নগদে আবার জালিয়াতির শঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
Published: 17th, May 2025 GMT
বিগত সরকারের সময়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ৬৫০ কোটি টাকার জাল ই–মানি ইস্যু করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর জালিয়াতিতে যুক্তরা পালিয়ে যান। তবে সম্প্রতি আদালতের রায়ের পর আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। জালিয়াতির মামলার আসামিকে সিইও করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা আবার ফেরায় একই রকম জালিয়াতির পুনরাবৃত্তি বা অন্য অভিনব জালিয়াতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
আরিফ হোসেন খান বলেন, গত ৫ আগস্টের পর নগদ পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা সবাই পালিয়ে যান। দুই কোটির মতো গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান যেন সমস্যায় না পড়ে সে জন্য প্রশাসক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দু-একজন ব্যক্তির কারণে যেন প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে না পড়ে এবং সাধারণ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ এবং একটি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠন করে পরিচালনা করে আসছিল। শুধু দুষ্টু চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে দায়ভার নেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কার্যক্রমের বিপক্ষে যারা ছিলেন, তারা একটি রিট করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগ আদালতের বৈধতা পায়। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। এ মামলার শুনানির জন্য তাদের আইনজীবী বারবার সময় নিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল দু’সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালতের দেওয়া সময় শেষ হওয়ার কথা গত ৭ মে। স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী শুনানির দিন তথা ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী প্রস্তুত ছিলেন। তবে আকস্মিকভাবে গত ৭ মে একতরফা শুনানি করে ৮ সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনের ফলে আগামী ১৯ মে এ নিয়ে প্রধান বিচারপতির ফুল বেঞ্চে পুনরায় শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আরিফ হোসেন খান বলেন, গত ৭ মের স্থগিতাদেশের পর আগের সিইও তানভীর এ মিশুক ই-মেইল যোগে নতুন করে সাফায়েত আলম নামের একজনকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করেছে। বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ এ নিয়োগ দেয়নি। একজন পলাতক সিইও আরেকজন সিইও নিয়োগ দিতে পারে কিনা, তা প্রশ্নবিদ্ধ। আবার যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি নগদের ৬৫০ কোটি টাকার জাল ই–মানি ইস্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার ৪ নম্বর আসামি। এমন ব্যক্তিকে সিইও পদে নিয়োগ দেওয়া কতটুকু নৈতিক, তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। যাকে নিয়োগ করা হয়েছে তিনি পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি। যাদের দায়িত্বের সময়ে আইটি খাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে জালিয়াতি হয়েছিল তাদের আবার পদে ফেরানো হয়েছে।
তিনি জানান, নতুন সিইও দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক ও তার টিমের সবার ই-মেইল অকার্যকর করে দিয়ে এখন পুরো আইটি সিস্টেম নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে। এ পর্যায়ে যদি আবার তারা জাল ই–মানি ইস্যু করে স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাতের আশঙ্কা রয়ে যায়।
তিনি বলেন, নগদের ফরেনসিক অডিটের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কেপিএমজিকে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা শনিবার একটি অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট পেশ করেছে। এ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে। সেখানে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্তদের অনেক ধরনের অনিয়ম, জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এমএফএস পরিচালনার জন্য অনাপত্তি দিয়েছিল ডাক বিভাগকে। ডাক বিভাগ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতো। এক সময় ডাক বিভাগ উধাও হয়ে তৃতীয় পক্ষ সব পরিচালনা করতে শুরু করে। সাধারণ মানুষের প্রতি যাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। শুধু লুটপাটের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, এমএফএস চালানোর জন্য ডাক বিভাগের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকবলের যথেষ্ট অভাব আছে। দ্বিতীয়ত প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আধুনিক ফিচার দিয়ে গ্রাহক সেবা দেয়, নগদকে সেই ধরনের সেবার মাধ্যমে গড়ে উঠতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। সেই আর্থিক সংগতি এই মুহূর্তে ডাক বিভাগের নেই। এই মুহূর্তে ডাক বিভাগের হাতে মালিকানা তুলে দেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো মালিকানা নিয়ে নগদ পরিচালনার দায়ভার গ্রহণ করেনি। গ্রাহকদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছে।
আরিফ হোসেন খান বলেন, সাফায়েত আলমকে সিইও নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি এখনও কোনোদিন অফিসে যাননি। যদিও এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২৩ জনকে অপসারণ করা হয়েছে। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কেপিএমজির অডিটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ করে সহায়তা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্রিফিংয়ের পর সাফায়েত আলমের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। হোয়াটসঅ্যাপে কল করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নগদ আর ফ হ স ন খ ন ন য় গ কর র জন য র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াতের নিবন্ধন ফেরানোর আপিলের রায় ১ জুন
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১ জুন দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে আপিলকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, ইমরান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। আদালতে জামায়াত নেতাদের পক্ষে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুমসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল জামায়াতের নিবন্ধন-সংক্রান্ত আপিলের পাশাপাশি দলটির প্রতীক দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে করা একটি আবেদনও শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। তবে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে করা ওই আবেদন পরে প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছেন আপিলকারী পক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে এবং কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বাতিল করার মাধ্যমে বিচার বিভাগ রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। যারা এই মামলার শুনানি শেষে নিবন্ধন বাতিল করেছেন, তারা মূলত বাংলাদেশের উচ্চ আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এ কারণে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল ও লিভ টু আপিল ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করেন আপিল বিভাগ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত আগস্টে ওই আপিল পুনরুজ্জীবত করার লক্ষ্যে ২৮৬ দিনের বিলম্ব মার্জনা চেয়ে জামায়াতের পক্ষে দুটি লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়। একই বছরের ২২ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা মঞ্জুর করে জামায়াতের আপিল পুনরুজ্জীবিত করেন আপিল বিভাগ। ফলে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ উন্মুক্ত হয়।