বিদেশে একবার পণ্য পরীক্ষা হলে দেশে আর লাগবে না
Published: 17th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের কোনো আমদানি পণ্য বিদেশের কোনো পরীক্ষাগারে একবার পরীক্ষা করা হলে দেশে আর সেটি পরীক্ষা করা লাগবে না। এমন ধারা যুক্ত করেই নতুন আমদানি নীতি আদেশ ২০২৫-২৮ করতে যাচ্ছে সরকার।
বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ১৩ মে ঢাকায় সচিবালয়ে ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪-এর সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন বিষয়ক সভা’ শীর্ষক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালের নভেম্বরে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দেড় মাস আগে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। যদিও তা পরে তিন মাস স্থগিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এক মাস চলে গেছে। নতুন আদেশ করার সময় তা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারের চেষ্টা হচ্ছে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে যেন নতুন আমদানি নীতি কার্যকর করা যায়।
বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪–এর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। নতুন আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান নীতি বজায় থাকবে—এটাই নিয়ম। এরই মধ্যে নতুন আদেশের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান নীতি আদেশটি অবশ্য প্রণয়ন করা হয়েছিল তার আগেরটির (২০১৫-১৮) নিয়মিত মেয়াদ শেষ হওয়ার সাড়ে চার বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু বিদ্যমান আদেশটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই আমরা নতুন আমদানি নীতি আদেশ করছি। তা চূড়ান্ত করে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আরেকটা বৈঠকের দরকার পড়তে পারে। আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি ও সহজ করার কোনো বিষয় থাকছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, নতুন আদেশে দেশ নির্দিষ্ট করে কিছু থাকবে না। ব্যবসা সহজ করাসহ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিবিষয়ক বাধাগুলো দূর করা হবে।
যেসব পরিবর্তন আসছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা কমানোর কথা থাকবে নতুন নীতি আদেশে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের পাশাপাশি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এটি যুক্ত হবে নীতি আদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ একটি পরামর্শ দিয়েছে। সেটি হলো, আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত গবেষণাগারের (ল্যাবরেটরি) তালিকা এবং মনুষ্য খাদ্যের উপযুক্ততা নির্ণয়ে অভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ করুক বাংলাদেশ। দেশটির এ চাওয়া পূরণ হবে এবার।
পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল ইথাইলিন ও প্রপাইলিন। অথচ বিদ্যমান আমদানি নীতিতে এ দুটি পণ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। তা বিবেচনা করা হচ্ছে।
মদ, বিয়ার ইত্যাদির এইচএস কোডে বলা আছে ২১ দশমিক শূন্য ৩ থেকে ২২ দশমিক শূন্য ৬। বাংলাদেশ হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এসব পণ্যের এইচএস কোড ২২ দশমিক শূন্য ৮-এ অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে। তা মানা হতে পারে।
নতুন আমদানি নীতির খসড়া শিগগির উপদেষ্টা পরিষদে যাবে বলে জানতে পেরেছি। এটা নিয়ে কত কথা বলার আছে! অথচ ভালো করে কথা বলার সুযোগ তৈরি হলো না। যদি আরেকটি বৈঠক হয়ও, তাতে ‘দুই মিনিট’ কথা বলার সুযোগ দিলে তেমন কিছু বলা সম্ভব হবে না।তাসকিন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার।মিথাইল ব্রোমাইড আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ায় চাল ও মসলা রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে। এদিকে গ্যাস সিলিন্ডার আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা এইচএস কোড চায় পানামা সিএনজি করভারশন। পরিবেশবান্ধবভাবে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুরোনো ব্যাটারি আমদানির অনুমতি চায় অ্যাকুমিলেটর ব্যাটারি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি।
বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি পুরোনো কাপড় আমদানি করা হয়। এ কাপড় আমদানি বন্ধে নতুন আমদানি নীতি আদেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।
পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই এ পদ্ধতি আর চালু রাখবে না সরকার।
এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে ন্যূনতম আমদানিমূল্য বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার কথা বলা থাকবে নতুন আমদানি নীতিতে।
নিষিদ্ধ ও শর্তসাপেক্ষ পণ্য
নতুন আমদানি নীতিতে চিংড়ি, জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য, পপি বীজ ও পোস্তদানা, ঘাস, ওয়াইন লিজ ও আরগোল, ঘন চিনি, কৃত্রিম শর্ষের তেল, নিম্নমানের পণ্য অথবা পুরোনো, ব্যবহৃত, রিকন্ডিশন্ড পণ্য বা কারখানার বাতিল করা বা স্টক লটের পণ্য; রিকন্ডিশন্ড অফিস ইকুইপমেন্ট অর্থাৎ ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সামগ্রী ও পুরোনো ইলেকট্রনিকস সামগ্রী; সব ধরনের শিল্প স্লাজ ও স্লাজ দিয়ে তৈরি সারসহ যেকোনো পণ্য, সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ আমদানিনিষিদ্ধ বলে উল্লেখ থাকবে।
বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ও শিল্পজাত দ্রব্য অর্থাৎ এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডিডিটি, ডাই-এলড্রিন, এনড্রিন, হেপ্টাক্লোর, মিরেক্স, টক্সফেন, হেক্সক্লোরোবেনজিন, পলিক্লোরিনেটেড বাই-ফিনাইল; হাইড্রোলিক হর্নসহ ৭৫ ডেসিবেলের ঊর্ধ্ব মাত্রার সব হর্ন; পলি প্রোপাইলিন ও পলিথিন ব্যাগ; দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ও চেসিসবিশিষ্ট থ্রি-হুইলার যানবাহন অর্থাৎ টেম্পো, অটোরিকশা ইত্যাদি আমদানি করা যাবে না।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের সীমারেখা দেখানো হয়নি এমন মানচিত্র, চার্ট ও ভৌগোলিক গ্লোব, হরর কমিকস, অশ্লীল, নাশকতামূলক সাহিত্য পুস্তিকা, সংবাদ সাময়িকী, পোস্টার, ফটো, ফিল্ম, কাগজপত্র, অডিও-ভিডিও টেপ ইত্যাদি পণ্যও আমদানি করা যাবে না।
নতুন আমদানি নীতি অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল, সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের মাছ ধরার কারেন্ট জাল, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি, তিন বছরের বেশি পুরোনো ও ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে সব ধরনের মোটরসাইকেলসহ এলএনজি ও লিকুইফাইড প্রোপেন ও বিউটেনস ছাড়া পেট্রোলিয়াম গ্যাস ও অন্যান্য গ্যাসীয় হাইড্রো-কার্বন এবং পেট্রোলিয়াম কোক ও পেট্রোলিয়াম বিটুমিন ছাড়া পেট্রোলিয়াম তেলের রেসিডিউ আমদানি করা যাবে শর্ত সাপেক্ষে।
সিনেমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ছাড়া উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে দেশে নির্মিত চলচ্চিত্র সাফটাভুক্ত দেশগুলোয় রপ্তানির বিপরীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে।
সব ধরনের খেলনা ও বিনোদনমূলক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোন বয়সের শিশুর জন্য প্রযোজ্য, তা উল্লেখ থাকতে হবে এবং প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার ক্ষেত্রে তা ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়’ মর্মে রপ্তানিকারক দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সনদ থাকার কথা বলা থাকবে। বেসামরিক বিমান বা হেলিকপ্টারও আমদানি করা যাবে শর্ত সাপেক্ষে।
পুরোনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ‘কোনো বিষাক্ত বা বিপজ্জনক বর্জ্য পরিবহন করা হচ্ছে না’ মর্মে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র ও আমদানিকারকের ঘোষণাপত্র থাকতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন আমদানি নীতির খসড়া শিগগির উপদেষ্টা পরিষদে যাবে বলে জানতে পেরেছি। এটা নিয়ে কত কথা বলার আছে! অথচ ভালো করে কথা বলার সুযোগ তৈরি হলো না। যদি আরেকটি বৈঠক হয়ও, তাতে “দুই মিনিট’ কথা বলার সুযোগ দিলে তেমন কিছু বলা সম্ভব হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল র স য গ সব ধরন র আমদ ন র ন ক রক পর ক ষ অর থ ৎ সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে আসছে এমজির নতুন মডেলের হাইব্রিড প্লাস ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি
যুক্তরাজ্যের গাড়ির ব্র্যান্ড এমজি বাংলাদেশের বাজারে ‘এইচএস’ সিরিজের নতুন মডেলের গাড়ি আনতে চলেছে। নতুন মডেলের এই সিরিজে থাকবে প্লাগ-ইন হাইব্রিড ও হাইব্রিড প্লাস এ দুটি মডেল। প্লাগ-ইন হাইব্রিড মডেলের গাড়ি শুধু বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও চলতে পারে। আবার বিদ্যুৎ এবং জ্বালনি এই দুই মাধ্যম ব্যবহার করেও চলতে পারে। আর হাইব্রিড প্লাস মডেলের গাড়ি চলবে ব্যাটারি ও জ্বালানি দুটোই ব্যবহার করে।
দেশের বাজারে এমজি গাড়ি বাজারজাত করছে র্যানকন ব্রিটিশ মোটরস লিমিটেড। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে র্যানকন। এতে বলা হয়, এমজির এইচএস মডেলের প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়িটি এক চার্জে ১২০ কিলোমিটারের বেশি চলতে পারবে। আর এক চার্জ ও ফুল ট্যাংক জ্বালানিতে চলতে পারবে ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে জোর দিয়ে এমজি এইচএস মডলের নতুন হাইব্রিড সিরিজ তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্লাগ-ইন হাইব্রিড প্রযুক্তির গাড়ি স্বল্প দূরত্ব পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য শুধু বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই চলতে পারবে। এতে কোনো কার্বন নিঃসরণ হবে না। অন্যদিকে হাইব্রিড প্লাস মডেলে রয়েছে স্মার্ট ডুয়ালমোড পাওয়ার সিস্টেম, যা বিদ্যুৎ ও পেট্রোল ব্যবহারের সমন্বয় করবে।
র্যানকন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অটো ডিভিশন ২) মোস্তাফিজুর রশিদ বলেন, এমজির এই মডেলের গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। এই গাড়িতে থাকবে পাঁচ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা। আর তিন বছরের ফ্রি সার্ভিস। এই মডেলের প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি চালাতে মাসে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরেচ হবে। নতুন মডেলের প্লাগ–ইন হাইব্রিড ও হাইব্রিড প্লাস গাড়ির দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ির দাম পড়তে পারে ৬০ লাখ টাকার নিচে। অন্যদিকে হাইব্রিড প্লাস ধরনের গাড়ির দাম পড়বে ৫০ লাখ টাকার কম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে এমজি এইচএস একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। ‘হোয়াট কার? অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এ সেরা প্লাগ-ইন হাইব্রিড ও পারিবারিক ব্যবহারে সেরা এসইউভি এবং ‘অটোকার অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এ বেস্ট ম্যানুফ্যাকচারার স্বীকৃতি পেয়েছে ব্র্যান্ডটি। দেশজুড়ে কোম্পানির সব বিক্রয়কেন্দ্র ও অনুমোদিত পরিবেশকদের কাছ থেকে এমজি এইচএসের এ দুটি সংস্করণের গাড়ির আগাম বুকিং দেওয়া যাবে।