ঢাকার কুড়িলে রেললাইনে একটি বাঁক আছে। ওই স্থানে দুটি লাইনে দুটি ট্রেন একসঙ্গে চলতে পারে। ওপরে আছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। একই সঙ্গে বাঁক নেওয়া ট্রেন ও কৃষ্ণচূড়ার ছবি দেখতে খুব সুন্দর। এ রকম দৃশ্য দেশে অন্যত্র দেখা যায় না। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ইশতিয়াক আহমেদ নামের একজন আলোকচিত্রী ওই স্থানে গিয়েছিলেন কৃষ্ণচূড়াসহ চলন্ত ট্রেনের ছবি তুলতে।

ছবি তোলার জন্য ইশতিয়াক আহমেদ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর খালাতো ভাইকে বলেছিলেন পেছন থেকে ট্রেন এলে যেন তাঁকে জানান। দুঃখজনক হলো, সামনে থেকে যখন ট্রেন এসেছিল, ইশতিয়াক আহমেদ তখন একাগ্রচিত্তে ছবি তুলছিলেন। সামনে থেকে আসা ট্রেনের শব্দে তিনি পেছনের ট্রেনের শব্দ শুনতে পাননি। তাঁর খালাতো ভাই চিৎকার করে ডাকলেও আগে আসা ট্রেনের শব্দের কারণে সেই ডাকও শুনতে পাননি।

এক ট্রেনের ছবি তুলতে গিয়ে আরেক ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ইশতিয়াক আহমেদ। পেছন থেকে আসা ট্রেনের এক যাত্রীর বাঁক নেওয়া স্থানের করা ভিডিওতে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখা গেছে।

ইশতিয়াক আহমেদের এই দুর্ঘটনা থেকে বিশেষত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফারদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। বন্য পশুপাখি-সাপের ছবি তোলেন যেসব আলোকচিত্রী, তাঁরা সাধারণত ছবি তোলায় বিভোর থাকেন। যেহেতু বন্য পশুপাখি নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করে, মানুষ কাছে গেলে তারা দূরে সরে যায়, তাই আলোকচিত্রীরা ছবি তোলায় বেশি মনোযোগী থাকেন।

আলোকচিত্রীরা একটি ভালো ছবির জন্য, ভালো ফ্রেমের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ছবিকে শিল্পের পর্যায়ে নিতে ব্যস্ত থাকেন। নদীতে যাঁরা পাখির ছবি তুলতে যান, তাঁদের অনেকে ছবি তোলার সময় নৌকায় থাকার কথা ভুলে যান। অনেক সময় এমন হয়, ঝাঁকে থাকা পাখির ছবি তোলার জন্য পেছাতে হয়। কখনো উড়ন্ত ছবি তোলার জন্যও পেছানোর প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যাঁরা প্রাইম টেলিলেন্স ব্যবহার করেন, তাঁদের অনেকবার পেছাতে হয়। এই পেছাতে গিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার অনেক আশঙ্কা থাকে। সবাই যে সাঁতার জানেন, বিষয়টি তেমন নয়। অনেক সময়ে নদীতে স্রোত থাকে, তখন সাঁতার জেনেও রক্ষা হবে না। এভাবে ছবি তোলায় মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।

অনেকে ছাদ থেকে পাখির ছবি তোলেন। সব ছাদে রেলিং থাকে না। পাখির ছবি তোলার আগে যত সাবধানতার কথাই ভাবা হোক না কেন, একটি ভালো ছবি কিংবা ভালো ফ্রেমের জন্য নিমগ্ন হন আলোকচিত্রীরা। তখন আর সাবধানতার কথা মনে থাকে না। রেলিং ছাড়া ছাদে পাখির ছবি তুলতে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। বিদ্যুতের তার থাকে অনেক সময়। পাখির ছবি তোলার সময় বিদ্যুতের তারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে।

নদীতে নেমেও পাখির ছবি তুলতে হয়। পাখিকে ‘আই লেভেল’ করতেও অনেকে পানিতে নামেন। বিশেষত নদীর এসব ছবি তোলার সময়ে সাঁতার না জানলে একদমই নামা উচিত নয়। গত বছর একজন আলোকচিত্রী বলছিলেন, রাজশাহীতে পদ্মায় দুর্লভ স্কিমার পাখি দেখে পানিতে নেমে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন আর ছবি তুলছিলেন। বুঝতেই পারেননি নদীর অনেক মাঝবরাবর চলে এসেছেন। মাঝবরাবর চলে গেলে খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়।

নদীতে চোরাবালি থাকে। পাখির ছবি তোলার সময় কখনো কখনো চোরাবালির কথা মনেই থাকে না। অনেক আলোকচিত্রী চোরাবালি সম্পর্কে ভালো জানেন না। চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে কীভাবে ভেসে থাকতে হবে কিংবা দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়তে হবে, এটি অনেকের জানার বাইরে। এ কারণে চোরাবালির বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চোরাবালিতে ডুবে মানুষ মারা যাওয়ার অনেক ঘটনা আছে।

শীতকালে সাধারণত নৌকায় করে ছবি তোলা হয়। নদীতে অনেক ডুবোচর থাকে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা অনেক সময় ডুবোচরে প্রবল বেগে ধাক্কা খায়। তখন অনেকে নৌকা থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। অসতর্ক থাকলে পানিতে পড়ে যেতে পারেন যে কেউ।

নদীর চরে রাসেলস ভাইপারসহ অনেক বিষধর সাপ আছে। বিশেষত পদ্মার চরে বিষধর সাপ দেখা যায়। পাখির ছবি তুলতে গেলে সাপ থেকে দূরে থাকা চাই। পাখি এক স্থান থেকে উড়ে আরেকখানে গেলে আলোকচিত্রীরাও ছোটাছুটি করেন। তখন অনেকে আর সাপের কথা মাথায় রাখেন না। এ কারণে সাপে কাটার ভয় থাকে। রাসেলস ভাইপার সাপ একবার কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ারও সময় থাকে না। মৃত্যুর আশঙ্কা তখন বেশি থাকে। পদ্মার চরে ছোটকান পেঁচা ও তিতির পাখির ছবি তোলার সময় আলোকচিত্রীরা অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেন না। এই ছবি তোলার সময় রাসেলস ভাইপারের বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

পানিতে কিংবা বনাঞ্চলে সাপ কিংবা জোঁকের ভয় থাকে। জোঁক রক্ত শুষে নেয়। জীবন বিপন্ন করে না। কিন্তু সাপের কামড়ে জীবন বরবাদ হতে পারে। বনে অনেক পাখি আছে, যেগুলো কেবল বনেই থাকে। এসব পাখির ছবি তোলার জন্য অনেকে সব রকম ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করেন। এটি ঠিক নয়। কেবল পাখি নয়, বনের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ছবি তোলার জন্যও অনেকে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

কেউ কেউ তো আছেন, যাঁরা বাঘের ছবি তোলার জন্য বারবার সুন্দরবনে যান। আলোকচিত্রীরা বন্য পশুপাখির ছবি তোলেন, স্বল্পতম সময়ে সবচেয়ে ভালো মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দীর চেষ্টা করেন। ফলে সতকর্তার কথা অনেক সময় ভুলে যান।

অনেকে ছাদ থেকে পাখির ছবি তোলেন। সব ছাদে রেলিং থাকে না। পাখির ছবি তোলার আগে যত সাবধানতার কথাই ভাবা হোক না কেন, একটি ভালো ছবি কিংবা ভালো ফ্রেমের জন্য নিমগ্ন হন আলোকচিত্রীরা। তখন আর সাবধানতার কথা মনে থাকে না। রেলিং ছাড়া ছাদে পাখির ছবি তুলতে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। বিদ্যুতের তার থাকে অনেক সময়। পাখির ছবি তোলার সময় বিদ্যুতের তারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে।

একটি ভালো ছবির জন্য, একটি ভালো ফ্রেমের জন্য একজন আলোকচিত্রীর ত্যাগ-সাধনা থাকবে। কিছুটা পাগলামি না থাকলে কিংবা ছবি তোলার বিষয়ে আবেগ না থাকলে ভালো ছবি পাওয়া কঠিন। তাই বলে আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

আমাদের বুঝতে হবে, মনে রাখতে হবে, ছবি তুলতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করা যাবে না। ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যু আমাদের সেই বার্তা দেয়। আলোকচিত্রের জগতে ইশতিয়াক আহমেদ তুমুল সম্ভাবনাময় ছিলেন। অসাধারণ ছবি তুলতেন। তাঁর মৃত্যু জীবনের ভীষণ অপচয়। আলোকচিত্রীরা প্রকৃতির গবেষক, পর্যবেক্ষক, সংরক্ষণকারী। এসব আলোকচিত্রী প্রাণ–প্রকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বটে। আমরা তাঁদের এমন মৃত্যু দেখতে চাই না।

তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশত য় ক আহম দ ফ র ম র জন য ত ল র জন য ত ল র সময় অন ক সময় র অন ক আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ

ইসলামে চারজন নারীকে নিখুঁত নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়: বিবি মরিয়ম, আসিয়া, খাদিজা (রা.) এবং ফাতিমা (রা.)। ফাতিমা ছিলেন নবীজির প্রিয় কন্যা। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে তিনি ছিলেন শিশু। ধীরে ধীরে তিনি একজন কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসেবে ইসলামের আদর্শ নারীর নিখুঁত উদাহরণ হয়ে আবির্ভূত হন।

নিখুঁত নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.)

ফাতিমা (রা.) ইসলামের মহান নারীদের একজন। তিনি তাঁর পিতার নবুওয়তের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং নারীদের জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল। কোরআনে নবী–পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়া যুগের মতো প্রদর্শনী করো না...আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে, হে নবীর পরিবার, সব অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক করতে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৩)

শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। শক্তিমান নারী

তিনি যখন খুব ছোট, মাত্র পাঁচ বছর বয়স, তখন নবীজি (সা.) মক্কার হিরা গুহায় প্রথম ওহি পান। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। আজকের শিশুদের মতো যারা খেলার মাঠে উৎপীড়ন বা সামাজিক চাপের মুখোমুখি হয়, তেমনই ফাতিমা (রা.) শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কষ্ট সহ্য করেছেন।

কাবায় নবীজি সিজদায় থাকা অবস্থায় একজন বিরোধী তাঁর ওপর ময়লা নিক্ষেপ করেছিল। কান্নাভেজা চোখে ফাতিমা (রা.) তাঁর পিতার শরীর পরিষ্কার করেন। নবীজি তাঁর প্রিয় কন্যাকে শান্ত করেন। (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ২০০৪, খণ্ড ১, পৃ. ২৮৯)

শৈশবের কঠিনসব অভিজ্ঞতা তাকে নবীজির জীবনে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল।

আরও পড়ুনসাহাবি আবু উবাইদা (রা.)–র উপদেশ০৬ মার্চ ২০২৪বিবাহ

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। এই বিবাহ মদিনায় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে বর্ণিত। যদিও ফাতিমা (রা.) তাঁর বোনদের মধ্যে একমাত্র, যিনি কোনো ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ করেননি। নবীজি (সা.) এই বিবাহের পক্ষে ছিলেন; কারণ, তিনি জানতেন আলী (রা.) একজন ধর্মভীরু মুসলিম এবং তিনি ফাতিমা (রা.)-এর যত্ন নেবেন।

ফাতিমা (রা.) বিবাহিত জীবনে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর স্বামীকে পরিবারের জন্য রিজিক সংগ্রহে সহায়তা করতেন। কঠোর পরিস্থিতিতেও তিনি হাসান ও হুসাইন নামে দুই পুত্রসন্তানের মা হন। তিনি একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা ছিলেন। তিনি জীবনের কষ্ট সহ্য করেছেন কোনো অভিযোগ ছাড়াই। আজকের নারীদের মধ্যে কতজন এমনটি করতে পারেন?

ফাতিমার মতো কন্যা গড়ে তোলা

আধুনিক সংস্কৃতি প্রায়ই নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ইসলাম শেখায় যে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। মুসলিম নারীরা দরিদ্রদের সাহায্য করে, স্বামীর বোঝা কমায়, সন্তানদের বিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে, পিতামাতাকে ভালোবাসে এবং তাদের ক্যারিয়ার, শখ বা আগ্রহের মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করে। তাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮

আজকের মুসলিম কন্যারা কি ফাতিমা (রা.)-এর আচরণ ও ইমানের কাছাকাছি বড় হচ্ছে? তিনি শৈশবে নিপীড়ন ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েও ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে উঠেছিলেন।

নবীজি বলেছেন: ‘পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,০৯০)

তিনি আরও বলেছেন, ‘ফাতিমা জান্নাতের নারীদের প্রধান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ৩০ জুলাই ২০২৫তাকে দেওয়া নবীজির উপদেশ

নবীজি (সা.) বিভিন্ন সময়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা প্রত্যেক আদর্শ বাবার জন্য স্মরণে রাখা কর্তব্য।

১. কষ্টসহিষ্ণু হতে বলা

আলী (রা.) বলেন, একবার নবীজির কাছে এসে ফাতিমা গৃহকর্মের কষ্টের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে তিনি হাতে জাঁতা দিয়ে শস্য পিষতে পিষতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং গৃহকর্মে সাহায্যের জন্য একজন খাদেম চান।

নবীজি তখন তাঁকে কোনো দাস না দিয়ে একটি বিশেষ আমল শিখিয়ে দেন, যা তাঁর জন্য দাসের চেয়েও উত্তম। তিনি বলেন, ‘তোমাকে কি এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম? যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। এটি তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,১১৩, ৫,৩৬১, ৬,৩১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭২৭)

২. আল্লাহভীরু হতে বলা

নবীজি তার প্রিয় কন্যাকে বলেছেন, ‘হে ফাতিমা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নির্দেশ পালন করো।’ এই উপদেশ তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রায়ই বলতেন। এমনকি তিনি বলেছেন, ‘আমি ফাতিমাকে তার প্রভুর (আল্লাহর) বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারব না যদি সে তাকওয়া (খোদাভীতি) অবলম্বন না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,০৬৩)

৩. ধৈর্য ও সন্তুষ্টির উপদেশ

ফাতিমা (রা.)-এর জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ এবং তিনি প্রায়ই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। নবীজি তাঁকে ধৈর্য ধরতে ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উপদেশ দিয়েছেন। ফাতিমা (রা.) যখন তাঁর দারিদ্র্য ও কষ্টের কথা উল্লেখ করেন, নবীজি তাঁকে বলেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তুমি জান্নাতের নারীদের সরদার হবে?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২

৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

নবীজি ফাতিমা (রা.)-কে প্রায়ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২)

তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন যে জিকির ও নামাজ মানুষের হৃদয়কে শান্তি দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি ফাতিমা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তুমি নিয়মিত নামাজ আদায় করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৩০৪)

৫. স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন

হজরত ফাতিমা ও আলী (রা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি আদর্শ। একটি বর্ণনায় এসেছে যে নবীজি তাঁদের ঘরে গিয়ে দেখতেন যে তারা একসঙ্গে গৃহকর্ম ভাগ করে নিয়েছেন। ফাতিমা ঘরের কাজ করতেন, আর আলী (রা.) বাইরের কাজে সহায়তা করতেন। নবীজি এই ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন।

তিনি ফাতিমা (রা.)-কে তাঁর স্বামী হজরত আলী (রা.)-এর প্রতি দায়িত্বশীল হতে উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সর্বোত্তম নারী সেই, যে তার স্বামীকে খুশি করে এবং তার আনুগত্য করে যখন সে তাকে ন্যায়সংগত কিছু আদেশ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,২৩১)

ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা, যিনি জীবনের কষ্ট সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছেন। তিনি ইসলামের নিখুঁত নারীদের একজন এবং আধুনিক মুসলিম নারীদের জন্য একটি আদর্শ।

আরও পড়ুনজান্নাতে নারীদের সরদার হজরত ফাতিমা (রা.)০৮ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ