সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ৬৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করা হয়েছিল। যাঁরা এই জালিয়াতি করেছিলেন, তাঁরা গত বছরের ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি আবার পদে ফিরেছেন। ফলে নতুন করে একই রকম জালিয়াতি হয় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজ শনিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, যাঁরা নগদ পরিচালনায় ছিলেন, তাঁরা গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পালিয়ে যান। তখন নগদ পরিচালনার দায়িত্ব যাঁদের ওপর ছিল, তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নগদের সঙ্গে কোটি মানুষের আর্থিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি একটি বোর্ডও গঠন করে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তারা মামলা করলে একতরফাভাবে শুনানির রায় আসে। তাতে প্রশাসকের কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ আসে।

আরিফ হোসেন খান বলেন, নগদে অর্থ তছরুপের ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তাঁদের মধ্যে একজন আসামিকে প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হয়। তাঁকে নগদের পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেয়নি, নিয়োগ দিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান নির্বাহী। তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেন। ফলে গ্রাহকেরা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন। এ জন্য দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। ১৯ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, নগদে ৬৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করা হয়েছে, যার বিপরীতে কোনো টাকা নেই। এই জালিয়াতির ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে যত ধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে, কেপিএমজি তার নিরীক্ষা করেছে। যে প্রতিষ্ঠানে কোটি মানুষের হিসাব রয়েছে এবং দিনে শত শত কোটি টাকা লেনদেন হয়, সেটি তো এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সেবাটি পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগকে লাইসেন্স দিয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, ডাক বিভাগ সেখানে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষের প্রতি যাদের কোনো দায়িত্ব নেই, এমন একটি কোম্পানি এটি পরিচালনা করছে। তারা সেখানে মানুষের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এখন আবার তারাই এটির দায়িত্ব নিয়েছে। নগদের মতো প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যে প্রযুক্তি ও আর্থিক সক্ষমতা দরকার, তা ডাক বিভাগের নেই। গ্রাহকেরা যাতে আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিয়েছিল। এখন নগদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

আরিফ হোসেন খান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) যাতে কোনোভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে এবং সাধারণ মানুষেরও যেন আর্থিক ক্ষতি না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের দায়িত্ব নিয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক স র ওপর নগদ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংক টানা ৪ দিন বন্ধ থাকবে, প্রয়োজনে টাকা তুলবেন কীভাবে

দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। এই সময়ে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। লেনদেন হবে না দেশের দুই শেয়ারবাজারেও। ছুটি শেষে আগামী রোববার সব খুলবে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১ অক্টোবর নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী উপলক্ষে ছুটি থাকবে। এরপর ৩ অক্টোবর শুক্রবার ও ৪ অক্টোবর শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সব মিলিয়ে চার দিন দেশের আর্থিক খাতের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে ৫ অক্টোবর ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হবে।

ব্যাংকগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লেনদেন চলে। আর শেয়ারবাজারে সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত একটানা লেনদেন চলে।

তবে এই সময়ে খোলা থাকবে সব ধরনের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা। অর্থাৎ গ্রাহকেরা কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে ও লেনদেন করতে পারবেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। পাশাপাশি বিকাশ, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা সার্বক্ষণিক চালু থাকবে।

কীভাবে টাকা তুলবেন

টানা চার দিন ছুটির সময়ে বন্ধ থাকবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সময় নগদ টাকার প্রয়োজন হলে কী করবেন? দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে বিকল্প উপায়ে টাকা তুলতে হবে।

এই সময়ে খোলা থাকবে এটিএম বুথ, এমএফএসের ক্যাশআউটসহ সব বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা লেনদেনের ব্যবস্থা।

কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে, চাইলে পয়েন্ট অব সেলে (পিওএস) গিয়ে লেনদেন করা যাবে। এ সময়ে সব ধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেনের ব্যবস্থা চালু থাকবে। পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু থাকবে। ফলে ব্যাংক বন্ধ থাকলেও আর্থিক লেনদেন চালু রাখতে সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, সারা দেশে ব্যাংকগুলোর এখন ১২ হাজার ৮১৪টি এটিএম বুথ ও ৭ হাজার ৬৪৩টি সিআরএম রয়েছে। পিওএস রয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৭টি। ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত ৪ কোটি ৫২ লাখ ডেবিট কার্ড ইস্যু করেছে। অবশ্য একজন গ্রাহকের একাধিক ব্যাংকের কার্ড রয়েছে।

এর বাইরে এখন ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা রয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠাতে পারেন। ফলে এই ছুটিতে টাকা পাঠানোর কাজটি বন্ধ থাকবে না।

বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো এমএফএস সেবা বেশ জনপ্রিয়। এই সেবাগুলোর সবই খোলা আছে। এসব সেবায় ব্যাংক থেকে টাকা জমা করা যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যাংক টানা ৪ দিন বন্ধ থাকবে, প্রয়োজনে টাকা তুলবেন কীভাবে