ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে কয়েক সপ্তাহ ধরে তালা। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার কর্মী-সমর্থকদের চলমান অবস্থান ধর্মঘট নগর ভবনের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে ঈদুল আজহার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নাগরিক সেবায় দেখা দিয়েছে বিপর্যয়।

বর্তমানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন ডিএসসিসির প্রশাসক মো.

শাহজাহান মিয়া। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নগর ভবন খুলে দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক, সেনসেটিভ ও আইনগত। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”

তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, “ঈদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ দিন সিটি করপোরেশন বন্ধ ছিল। প্রস্তুতিতে কিছু সমস্যা হয়েছিল, তবে আমাদের দল প্রস্তুত আছে। প্রতি বছরের মতো এবারও তারা  দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সেবা দেবে।”

আরো পড়ুন:

রসিকের অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালে ৭ দিনের আল্টিমেটাম 

মশা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত হবে না সেনাবাহিনী

সীমিত পরিসরে সচল তিন বিভাগ
প্রশাসক জানান, ভাণ্ডার, পরিবহন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এই তিনটি বিভাগ এখনো সচল রাখা হয়েছে। ঈদের পশু কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় এসব বিভাগে সীমিতভাবে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি নিজে সচিবালয়ে বসে কাজ করছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে তার কাছ থেকে নির্দেশনা নিচ্ছেন।

তবে নগর ভবন বন্ধ থাকায় জন্মনিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শাহজাহান মিয়া বলেন, “ওয়ার্ড অফিসগুলো খোলা থাকায় কিছুটা সেবা পাচ্ছেন নগরবাসী, তবে সীমিত আকারে সমস্যা হচ্ছে। আমরা তা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।”

আন্দোলনের সাময়িক বিরতি
এদিকে, আন্দোলনের সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ৩ জুন তিনি বলেন, “ঈদ উপলক্ষে জনভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে নগর ভবন অবরোধে কিছুটা বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ছুটির পর সরকার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিলে আরো কঠোর আন্দোলন হবে।

২০২৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ইশরাক হোসেনের বিজয় ঘোষিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পাওয়ায় এখনো তিনি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেননি। এ নিয়ে দক্ষিণ সিটির প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা।

নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে
দায়িত্ব হস্তান্তর বা রাজনৈতিক বিরোধ নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার বিষয়। কিন্তু তার খেসারত কেন আমরা দেব? এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল।

তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত কিছু ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ঈদের আগেই পশুর হাট বসতে শুরু করায় একদিকে অস্থায়ী পরিবহন সমস্যা, অন্যদিকে রাস্তায় ময়লার স্তূপ—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।”

সোহেল আরো বলেন, “ঈদুল আজহার মতো বড় উৎসবের সময় নগর কর্তৃপক্ষের অচলাবস্থা নাগরিক জীবনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নগর পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যবিধি এবং জরুরি সেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এই অচলাবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।”

ঈদের পর সমঝোতার আশায় প্রশাসন
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা আশাবাদী, ঈদের পর কোনো সমঝোতায় পৌঁছাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। এর আগে, নগরবাসীর ঈদের আনন্দ যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য সীমিত সুযোগেও আমরা সিটি করপোরেশন কার্যক্রম সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

ডিএসসিসির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বলেন, “নগর ভবনে তালাবদ্ধ পরিস্থিতি, মেয়র পদে দায়িত্ব হস্তান্তরের জটিলতা, ঈদের আগের জরুরি প্রস্তুতি সব মিলিয়ে দক্ষিণ সিটিতে চলছে অনিশ্চয়তা। নাগরিক সেবা যেন রাজনীতির বলি না হয়, এমনটাই এখন প্রত্যাশা রাজধানীর দক্ষিণাংশের বাসিন্দাদের।”

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স নগর ভবন প রস ত ত ড এসস স ঈদ র প র জন ত বর জ য অপস র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত: জামায়াত

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়ে এই সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যেই তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।’

বিবৃতিতে শফিকুর রহমান বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা সংস্কার, (আওয়ামী লীগের) বিচার ও নির্বাচন- এ তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ