ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্যাল বিভাগকে রাজধানীর মিরপুরে স্থানান্তর করার কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।

তিনি বলেন, “ঢাকায় ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মুহূর্তে উদ্ধার সহায়তার জন্য কুইক রেসপন্স করতে ৬০ সদস্যের স্পেশাল ফোর্স গড়া হয়েছে।”

ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটা করে স্পেশাল টিম গঠন করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)-এর সদস্যদের নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল, সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জসীম উদ্দীনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার ও মিডিয়া সেলের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো.

শাহজাহান শিকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, “ভূমিকম্প হলে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি।কিন্তু উদ্ধারকারী অপারেশনাল টিমকে তো আক্রান্ত হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে উদ্ধার কাজ করবে কে? তাই আমাদের কমান্ডিং ফোর্সকে আলাদা করা হচ্ছে। ডাইরেক্টর ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্টকে আমরা পূর্বাচলে নিচ্ছি। সেখানে থেকে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি।”

তিনি বলেন, “সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ফাইটারদের নিয়ে ৬০ জনের একটা স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে পূর্বাচলে রেখেছি। বড় ভূমিকম্পেও আশা করি সেখানে কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের স্পেশাল টিমটা রেডি থাকবে মূলত বড় ধরনের আগুন, ভূমিকম্প দুর্যোগে। তখন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। তখন যেন এই টিমটা দ্রুত রেসপন্স করতে পারে। এরই মধ্যে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।”

এছাড়া প্রতি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটা করে স্পেশাল টিম গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি চট্টগ্রামে ভূমিকম্প হয়, তাহলে ওই টিম যেন দ্রুত মুভ ও রেসপন্স করতে পারে। সঙ্গে ঢাকার ৬০ জনের স্পেশাল টিমকে পাঠানো যাবে। যদিও এসব পর্যাপ্ত না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগলে।”

তিনি বলেন, “ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের যে জনসংখ্যা সে-তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের জনবল, ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা পর্যাপ্ত না। ঢাকা শহরে যদি ভূমিকম্প হয়, দুর্যোগ তৈরি হয় তাহলে কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে যদি কাজ করতে চাই তাহলে জনবল ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ ভূমিকম্প হলে আমরা তো নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।”

তিনি ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভবনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “এই ভবনও কিন্তু ভূমিকম্প থেকে ঝুঁকিমুক্ত না। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি। কারণ আমরা ও পরিবার তো ঢাকাতেই থাকি।তাই সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বিশেষ করে ভূমিকম্পে মতো দুর্ঘটনায় সম্মিলিত প্রয়াসের বিকল্প নেই।”

প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ফায়ার সেফটি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা অগ্নি ও দুর্যোগের ব্যাপারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস ডিজি বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে ফায়ার সেফটি সচেতনতার বিষয়টি এ বছর সংযুক্ত করা যায়নি। তবে আমরা আশা করবো আগামী বছরে পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত হবে। আমরা প্রস্তাবনাসহ বিস্তারিত সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।”

মহাপরিচালক বলেন, “ঢাকায় ১৮-২০টা স্টেশন আছে। ঢাকায় যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে এর মধ্যে ৮-১০টা স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাকি স্টেশনগুলো তখন স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সহায়তা করবে। ঢাকায় যদি ভূমিকম্প হয় তা যে সারা দেশে একই মাত্রায় হবে এমন মনে করি না।”

তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিস একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। অগ্নি, ভূমিকম্প দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় মানবপ্রাণ রক্ষাসহ সম্পদ উদ্ধারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমেই ফায়ার সার্ভিস সেবা দিয়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের একজন ফায়ার ফাইটার থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পর্যন্ত সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে।তবে চেষ্টার কোনো কমতি নেই।গণমাধ্যম ফায়ার সার্ভিসের কাজগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরে, প্রচার করে বলেই ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কে মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে।”

মিয়ানমারে ভূমিকম্প পরবর্তীতে উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের সবাই ভূয়সী প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার জন্য। আমরা এক মাসব্যাপী ঢাকার ৩৫টি স্থানে অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিনিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বড় আগুন আমরা ফেস করছি। সেখানে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের ভূমিকা, সাধারণ মানুষের ভূমিকা কি হবে সেটা প্রদর্শন করা হয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের ফেসবুক পেজে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক পোস্ট করছি, ভিডিও প্রচার করছি, যাতে করে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।”

“ফায়ার সার্ভিসের কাজ করতে গিয়ে ভুল হতে পারে, সেটা আমরা সংশোধন করব, কিন্তু আমরা সজ্ঞানে কোনো দুর্নীতি বা নিয়োগ বাণিজ্যে জড়াব না। আগুন বা দুর্যোগে মানুষ পালায় সেখানে আমাদের ফাইটাররা ঝুঁকি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।”

ফায়ার সার্ভিসের ভালে কাজগুলো প্রচার করে পাশে থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, “অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়া দানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ঢাকা শহরে প্রায়দিনই আমরা আগুনের মুখোমুখি হই। যেকোনো বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের অংশগ্রহণ করে। তবে শুধু তাদের ভরসায় না থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।ফায়ার সেফটি সচেতনতার বিষয়টি শিখনপাঠনের জন্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ফায়ার সেফটি পাঠ। তাহলে ছোটবেলা থেকেই সচেতনতা বাড়বে। নাগরিকরা প্রত্যেকে হয়ে উঠতে পারে ফাইটার।”

পাশাপাশি অগ্নি ও ভূমিকম্প দুর্যোগে নিরাপত্তা, সেফটি পরিকল্পনা ও সচেতনতায় সাংবাদিকদের নিয়ে সচেতেনতামূলক কার্যক্রম ও কার্যকরি কর্মশালা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

ঢাকা/আসাদ/মাকসুদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম লক ফ ইট র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কৃষকদলের কমিটি গঠন

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে,মো. জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও মো. সোহেল রহমানকে সদস্য সচিব করে বুধবার (১৪ মে) ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর কৃষক দলের সভাপতি এনামুল হক স্বপন খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মাহামুদ ফয়সাল। 

কমিটির অন্যরা হলেন, সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক মো. ফজলুল হক কন্ট্রাক্টর, যুগ্ন আহ্বায়ক মো. সজিব কাজী, মো. জুয়েল হোসেন বাবু, মো. রাতুল, শেখ মোহাম্মদ শিপু, গোলজার হোসেন, আলমগীর হোসেন, সাব্বির আহমেদ ইসমাইল সরকার, মো. শাহজাহান হোসেন, আকাশ কাজী, মীর মোহাম্মদ আবু সাঈদ, কামাল হোসেন, ইমতিয়াজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, সোহরাব হোসেন, সোহেল মিয়া, আলা উদ্দিন, আসাদ, নূরে আলম, সবুজ আহমেদ সবুর, আফজাল খান, মো. জাকির, জয়নাল, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ, সদস্য হলেন, সবুজ আহমেদ, পরাগ কাজী, মো. আমির, আনিসুর রহমান মানিক, আব্দুল মান্নান, নাজমুল, সিদ্দিকুর রহমান, তারেক, মো. রানা, তোফাজ্জল হোসেন, নূরে আলম সিদ্দিকী, সবুজ আহমেদ, ইউনুস আলি, মিঠু বেপারী, মোতালেব, বেলাল, মো. রনি, আবুল খায়ের, মহিউদ্দিন বাদল, রাসেল, আলী মাহমুদ,আল আমিন শেখ, জাবেদ বেপারী, হাবিব মণ্ডল, জাকির, মো. রাজু, মহিউদ্দিন বেপারী ও তাজুল ইসলাম।  

নবগঠিত কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সদস্য সচিব সোহেল রহমান নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে কৃষকদলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক নিয়ম মেনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো।

প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে কৃষকদলের নেতাকর্মীরা। তারা বিএনপির মূলদলের পাশাপাশি সকল অঙ্গসংগঠনের সর্বাত্বক সহযোগীতা কামনা করেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ