক ম্যাচে খেলতে পেরেছেন। কিন্তু এবার নজিরবিহীনভাবে তা আটে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে। যদিও কোনো ক্লাবই পাঁচজন সার্কভুক্ত খেলোয়াড় নেয়নি। বড় দলগুলো একজনও নেয়নি। তারপরও অভিজ্ঞ কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুও নিয়মটা সমর্থন করছেন না, ‘সার্কভুক্ত খেলোয়াড়দের দেশি কোটায় খেলানোর সিদ্ধান্তটা আরও চিন্তাভাবনা করে নেওয়া উচিত ছিল। বলা হচ্ছে, আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য সার্কের অন্য দেশগুলোর দুয়ারও খুলবে। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়েরা কোথাও তো ডাক পায়নি। পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না। এর ফলে আমাদের ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুও নিয়মটা মানতে পারছে না। তাঁর কথায়, ‘এমনিতে বিদেশিরা বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে আমাদের ফুটবলে। তার ওপর এখন কোনোভাবেই সার্কের খেলোয়াড়কে দেশি কোটায় আনা ঠিক হয়নি। দেশিদের সুযোগ না দিলে খেলোয়াড় উঠে আসবে কীভাবে? জাতীয় দলই–বা কীভাবে তৈরি হবে? এগুলো ভাবতে হবে।’
সার্কভুক্ত খেলোয়াড়দের দেশি কোটায় আনা উচিত নয়। এতে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ কমে যাবে। নতুন নিয়মটা কোনোভাবেই সমর্থন করি না।আলফাজ আহমেদ, কোচ, মোহামেডানতবে এর ইতিবাচক দিকও দেখছেন আবাহনী লিমিটেডের কোচ মারুফুল হক। তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টা নেতিবাচক হিসেবে দেখছি না। আটজন বিদেশি খেললে বাকি তিনজন হবে স্থানীয় এবং তারা মানসম্মত হবে। যারা সুযোগ পাবে না, তারা নিজেদের যোগ্যতা বাড়াবে। দুই–তিন মৌসুমের মধ্যে দেশে মানসম্মত খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।’ মারুফুলের সংযোজন, ‘এই চ্যালেঞ্জ দেশি খেলোয়াড়দের সামনে থাকা উচিত। পাশাপাশি আমাদের খেলোয়াড়দের সার্কের অন্যান্য দেশে খেলতে পারার জন্য সব দেশের মধ্যে সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন।’
বাফুফের সদস্য ও সাবেক ফুটবলার সাইদ হাছান কানন মনে করেন, সার্কভুক্ত মানসম্মত খেলোয়াড় এলে সমস্যার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘সার্ক দেশগুলোর খেলোয়াড় এলে আমাদের লিগের মান বাড়তে পারে। তবে সার্কের এক বা দুজন ঠিক আছে, পাঁচজন খেললে দেশের খেলোয়াড়দের সুযোগ কমবে, এটা ঠিক।’ কী কারণে বাফুফে এ নিয়ম করেছে? বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরীর ভাষ্য, ‘মূল লক্ষ্য হলো সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে খেলোয়াড় আদান-প্রদান ও প্রতিযোগিতা বাড়ানো। আমাদের পর ভারতও এই নিয়ম করেছে। তবে ভালো ফল না এলে নিয়মটা বদলের সুযোগও আছে।’
বিষয়টি এখনো পরীক্ষামূলক, ১৯ সেপ্টেম্বর প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ালে সার্কভুক্ত ফুটবলারদের ‘দেশি’ হিসেবে পারফরম্যান্স বিচার করা যাবে। তখনই নিয়মটির কার্যকারিতা ও প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠবে।