খাগড়াছড়ি ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে আরও ২৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 19th, June 2025 GMT
খাগড়াছড়ি ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে নারী–শিশুসহ ২৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যে গতকাল বুধবার মধ্যরাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ১১ জনকে এবং আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের তানাক্কাপাড়া দিয়ে ১৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। ঠেলে পাঠানো ২৪ জনকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) আটকের কথা জানিয়েছে।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তানাক্কাপাড়া দিয়ে ঠেলে দেওয়া ১৩ জনের মধ্যে ২ পুরুষ, ৬ নারী ও ৫ শিশু রয়েছে। সবাইকে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আটকের পর ‘পুশ ইন’ করে বিএসএফ। সকালে তাঁদের দেখতে পেয়ে বিজিবিকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম বলেন, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ১৩ জনকে জোর করে পুশ ইন করেছে। তাঁরা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে তানাক্কাপাড়ার একটি স্কুলে রয়েছেন। তাঁদের পরিচয় যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। তাঁরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা নড়াইলের বাসিন্দা। তারপরও পরিচয় শনাক্তের কাজ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে কয়েক দফায় খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির লোগাং সীমান্ত দিয়ে ১০৬ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ।
এদিকে ফেনীর ছাগলনাইয়ার যশপুর সীমান্ত দিয়ে গতকাল মধ্যরাতে শিশুসহ ১১ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে তিন শিশু, সাত নারী ও এক পুরুষ রয়েছেন।
বিজিবি জানায়, গতকাল মধ্যরাতে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত পিলার–২১৯১ দিয়ে ১১ জনকে পুশ ইন করে বিএসএফ। বিজিবির টহল দলের সদস্যরা রাতেই তাঁদের আটক করে হেফাজতে নিয়ে যান।
আটক ব্যক্তিরা বিজিবিকে জানান, দালালের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন সময়ে চোরাইপথে ভারতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। তাঁরা যশোর, নড়াইল ও সাতক্ষীরার বাসিন্দা।
বিজিবিকে তাঁরা আরও জানান, ভারতের মুম্বাই থেকে ৩৫০ জনকে আগরতলায় পাঠানো হয়েছে এবং পুশ ইনের উদ্দেশ্যে ত্রিপুরায় জড়ো করা হয়।
বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, ১১ বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফের ঠেলে পাঠানোর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তাঁদের ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনায় বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার বিএসএফের প্রতি মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের প্রতিবাদলিপি পাঠানোর কার্যক্রম চলমান। সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পুশ ইন প্রতিরোধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বিজিবির হস্তান্তর করা ১১ জনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাঁদের খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁদের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে পুশ ইন করেছিল বিএসএফ। এর আগে ২২ মে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ৩৭ জনকে পুশ ইন করেছিল বিএসএফ। এ নিয়ে তিন দফায় ফেনী সীমান্তে ৬১ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসএফ ১১ জনক উপজ ল ছ গলন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে টিকটক করে জেলহাজতে দুই কলেজছাত্র
নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে টিকটক ও সেলফি তোলার সময় দুই বাংলাদেশি কলেজছাত্রকে আটক করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফেরত দিলেও সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আটক দুই ছাত্র হলেন– বদলগাছী উপজেলার ধুলাপাড়া গ্রামের মোহাম্মাদ মিনহাজুল ইসলাম ও পাতকোলা গ্রামের মোহাম্মাদ তালিম আহমেদ সৌরভ। মিনহাজুল নওগাঁ ডিগ্রি কলেজের এবং সৌরভ সাপাহার সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।
জানা যায়, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিনহাজুল ও সৌরভ সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের বামনপাড়া সীমান্তের ২৪৬ নম্বর পিলার এলাকায় বেড়াতে যান। এ সময় কাঁটাতারের বেড়াঘেঁষে টিকটক ও সেলফি তুলছিলেন তারা। ভারতের অভ্যন্তরে সন্দেহভাজন প্রবেশের অভিযোগে টহলরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করেন। খবর পেয়ে বামনপাড়া বিওপির নায়েক সুবেদার তালেব ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ফেরত এনে রাত ১০টার দিকে সাপাহার থানায় হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়।
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আজিজ জানান, বিজিবির অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।