ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় একই স্থানে বিএনপির দুই গ্রুপের সভা আহ্বান করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে সকল ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় আলফাডাঙার সদর এলাকায় এই আদেশ জারি করা হয়।

জানা যায়, বিএনপির নাসির গ্রুপ ও ঝুনু গ্রুপ আলফাডাঙ্গার চৌরাস্তায় সকালে সভা আহ্বান করে। নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে দুই পক্ষের লোক জড়ো হতে শুরু করলে আলফাডাঙ্গা পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। যেকোনো সময় সংঘাতের আশঙ্কায় আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গা বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সকাল ১১টা পর্যন্ত পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১৪৪ ধ র জ র ১৪৪ ধ র আলফ ড ঙ গ আলফ ড ঙ গ

এছাড়াও পড়ুন:

১০ দেশে শান্তির পতাকা হাতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা

‘নীল হেলমেট’ পরে বিশ্বশান্তির মঞ্চে বাংলাদেশের পথচলা শুরু ১৯৮৮ সালে। তখন জাতিসংঘের ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ১০ দেশে শান্তির পতাকা হাতে নিয়োজিত আছেন ৪৪৪ নারীসহ ৫ হাজার ৮১৮ শান্তিরক্ষী।

বিশ্বশান্তি রক্ষার এ যাত্রায় ৩৫ বছরে জীবন দিয়েছেন ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। পেশাদারত্বের মাধ্যমে শান্তি রক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।

আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হবে সেসব বীরকে, যাঁরা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করছে।

শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে মিশনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সেটার সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান

ঢাকায় আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর দুজন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

সময়ের পরিক্রমায় শান্তি রক্ষার ইতিহাসে জাতিসংঘের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে দেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যরা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, তিন দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এ দীর্ঘযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হবে সেসব বীরকে, যাঁরা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন।শান্তির বার্তা নিয়ে ১০ দেশে বাংলাদেশ

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংঘাতপূর্ণ বা গৃহযুদ্ধের শিকার, গণহত্যা বা গণনির্বাসনের ঝুঁকিতে থাকা দেশ বা অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা, পুনর্গঠন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজন, মানবিক সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে।

বর্তমানে ১০টি দেশ বা স্থানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এগুলো হলো সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল আবেই, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (সিএআর), সাইপ্রাস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো), লেবানন, দক্ষিণ সুদান, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চল পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, লিবিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর।

শান্তিরক্ষীরা মিশনগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তায় কাজ করে। অবস্থানভেদে দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতির শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখা, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে রিপোর্ট করা, সাবেক যোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়া, তাঁদের সমাজে পুনঃস্থাপন করা এবং সমাজে শান্তি ও আস্থা ফিরিয়ে আনায় কাজ করে। কখনো কখনো স্থানীয় পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তায় কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তা ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণেও অংশগ্রহণ করেন শান্তিরক্ষীরা। এসব কাজ করতে গিয়ে তাঁদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পড়তে হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, তিন দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এ দীর্ঘযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ

১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ। এ পর্যন্ত বিশ্বের ২৪টি দেশের ২৬টি মিশনে পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ জন শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৩টি দেশে ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা হয় মিশনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব দেশে আমরা কাজ করেছি, সেখাকার স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় আস্থা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সুদান, আইভরিকোস্ট, পূর্ব তিমুর, বসনিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, হাইতি, মালিসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পেরেছি। এখনো কাজ করছি।’

সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নারী

আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) এক হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭১৮ জন নারী শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ হাজার ৫১৩ জন, নৌবাহিনীর ৫৪ জন এবং বিমান বাহিনীর ১৫১ জন।

এএফডি বলছে, জাতিসংঘ ২০২৫ সালের মধ্যে শান্তি রক্ষা মিশনে ২২ শতাংশ নারী স্টাফ অফিসার ও মিলিটারি অবজারভার নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৮ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে এবং এই হার আরও বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

যেসব দেশে আমরা কাজ করেছি, সেখাকার স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় আস্থা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সুদান, আইভরিকোস্ট, পূর্ব তিমুর, বসনিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, হাইতি, মালিসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পেরেছি। এখনো কাজ করছি।পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিম

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে পুলিশের ৭১ জন নারী সদস্য বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত আছেন। এই নারীরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় দায়িত্ব পালন করছেন।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে মিশনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সেটার সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে শান্তিরক্ষী মিশন রয়েছে, সেখানকার ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে নজর দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ