ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পৌরসভায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পৌরসভার পশ্চিম ছাগলনাইয়ার সাতমন্দির রোড এলাকা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। 

ছাগলনাইয়া থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেছেন। মৃত দুই শিশুর বাবাই প্রবাসে থাকেন।

মৃতরা হল– ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পূর্ব শিলুয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী ইকবাল হোসেনের ছেলে ফয়সাল ফারাবী (৯) ও ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী সামছুল হকের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (৮)। তাদের পরিবার ছাগলনাইয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাত মন্দির রোড এলাকার শেখ ভবনে ভাড়া বাসায় থাকে। এদের মধ্যে ফারাবী স্থানীয় ইম্পেরিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এবং লিহান ছাগলনাইয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত দুই শিশু খেলার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনে যায়। সেখানে খেলার সময় অসাবধানতাবশত তারা হয়তো সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিকেলে দুই শিশু খেলার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর তারা বাসায় না ফিরলে স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে রাতে স্থানীয় এক যুবক নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাংকের মুখে এক জোড়া জুতা দেখতে পায়। পরে পানিতে ভর্তি ট্যাংকের ভেতরে আলো দিয়ে দুই শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে। দ্রুত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহযোগিতায় দুই শিশুর নিথর দেহ উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দুই শিশুর এমন মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার দুটির আহাজারিতে ভরে উঠেছে বাতাস। মর্মান্তিক এ ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। স্থানীয় লোকজন এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলছেন না। তাদের অভিযোগ, নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের অবহেলার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেফটি ট্যাংকটির ঢাকনা খোলা ছিল। এটি বন্ধ রাখলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি মো.

নজরুল ইসলাম বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুই শিশু খেলার ছলে অসাবধানতাবশত সেপটিক ট্যাংকে পড়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস

আমাদের এই পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাস শুরু হয়েছিল নবী হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আল্লাহ তায়ালা যখন ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি,’ তখনই মূলত সূচনা ঘটে মানব ইতিহাসের। ফেরেশতারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ও রক্তপাত ঘটাবে?’

আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ (সুরা বাকারা, ৩০-৩৪)

কোরআনে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন ‘শুষ্ক কাদামাটি থেকে, যা রূপান্তরিত হয়েছিল কালচে শুকনো মাটিতে।’ (সুরা হিজর, ২৬)

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে।

আল্লাহ নিজ হাতে আদম (আ.)-এর অবয়ব তৈরি করেন, তাতে প্রাণ ফুঁকে দেন এবং ফেরেশতাদের আদেশ করেন তাকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা তাকে সেজদা করলেও শয়তান অহংকারের কারণে তা অস্বীকার করে এবং চিরকালীন অভিশপ্ত হয়ে যায়। এই অহংকার-অবাধ্যতার প্রতিচ্ছবি পরবর্তীকালে মানবজীবনের পরীক্ষার অংশ হয়ে যায়। (সুরা হিজর-এর ব্যাখ্যা, তাফসিরে তাবারি)

জান্নাতে আদম (আ.) শান্তি ও আনন্দে জীবনযাপন করছিলেন। আল্লাহ তাঁর জন্য সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করলেন হাওয়া (আ.)-কে। উভয়েই জান্নাতের ফলভরা বাগানে নির্ভাবনায় ছিলেন, যতক্ষণ না শয়তান তাঁদের প্রতারণায় ফেলে দেয়। শয়তান আল্লাহর নিষেধ করা গাছের ফল খেতে প্রলুব্ধ করে। ফলে তাদের জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই নামো পৃথিবীতে, একে অপরের শত্রু হিসেবে। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে বাসস্থান ও জীবিকা কিছু সময়ের জন্য।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ২৪)

আরও পড়ুনআদম (আ.)–কে যে দোয়া শিখিয়ে দেন আল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থের ভাষ্যমতে, আদম (আ.) অবতরণ করেন পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে, বর্তমান শ্রীলঙ্কার সেরেন্দিব বা আদম ’স পিক নামক এক পাহাড়ে। ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে ইমাম তাবারি ও ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী, আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপ সেই পাহাড়ের চূড়ায় দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম, বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে হাওয়া (আ.) অবতরণ করেন আরবের জেদ্দা শহরে, যার নামের অর্থই ‘দাদি’। ইসলামি ইতিহাসবিদ ইমাম সুয়ুতি উল্লেখ করেন, বহুদিন পর তাঁদের পুনর্মিলন ঘটে মক্কার নিকটে আরাফাতের ময়দানে। সে কারণেই এ স্থানটির নাম ‘আরাফাত’, যার অর্থ ‘পরিচিত হওয়া’। (ইমাম তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম ইবনে কাসির, কাসাসুল আম্বিয়া; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)

পৃথিবীতে এসে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) মানবজীবনের প্রথম অধ্যায় রচনা করেন। আল্লাহ তাদের কৃষিকাজ, পোশাক তৈরির জ্ঞান এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের শিক্ষা দেন। ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণনা করেন, আদম (আ.) ছিলেন প্রথম নবী ও প্রথম শিক্ষক যিনি তার সন্তানদের আল্লাহর একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা দিতেন।

মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়। (সুরা মায়িদাহ, ২৭–৩১; তাফসিরে ইবনে কাসির; ইমাম নববি, শারহে মুসলিম)

আরও পড়ুনআদম-হাওয়া (আ.)-এর বিয়ে ও সন্তান১৭ নভেম্বর ২০২৪মানবজাতির প্রথম সংঘাতও ঘটে তাদের সন্তান কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে। এই ঘটনাই মানবসমাজে ন্যায়বিচার ও অনুশোচনার প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে গৃহীত হয়।

কোনো কোনো তাফসিরকার উল্লেখ করেছেন, আদম (আ.) পরবর্তীতে মক্কা অঞ্চলে চলে আসেন এবং সেখানে প্রথম ইবাদতের ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেন। ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবির মতে, এই ঘরটি পৃথিবীর প্রথম ইবাদত কেন্দ্র, যা পরে নবী ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) পুননির্মাণ করেন। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; কুরতুবি, তাফসিরে সুরা আল-বাকারা)

ইসলামি বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী যদিও পৃথিবীতে আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন সম্পর্কিত স্থানগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ভিত্তি নেই, তবু শ্রীলঙ্কার আদম’স পিক এখনো বহু মুসলমানের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। অন্যান্য ধর্মের মানুষও এ স্থানকে পবিত্রজ্ঞান করে থাকে।

জেদ্দায় হাওয়া (আ.)-এর সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত স্থানের ঐতিহ্য ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে বিদ্যমান, যদিও আধুনিক কালে তা চিহ্নিত নয়। আরাফাত ময়দান আজও হজের অন্যতম কেন্দ্র; যেখানে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে তাওবা করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে।

আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনারগাঁয়ে ভূমি অফিসে গ্রাহক হয়রানী, দেড় মাস ধরে বন্ধ নামজারী
  • জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা
  • গলা কেটে বিড়াল হত্যা, থানায় জিডি
  • হাইকোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার অপসারিত
  • হজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস
  • ডেমোক্র্যাটদের জয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—ট্রাম্পের রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধাক্কা
  • সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, পদ ১০ হাজার ২১৯, প্রথম ধাপে ৬ বিভাগে