রাজশাহী-সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আম পৌঁছাবে ডাক বিভাগ
Published: 15th, May 2025 GMT
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও সাতক্ষীরার বিখ্যাত আম এবার ঢাকাবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছাবে সরাসরি চাষিদের হাত থেকে। ডাক বিভাগের বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক এবং পরিবহন ও সেবা কাঠামো ব্যবহার করে কওমি তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এ কর্মকাণ্ড শুরু হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ কেজি আম ঢাকার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে আমরা সংস্কারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই সংস্কার কার্যক্রমের একটি অংশ হচ্ছে সাপ্লাই চেইনগুলোকে সচল করা। ডাক বিভাগের বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কিভাবে উপকৃত হতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি। যেহেতু ডাক বিভাগ অত্যন্ত প্রাচীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা রয়েছে তাই আমরা মনে করি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ডাক বিভাগের বিদ্যমান সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারবে। অন্যথায় তাদের জন্য সাপ্লাই চেইন তৈরি করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর এ কাজটি কঠিন হবে।”
এই কার্যক্রমের নেতৃত্বে রয়েছেন কওমি উদ্যোক্তারা-যারা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষিত তরুণদের জন্য তৈরি করা একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেছেন। ইসলামি আদর্শ ও নৈতিকতার আলোকে গড়ে ওঠা এই কমিউনিটির লক্ষ্য হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জন, প্রযুক্তি ও দক্ষতা শেখানো, এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও বরকতময় ব্যবসায়িক মানসিকতা গড়ে তোলা।
বর্তমানে তাদের কমিউনিটিতে যুক্ত আছেন ৮০০০০+ কওমি তরুণ উদ্যোক্তা, যারা ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন বিজনেস, ই-কমার্স, কৃষি ও উৎপাদন খাতে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এই প্রকল্পের পরিবহন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ডাক বিভাগের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে সংগৃহীত আম প্রতিদিন ঢাকার প্রতিটি প্রান্তে গ্রাহকদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে, যা ভোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এই প্রকল্প শুধু একটি মৌসুমি কার্যক্রম নয়, বরং এটি একটি টেকসই কৃষিপণ্য বিপণন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। যা আগামীতে অন্যান্য ফল, কৃষিপণ্য ও আঞ্চলিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।
এই উদ্যোগের আওতায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ কেজি আম ঢাকায় পরিবহন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ডাক বিভাগের বিশ্বস্ত লজিস্টিক নেটওয়ার্ক এর ওপর আস্থা রেখে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সুলভে পরিবহন সুবিধা পাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও চাষিরা; ভোক্তামূল্য পর্যায়ে যার সুফল সরাসরি গ্রাহকরাও উপভোগ করবেন।
এই উদ্যোগের সেবা গ্রহণ করতে যেকোনো নাগরিক কওমি উদ্যোক্তা নামক ফেসবুক গ্রুপ বা এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত বিক্রেতাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে অর্ডার করতে পারবেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্যের মৃত্যুতে মর্মাহত ঢাবি প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় মর্মাহত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাবি প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান।
বুধবার (১৪ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার ১৩ মে রাতে বাংলা একাডেমির বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত।
আরো পড়ুন:
বিক্ষোভের মুখে মেজাজ হারালেন ঢাবি ভিসি, ‘মার বেটা আমাকে, মার’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাবি ছাত্রদল নেতা খুন, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
বিজ্ঞপ্তির বর্ণনায় বলা হয়, ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য জোর তাগিদ দেন। ঘটনার চার ঘণ্টার মধ্যেই তিন জনকে আটকব করা হয়েছে এবং বাকিদের আটক করতে অভিযান চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে বলা হয়, শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আইনি ও অপরাপর প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য। তিনি এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় সাম্যকে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে তার সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাম্যের সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র, শিক্ষকসহ ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন মেডিকেল প্রাঙ্গণে।
সাম্যর মৃত্যুর খবরে ফুঁসে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের ক্যাম্পাস। তারা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন।
সাম্যর ওপর হামলার সময় সঙ্গে ছিলেন তার সহপাঠী বায়েজিদ। তার কাছে হামলার মুহূর্তের বর্ণনা পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেলে কথা হলে রাইজিংবিডি ডটকমকে বায়েজিদ বলেন, “রাত ১২টার দিকে আমরা তিন বন্ধু মিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালী মন্দির-সংলগ্ন গেটের পাশে ক্যান্টিনে আড্ডা শেষে বের হয়ে আসছিলাম। এ সময় ৮-১০ জনের একটি দল আমাদের ওপর হামলা করে।”
“তাদের ছুরির আঘাতে সাম্যর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। মেডিকেলে আনা হলে সে মারা যায়।”
ঢাকা/সৌরভ/ইভা