আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরা একটা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দল রাজপথে নেমে জীবন দিয়ে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদকে দূর করেছি। কিন্তু শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়েছে। এটা কেউ পছন্দ করছে না।’

আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম নগরে দলটির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মজিবুর রহমান ভূঁইয়া এ কথা বলেন। নগরের লালদীঘি মাঠে এই জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে মজিবুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের এই পরস্পর ঝগড়া, মারামারি জনগণ পছন্দ করছে না। আপনারা কে বেশি অবদান রেখেছেন, এটি নিয়ে ঝগড়া। কে এমপি (সংসদ সদস্য ) হবেন, কে মন্ত্রী হবেন; এটি নিয়েই ঝগড়া। আগে এই রাষ্ট্রটা গঠন করেন। নাগরিকদের সমস্যার সমাধান করেন। ঝগড়া বন্ধ করেন।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন,  ‘যে লোকটার ঘর নাই,  যে মা অসুস্থ, আমার যে বোন চোখে দেখতে পারছে না, আমার যে শিশু স্কুলে যেতে পারছে না, আমার যে রিকশাচালক ভাই তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না; তাঁর কাছে শেখ মুজিব কী আর জিয়াউর রহমান কী, কোনো পার্থক্য আছে? সে জিয়াউর রহমানও বোঝে না, শেখ মুজিবও বোঝে না। সে ধর্মও বোঝে না। পেটে ভাত না থাকলে ধর্ম পালন করতে ইচ্ছা করে না। সুতরাং আগে মানুষের পেটে ভাত দিতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসার কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে হবে। তারপর আপনারা ঝগড়াঝাঁটি করেন। কার কী অবদান, তা নিয়ে লড়াই করেন।’

বর্তমান সরকারের উদ্দেশে মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার দায়িত্ব ছিল আপনাদের। আপনারা সে দায়িত্ব পালন করেন নাই। আজ এই সরকার, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার মধ্যে বিভেদ হলে দেশ মহাসংকটে পড়বে।’

ভারতের প্রসঙ্গ টেনে মজিবুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পক্ষে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী ভারত সমর্থন দিয়ে রেখেছে। আমরা শুনছি তারা আমাদের ন্যায্য পানি দেবে না। আমরা শুনছি বন্যার সময় তারা আবার বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের ভাসিয়ে মারার চেষ্টা করছে। আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা কোনো বাপের কাছে আমরা বর্গা দেই নাই। এই রাষ্ট্র শেখ পরিবারের কাছে সাফ কবলা দলিল করে লিখে দেওয়া হয় নাই। আগে যেমন দেওয়া হয় নাই, ভবিষ্যতেও কোনো পরিবারের কাছে বাংলাদেশ লিখে দেওয়া হবে না। তাই ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন, অতীতের ইতিহাস ভুলে যাবেন না। যদি আপনারাও স্বৈরাচার হন, আপনারাও গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করেন, আপনারাও বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করে পাচার করেন, আবার ওয়াসিম-মুগ্ধরা নতুন করে বুক পেতে দিয়ে জেগে উঠবে। আবার লড়াই করবে। আবার রক্ত দেব।’

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আপনি রাতে পথেঘাটে চলাফেরা করবেন, আপনার মেয়ের দিকে কেউ যেন খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে না পারে; আমরা সেই বাংলাদেশ চাই। কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারবেন, আমরা সেই বাংলাদেশ চাই। কোটি কোটি গরিব মানুষ ন্যায্যমূল্যে যেন জীবন জীবিকা অর্জনের উপায় খুঁজে পায়, আমরা সেই বাংলাদেশ চাই।’

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে পৃথিবীর আধুনিকতম বন্দরের একটি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বন্দর আধুনিক করার যে উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিয়েছে, আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই।’

বন্দরে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামকে ঘিরে আরও অনেক শিল্প তৈরি করার সুযোগ আছে। বন্দরকে আধুনিক করতে হবে। এখানে শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকনেতাদের নামে চাঁদাবাজি যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, এগুলো গুঁড়িয়ে দেন। এ ধরনের সংগঠনগুলো হলো লুটপাটের সংগঠন। তারা শ্রমিকের বেনিফিট দেখে না।’

এবি পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক গোলাম ফারুখের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, নাসরিন সুলতানা, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ মাহমুদ, দলটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সম্পাদক মো.

লোকমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে এসে দলটির সমর্থকেরা জনসভায় অংশ নেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন নারী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনসভ য় আম দ র দলট র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

জনসভায় প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কী বললেন থালাপতি বিজয়

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জনসভায় পদদলিত হয়ে ৪১ জন নিহত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি বিজয়। আজ মঙ্গলবার এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে চলচ্চিত্রের ভঙ্গিমায় দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দিয়ে বক্তব্যে থালাপতি বিজয় বলেন, ‘আমার জীবনে আগে কখনো এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি।’ তিনি সমর্থকদের তাঁদের ‘অপরিসীম ভালোবাসা ও প্রত্যাশার’ জন্য ধন্যবাদ জানান। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান।

বিজয় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়, আপনি যদি আমাদের দোষ খুঁজে বের করতে মরিয়া হন, সেটা আমার সঙ্গে করুন। তাঁদের (আমার সমর্থকদের) এতে জড়াবেন না। আমি বাড়িতে বা অফিসে থাকব। আমার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিতে চান, তা-ই করুন।’

দক্ষিণের চলচ্চিত্রের এই শক্তিমান অভিনেতা বলেন, ‘আমার জীবনে আগে কখনো এতটা বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। এটি সত্যিই বেদনাদায়ক। লোকজন আমার প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসার কারণে সেখানে ভিড় করেছিলেন। আমি পুলিশ বিভাগকে নিরাপত্তার ব্যর্থতা নিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ করব। এমন একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় প্রাণহানির কারণে আমি গভীর শোকে আচ্ছন্ন।’

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মর্মান্তিক এ ঘটনায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা নয়, বরং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন থালাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত পাঁচটি জেলায় প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু প্রাণহানির ঘটনা শুধু করুরেই ঘটল কেন? মানুষ সত্য ঘটনা জানে। মানুষ সব কিছু দেখছে। যখন করুরের মানুষ নিজেরাই সত্য উন্মোচন করা শুরু করল, তখন আমি অনুভব করলাম, যেন ঈশ্বর নিজেই সত্য বলছেন।’

থালাপতির বক্তব্যে কিছুটা শোক, অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণ ছিল। তিনি বলেন, সমাবেশটি সরকার নির্ধারিত স্থানেই হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কিছুই ভুল করিনি।’

অভিনেতা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর দলকে অন্যায়ভাবে নিশানা করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা বন্ধুদেরও নামেও মামলা করা হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনসভায় প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কী বললেন থালাপতি বিজয়