ছবি তুলতে গিয়ে ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যু কোন বার্তা দিয়ে গেল
Published: 21st, June 2025 GMT
ঢাকার কুড়িলে রেললাইনে একটি বাঁক আছে। ওই স্থানে দুটি লাইনে দুটি ট্রেন একসঙ্গে চলতে পারে। ওপরে আছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। একই সঙ্গে বাঁক নেওয়া ট্রেন ও কৃষ্ণচূড়ার ছবি দেখতে খুব সুন্দর। এ রকম দৃশ্য দেশে অন্যত্র দেখা যায় না। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ইশতিয়াক আহমেদ নামের একজন আলোকচিত্রী ওই স্থানে গিয়েছিলেন কৃষ্ণচূড়াসহ চলন্ত ট্রেনের ছবি তুলতে।
ছবি তোলার জন্য ইশতিয়াক আহমেদ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর খালাতো ভাইকে বলেছিলেন পেছন থেকে ট্রেন এলে যেন তাঁকে জানান। দুঃখজনক হলো, সামনে থেকে যখন ট্রেন এসেছিল, ইশতিয়াক আহমেদ তখন একাগ্রচিত্তে ছবি তুলছিলেন। সামনে থেকে আসা ট্রেনের শব্দে তিনি পেছনের ট্রেনের শব্দ শুনতে পাননি। তাঁর খালাতো ভাই চিৎকার করে ডাকলেও আগে আসা ট্রেনের শব্দের কারণে সেই ডাকও শুনতে পাননি।
এক ট্রেনের ছবি তুলতে গিয়ে আরেক ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ইশতিয়াক আহমেদ। পেছন থেকে আসা ট্রেনের এক যাত্রীর বাঁক নেওয়া স্থানের করা ভিডিওতে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখা গেছে।
ইশতিয়াক আহমেদের এই দুর্ঘটনা থেকে বিশেষত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফারদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। বন্য পশুপাখি-সাপের ছবি তোলেন যেসব আলোকচিত্রী, তাঁরা সাধারণত ছবি তোলায় বিভোর থাকেন। যেহেতু বন্য পশুপাখি নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করে, মানুষ কাছে গেলে তারা দূরে সরে যায়, তাই আলোকচিত্রীরা ছবি তোলায় বেশি মনোযোগী থাকেন।
আলোকচিত্রীরা একটি ভালো ছবির জন্য, ভালো ফ্রেমের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ছবিকে শিল্পের পর্যায়ে নিতে ব্যস্ত থাকেন। নদীতে যাঁরা পাখির ছবি তুলতে যান, তাঁদের অনেকে ছবি তোলার সময় নৌকায় থাকার কথা ভুলে যান। অনেক সময় এমন হয়, ঝাঁকে থাকা পাখির ছবি তোলার জন্য পেছাতে হয়। কখনো উড়ন্ত ছবি তোলার জন্যও পেছানোর প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যাঁরা প্রাইম টেলিলেন্স ব্যবহার করেন, তাঁদের অনেকবার পেছাতে হয়। এই পেছাতে গিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার অনেক আশঙ্কা থাকে। সবাই যে সাঁতার জানেন, বিষয়টি তেমন নয়। অনেক সময়ে নদীতে স্রোত থাকে, তখন সাঁতার জেনেও রক্ষা হবে না। এভাবে ছবি তোলায় মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।
অনেকে ছাদ থেকে পাখির ছবি তোলেন। সব ছাদে রেলিং থাকে না। পাখির ছবি তোলার আগে যত সাবধানতার কথাই ভাবা হোক না কেন, একটি ভালো ছবি কিংবা ভালো ফ্রেমের জন্য নিমগ্ন হন আলোকচিত্রীরা। তখন আর সাবধানতার কথা মনে থাকে না। রেলিং ছাড়া ছাদে পাখির ছবি তুলতে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। বিদ্যুতের তার থাকে অনেক সময়। পাখির ছবি তোলার সময় বিদ্যুতের তারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে।নদীতে নেমেও পাখির ছবি তুলতে হয়। পাখিকে ‘আই লেভেল’ করতেও অনেকে পানিতে নামেন। বিশেষত নদীর এসব ছবি তোলার সময়ে সাঁতার না জানলে একদমই নামা উচিত নয়। গত বছর একজন আলোকচিত্রী বলছিলেন, রাজশাহীতে পদ্মায় দুর্লভ স্কিমার পাখি দেখে পানিতে নেমে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন আর ছবি তুলছিলেন। বুঝতেই পারেননি নদীর অনেক মাঝবরাবর চলে এসেছেন। মাঝবরাবর চলে গেলে খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়।
নদীতে চোরাবালি থাকে। পাখির ছবি তোলার সময় কখনো কখনো চোরাবালির কথা মনেই থাকে না। অনেক আলোকচিত্রী চোরাবালি সম্পর্কে ভালো জানেন না। চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে কীভাবে ভেসে থাকতে হবে কিংবা দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়তে হবে, এটি অনেকের জানার বাইরে। এ কারণে চোরাবালির বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চোরাবালিতে ডুবে মানুষ মারা যাওয়ার অনেক ঘটনা আছে।
শীতকালে সাধারণত নৌকায় করে ছবি তোলা হয়। নদীতে অনেক ডুবোচর থাকে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা অনেক সময় ডুবোচরে প্রবল বেগে ধাক্কা খায়। তখন অনেকে নৌকা থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। অসতর্ক থাকলে পানিতে পড়ে যেতে পারেন যে কেউ।
নদীর চরে রাসেলস ভাইপারসহ অনেক বিষধর সাপ আছে। বিশেষত পদ্মার চরে বিষধর সাপ দেখা যায়। পাখির ছবি তুলতে গেলে সাপ থেকে দূরে থাকা চাই। পাখি এক স্থান থেকে উড়ে আরেকখানে গেলে আলোকচিত্রীরাও ছোটাছুটি করেন। তখন অনেকে আর সাপের কথা মাথায় রাখেন না। এ কারণে সাপে কাটার ভয় থাকে। রাসেলস ভাইপার সাপ একবার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ারও সময় থাকে না। মৃত্যুর আশঙ্কা তখন বেশি থাকে। পদ্মার চরে ছোটকান পেঁচা ও তিতির পাখির ছবি তোলার সময় আলোকচিত্রীরা অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেন না। এই ছবি তোলার সময় রাসেলস ভাইপারের বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পানিতে কিংবা বনাঞ্চলে সাপ কিংবা জোঁকের ভয় থাকে। জোঁক রক্ত শুষে নেয়। জীবন বিপন্ন করে না। কিন্তু সাপের কামড়ে জীবন বরবাদ হতে পারে। বনে অনেক পাখি আছে, যেগুলো কেবল বনেই থাকে। এসব পাখির ছবি তোলার জন্য অনেকে সব রকম ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করেন। এটি ঠিক নয়। কেবল পাখি নয়, বনের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ছবি তোলার জন্যও অনেকে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
কেউ কেউ তো আছেন, যাঁরা বাঘের ছবি তোলার জন্য বারবার সুন্দরবনে যান। আলোকচিত্রীরা বন্য পশুপাখির ছবি তোলেন, স্বল্পতম সময়ে সবচেয়ে ভালো মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দীর চেষ্টা করেন। ফলে সতকর্তার কথা অনেক সময় ভুলে যান।
অনেকে ছাদ থেকে পাখির ছবি তোলেন। সব ছাদে রেলিং থাকে না। পাখির ছবি তোলার আগে যত সাবধানতার কথাই ভাবা হোক না কেন, একটি ভালো ছবি কিংবা ভালো ফ্রেমের জন্য নিমগ্ন হন আলোকচিত্রীরা। তখন আর সাবধানতার কথা মনে থাকে না। রেলিং ছাড়া ছাদে পাখির ছবি তুলতে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। বিদ্যুতের তার থাকে অনেক সময়। পাখির ছবি তোলার সময় বিদ্যুতের তারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে।
একটি ভালো ছবির জন্য, একটি ভালো ফ্রেমের জন্য একজন আলোকচিত্রীর ত্যাগ-সাধনা থাকবে। কিছুটা পাগলামি না থাকলে কিংবা ছবি তোলার বিষয়ে আবেগ না থাকলে ভালো ছবি পাওয়া কঠিন। তাই বলে আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
আমাদের বুঝতে হবে, মনে রাখতে হবে, ছবি তুলতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করা যাবে না। ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যু আমাদের সেই বার্তা দেয়। আলোকচিত্রের জগতে ইশতিয়াক আহমেদ তুমুল সম্ভাবনাময় ছিলেন। অসাধারণ ছবি তুলতেন। তাঁর মৃত্যু জীবনের ভীষণ অপচয়। আলোকচিত্রীরা প্রকৃতির গবেষক, পর্যবেক্ষক, সংরক্ষণকারী। এসব আলোকচিত্রী প্রাণ–প্রকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বটে। আমরা তাঁদের এমন মৃত্যু দেখতে চাই না।
তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশত য় ক আহম দ ফ র ম র জন য ত ল র জন য ত ল র সময় অন ক সময় র অন ক আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫