Samakal:
2025-06-21@01:33:20 GMT

পরিদের জন্য একটি দিন

Published: 20th, June 2025 GMT

পরিদের জন্য একটি দিন

ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনো এক পরির গল্প শুনে ঘুমিয়েছি। দাদি-নানির মুখে শোনা কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছি, অথবা মায়ের কণ্ঠে ঝিমিয়ে পড়েছি একজোড়া ডানাবিশিষ্ট এক অলৌকিক সত্তার গল্প শুনতে শুনতে। সেই পরিরা হেসে উঠত গোলাপি ঠোঁটে, ঝলমলে পোশাক পরে ঘুরে বেড়াত প্রজাপতির মতো ডানায়, হাতে থাকত ইচ্ছাপূরণের জাদুর কাঠি। তারা কখনও বাঁচাত রাজকন্যাকে, কখনও পথ দেখাত হারিয়ে যাওয়া পথিককে আর আমরা শিশুরা ছোট ছোট কষ্ট ভুলে হারিয়ে যেতাম সেই রূপকথার মধ্যে।
২৪ জুন, আন্তর্জাতিক পরি দিবস। এমন এক দিন, যখন আমরা ফিরে তাকাই সেই ছোটবেলার দিকে, আবারও একটু পরি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি।
পরি চরিত্রের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের নানা সংস্কৃতিতে। ইতালীয় লোককথা হোক কিংবা মধ্যযুগীয় ফরাসি সাহিত্যে চার্লস পেরোঁর ‘ফেয়ারি টেলস’–সব জায়গাতেই পরির উপস্থিতি চোখে পড়ে। পিটার প্যানের পাশে থাকা টিংকারবেল, সিন্ডারেলার পাশে থাকা গডমাদার বা শিশুর দাঁত নিয়ে যাওয়া টুথ ফেয়ারি–সব চরিত্রই পরিকে নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা কেবল সুন্দর নয়, তারা সাহায্য করে, পথ দেখায়, রক্ষা করে।
বাঙালির কল্পনায় পরি এসেছে নানা রূপে। শাড়ি পরে, টিকলি আর টিপ পরে; যে মুখটিপে হাসে। সবচেয়ে সুন্দর রূপ– সেই পরি দেখতে মায়ের মতো।
পরির গল্প শুনে একটি শিশু মনে করে– সেও পরি। সে উড়তে পারে, শুধু ডানাগুলো এখন অদৃশ্য। মায়ের কোলে লাফিয়ে এসে পড়া এক উড়ন্ত পরি; সে কখনও ধবধবে সাদা ডানাওয়ালা, আবার কখনও নিজের মতো সাদামাটা, শ্যামলা ও ঢ্যাঙা। যাদের ডানা আছে, কিন্তু কেউ দেখে না।
আবার ছোটবেলায় গল্পখেকো মেয়েটি যে বইয়ের মলাটে প্রথম পরি দেখেছিল, সে এখন বড় হয়ে নিজেকেই পরি ভাবে। সে জানে, পরি মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, তার থাকে ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা। পরি মানে স্বাধীনতা। নিজে উড়তে পারা। কাউকে ঠেস না দিয়ে নিজেই হাল ধরতে পারা।
আমরা অনেক সময় বলি, ‘ডানাকাটা পরি’। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক নির্মম বাস্তবতা। আমাদের সমাজে বহু মেয়েকে আমরা সেই ডানাকাটা পরিতে পরিণত করি; যাদের স্বপ্নগুলো আমরা নিঃশব্দে ছেঁটে দিই। তারা পড়তে চায়, সাজতে চায়, উড়তে চায়– কিন্তু বলা হয়, এত স্বাধীনতা তোমাদের জন্য নয়। যেন পরি হতে গেলে তাকে শুধু সুন্দর হতে হবে; ওড়ার সাহস কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার নেই। আসলে ডানাটা ওড়ার প্রতীক। সেই ওড়াকে পশ্চাৎপদ সমাজ ভয় পায়। যে নারী নিজে পথ বেছে নেন, নিজের মতো করে বাঁচেন, তাঁকে আমরা পরি না বলে ‘বিদ্রোহী’ বলি। অথচ তিনিই তো প্রকৃত পরি, যে কারও দয়ার পাত্র নন, নিজের শক্তিতে উড়তে জানেন।
আজকের দিনেও আমাদের চারপাশে অনেক পরি আছেন। যারা হয়তো পরির মতো দেখতে নন; যাদের ডানাগুলো তাদের মন আর মস্তিষ্কে লুকানো। তারা কেউ মা, কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক, কেউবা একা ঘর সামলে চাকরি করেন। তারা হয়তো রূপকথার পরির মতো ঝলমলে নন; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজের ইচ্ছাপূরণ করেন। অন্যদের ইচ্ছেও পূরণ করতে জানেন। তাদের ডানাগুলো হয়তো ধবধবে সাদা নয়; কিন্তু সেই ডানাতেই উড়ে সাহস, সহমর্মিতা, মমতা আর শক্তি।
আন্তর্জাতিক পরি দিবসে আমরা চাই পরিকে শুধু রূপকথায় নয়, জীবনের বাস্তবতায় স্বীকৃতি দিতে। আমাদের কন্যাদের শেখাতে পারি– তারা পরি হতে পারে শুধু রূপে নয়, সাহসে। আমাদের বোন, মা, প্রেমিকা বা বন্ধুরা– তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো গল্পের পরি। তারা যেন নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে উড়তে পারে, সেই স্বাধীনতা যেন আমরা দিতে শিখি।
আজ একটি ছোট উৎসব করা যেতে পারে– পরির থিমে সাজানো একটি পার্টি, ছোটদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা বা শুধু একটি বই পড়া, যেখানে একটি পরি একা লড়ে জিতেছে। এমন গল্প পড়া, যেখানে পরি শুধু সুন্দর নয়, সাহসীও।
এই বিশেষ দিবসে আমরা যেন ভুলে না যাই পরির ডানার যত্ন নিতে হয়। যাদের আমরা ভালোবাসি, যাদের আমরা সম্মান করি, যারা আমাদের পাশে থাকে তাদের ডানাগুলো আমরা যেন না ছেঁটে ফেলি। বরং তাদের ওড়ার সাহস দিই। তাদের বলি– ‘তুমি পারবে। তুমি পরি।’ এটুকুই চাওয়া প্রত্যেক নারী যেন তাঁর ভেতরের পরিকে চিনতে পারেন আর তাঁর ডানাগুলো ছড়িয়ে দিতে পারেন আকাশজুড়ে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গল প আম দ র স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

এক চিলতে রোদ্দুরে...

নাটকের আকাশে উজ্জ্বল এক তারার নাম তানিয়া বৃষ্টি। ২০১৫ সালে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন। একটানা পথচলার দশ বছর পেরিয়ে আজ তিনি এক পরিপক্ব শিল্পী। এই এক দশকে তাঁর অভিনয়ের পরিধি ছুঁয়েছে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র– নরম-কোমল প্রেমিকা, প্রতিবাদী নারী, প্রান্তিক জনপদের নারী, পরিবারের দায়িত্বশীল কন্যা কিংবা ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের গল্প বলা এক মানুষ। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি নিজেকে ভেঙে গড়েছেন, প্রতিবার যেন নতুন এক তানিয়া বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যায়।

তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়ে একটি অনাড়ম্বর সৌন্দর্য আছে, যা সহজে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর হাসি যেমন মিষ্টি, তেমনি চোখের ভাষায় খেলা করে এক অনুচ্চারিত বেদনা। অভিনয়ের ভেতরে যে আত্মনিবেদন, তা হয়তো খুব বেশি উচ্চকিত নয়, তবে গভীর। কখনও কখনও ক্যামেরার সামান্য এক দৃষ্টি বিনিময়েই বোঝা যায় দৃশ্যের ভেতরে তাঁর অনুরণন।

ঈদ মানেই উৎসব, আর সে উৎসবে তানিয়া বৃষ্টির নাটক যেন দর্শকের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। গত ঈদেও তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ‘তাসের ঘর’, ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসা অন্তহীন’, ‘পাষাণী’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ ও ‘ক্যাফেতে ভালোবাসা’– এই নাটকগুলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচার হয়েছে ইউটিউব ও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে। প্রতিটি নাটকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন। একটি নারীর মনের প্রতিটি স্তর যেন খুলে ধরেছেন তিনি অভিনয়ের পরতে পরতে।

এই জনপ্রিয়তার পথে কেবল ফুল বিছানো ছিল না। কিছু কাজ হয়তো তাঁকেও তৃপ্ত করেনি, কিছু চিত্রনাট্যে হয়তো গভীরতা ছিল না, তবু তিনি বলছেন, এখনকার দিনে গল্প বাছাইয়ে তিনি অনেক বেশি সচেতন। তাঁর কথায়, ‘গল্পের প্রতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি মনোযোগী আমি। এখন মনে হয়, নিজেকে বারবার ভাঙার মতো চরিত্রই আমাকে টানে। শুধু ক্যামেরায় মুখ দেখানোর জন্য কাজ করতে রাজি নই। এখন যেকোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্পটা ভালো হওয়া জরুরি মনে করি। কারণ দর্শক গল্পটাই আগে খোঁজেন। এরপর চরিত্রে নিজের অভিনয় করার সুযোগটা কেমন আছে তাও ভেবে দেখি।’ এই আত্মঅনুসন্ধানী মনোভাবই তাঁকে করে তুলছে আরও পরিণত, আরও আবেগপ্রবণ শিল্পী।

শুধু কাজের মাধ্যমে নয়, তানিয়া বৃষ্টি প্রায়ই থাকেন আলোচনায় ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও। প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক সবকিছুতে থাকে ভক্তদের কৌতূহল। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আপাতত ব্যক্তিগত জীবনের এসব পরিকল্পনা থেকে দূরে তিনি। বর্তমানে নিজের সব মনোযোগ অভিনয়ে, নিজেকে আরও শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলায়।

বরাবরই নাটকের ছোটপর্দা থেকে সিনেমার বড়পর্দার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পেয়ে যান আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’ ছবিতে। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেলেও নিয়মিত হননি বড়পর্দায়। ছোটপর্দাকে ঘিরে যাঁর স্বপ্ন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। 

২০১২ সালে ‘ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল’ দ্বিতীয় রানারআপের মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন তানিয়া বৃষ্টি। এরপরই রচিত হয় শুধুই তাঁর এগিয়ে চলার গল্প। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৪ জন নিহত
  • জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে কঠিন রোগের লক্ষণ
  • রকি ফ্রম তেজকুনিপাড়া
  • ব্যান্ড অ্যাবা’র গল্প নিয়ে বই
  • প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা তানিয়া বৃষ্টির
  • পেট খারাপের ঝুঁকি কমাতে বর্ষায় এড়াবেন যেসব খাবার
  • এখন পেসারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ
  • এক চিলতে রোদ্দুরে...