রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও সাতক্ষীরার বিখ্যাত আম এবার ঢাকাবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছাবে সরাসরি চাষিদের হাত থেকে। ডাক বিভাগের বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক এবং পরিবহন ও সেবা কাঠামো ব্যবহার করে কওমি তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এ কর্মকাণ্ড শুরু হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ কেজি আম ঢাকার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে আমরা সংস্কারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই সংস্কার কার্যক্রমের একটি অংশ হচ্ছে সাপ্লাই চেইনগুলোকে সচল করা। ডাক বিভাগের বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কিভাবে উপকৃত হতে পারে আমরা সেই চেষ্টা করছি। যেহেতু ডাক বিভাগ অত্যন্ত প্রাচীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে  শাখা রয়েছে তাই আমরা মনে করি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ডাক বিভাগের বিদ্যমান সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারবে। অন্যথায় তাদের জন্য সাপ্লাই চেইন তৈরি করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর এ কাজটি কঠিন হবে।”

এই কার্যক্রমের নেতৃত্বে রয়েছেন কওমি উদ্যোক্তারা-যারা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষিত তরুণদের জন্য তৈরি করা একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেছেন। ইসলামি আদর্শ ও নৈতিকতার আলোকে গড়ে ওঠা এই কমিউনিটির লক্ষ্য হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জন, প্রযুক্তি ও দক্ষতা শেখানো, এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য ও বরকতময় ব্যবসায়িক মানসিকতা গড়ে তোলা।

বর্তমানে তাদের কমিউনিটিতে যুক্ত আছেন ৮০০০০+ কওমি তরুণ উদ্যোক্তা, যারা ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন বিজনেস, ই-কমার্স, কৃষি ও উৎপাদন খাতে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এই প্রকল্পের পরিবহন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ডাক বিভাগের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে সংগৃহীত আম প্রতিদিন ঢাকার প্রতিটি প্রান্তে গ্রাহকদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে, যা ভোক্তাদের জন্য নিশ্চিত করবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এই প্রকল্প শুধু একটি মৌসুমি কার্যক্রম নয়, বরং এটি একটি টেকসই কৃষিপণ্য বিপণন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। যা আগামীতে অন্যান্য ফল, কৃষিপণ্য ও আঞ্চলিক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।

এই উদ্যোগের আওতায় প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ কেজি আম ঢাকায় পরিবহন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ডাক বিভাগের বিশ্বস্ত লজিস্টিক নেটওয়ার্ক এর ওপর আস্থা রেখে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে  সুলভে পরিবহন সুবিধা পাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও চাষিরা; ভোক্তামূল্য পর্যায়ে যার সুফল সরাসরি গ্রাহকরাও উপভোগ করবেন।

এই উদ্যোগের সেবা গ্রহণ করতে যেকোনো নাগরিক কওমি উদ্যোক্তা নামক ফেসবুক গ্রুপ বা এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত বিক্রেতাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে অর্ডার করতে পারবেন।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর বহন

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।

নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।

সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসু

নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’

সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য

চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।

সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’

চাকসু ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
  • পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল