সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, গায়েবি মামলার সংস্কৃতি দেশের পুরো ব্যবসায় পরিমণ্ডলকে একধরনের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এতে একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এটার পরিবর্তন আনার জন্য অর্থ উপদেষ্টা বাজেটে কিছুই রাখেননি।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাজেট নিয়ে সংলাপে এ কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। বাজেট নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পরশু চট্টগ্রাম থেকে একজন জানালেন, তাঁর নামে আরেকটা মামলা হয়েছে…হত্যা মামলা। ১১০ জন আসামি, উনি ৯৫ নম্বর। এভাবে গায়েবি মামলা হওয়ায় কে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, সেটি আলাদা করতে পারছি না। আমরা একটা ‘ব্ল্যাঙ্কেট সাসপিশন’র (সামগ্রিক সন্দেহ/একজনের অপরাধে সবাইকে সন্দেহ) পর্দা পুরো সমাজের ওপর ঢেলে রেখেছি। এ অবস্থায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ও ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, পুরো সরকারব্যবস্থাকেই কাজ করতে হবে বলে জানান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে হবে না।

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের রেগে যাওয়ার সময় হয়েছে। এটি অযৌক্তিক রাগ নয়। আমি এটাকে বলব পবিত্র রাগ। যে রাগের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করতে হয়। এখন ওই রেগে যাওয়ার মুহূর্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের মধ্যে একটা “পিকুলিয়ার সিনড্রোম” (উদ্ভট লক্ষণ) দেখতে পাচ্ছি। আমি বলব, একটি নতুন ধরনের কুম্ভকর্ণ “সিনড্রোম”, শোনে কিন্তু সাড়া দেয় না।’

বাজেটে বড় কোনো সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তারপরও কেন গতানুগতিক বাজেট হলো। আমি মনে করি উপদেষ্টা পরিষদের সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও ব্যতিক্রম কিছু হতো না। কারণ বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে সাহস দেখাতে হয়, সেটির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনামুল হক খান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ও বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, শুধু আকারে ছোট হয়েছে, এদিক থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি ব্যতিক্রম। বাজেটে মানুষের জন্য যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপের আলোচনা নেই। সার্বিকভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা দিতেও বাজেট ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি আগামী ছয় মাস পরে মধ্যবর্তী পর্যালোচনা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘আমরা অনেক অস্বস্তিকর সময় পার করছি। বর্তমানে আমরা দেখছি খুব সুন্দর সুন্দর মডেল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে একটা মডেল হচ্ছে, কেউ লুট করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লুটের টাকা আবার ব্যাংকে পৌঁছে দিয়ে আসে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে, আর আমরা তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি চড়া সুদহার দিয়ে। আমার থেকে আপনি (সরকার) বাড়তি টাকা নিয়ে এই চুরির টাকার ভর্তুকি দেবেন, এটা হয় না।’ তিনি বেলন, ‘এখন পর্যন্ত একটা ব্যাংকের কর্মকর্তার জেল হয়নি, একজন গ্রাহকেরও (দোষী) জেল হয়নি। কারণ, যার কাছে টাকা, যে যত বড় চোর, সে তত বড় স্বচ্ছ—এটাই আমরা প্রতিফলন দেখছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ স ন জ ল ল র রহম ন উপদ ষ ট র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব

‘‘কোনো একজন ব‌্যক্তির জন‌্য ক্রিকেট থেমে থাকতে পারে না।’’ মোহাম্মদ মিঠুন কখনো ভাবেননি ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে কখনো এমন কথা বলতে পারবেন। সঙ্গেও এ-ও যোগ করেন, ‘‘এর আগে কখনো কোয়াবের সঙ্গে বিশেষ করে বর্তমান খেলোয়াড় কখনো জড়িত ছিল না। কারণ আমরা অনুভব করতাম যারা এর আগে দায়িত্বে ছিল, তারা আমাদের জন্য কাজ করবে। এই আশায় আমরা শেষ ১৫ বছর, ২০ বছর বা ৩০ বছর তাদের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছি বা তাদের ওপর নির্ভর করে আমরা লম্বা সময় ভুগেছি।’’

জাতীয় দলে খেলা এই ক্রিকেটারের আঙুল তুলেছেন সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের ওপর। যিনি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ‌্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি ছিলেন ১৫ বছর। কোনো নির্বাচন, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতা, কোনো বিরুদ্ধ আওয়াজ ছাড়াই হট সিটে বসে অনায়েসে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও ক্রিকেটারদের অভিযোগ, ‘‘কেবল সিটটাই দখল করে রেখেছিলেন তিনি। কোনো দায়িত্বই পালন করেননি।’’

শুধু মিঠুন নয়, বাকি সব ক্রিকেটারদের একই অভিযোগ। তাদের এক দাবি, নির্বাচন। সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটাররা, সাবেক ক্রিকেটাররা, পুলের ক্রিকেটাররা এবং বিভিন্ন লিগে খেলা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগের খেলোয়াড় এক হয়েছিলেন কোয়াবের নতুন অফিসে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিরপুরেই তাদের স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে। নতুন অফিসে চূড়ান্ত হয়েছে নির্বাচনের দিনক্ষণ।

আরো পড়ুন:

‘আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, আমরা বিধ্বস্ত’

ক্রিকেটকে এখনো উপভোগ করছেন সাকিব

আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটারদের সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোয়াবের আহবায়ক সেলিম শাহেদ। এছাড়া কোয়াবের কাঠামোতে আসতে যাচ্ছে বড় পরিবর্তন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন নির্বাচনে থাকছে না সাধারণ সম্পাদক (সেক্রেটারি) পদ। নতুন করে গঠিত হতে যাওয়া কমিটিতে থাকবে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি এবং আটজন কার্যনির্বাহী সদস্য।

সেলিম শাহেদ গনমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমাদের আজকে একটা মিটিং ছিল কোয়াবের, যেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের ইলেকশন কবে হবে এবং ইলেকশনের প্রসেসটা কী হবে। আমরা সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে ইলেকশনের ডেট ফাইনাল করেছি এবং ৪ তারিখের মধ্যে আমাদের বাকি যে সমস্ত ইলেকশন রিলেটেড কাজ সেগুলো কমপ্লিট করার চেষ্টা করবো। অর্থাৎ মেম্বারশিপ, প্লাস নমিনেশন ফর্ম কেনা, নমিনেশন ফর্ম জমা দেওয়া, এই সমস্ত জিনিসপত্র আমরা কমপ্লিট করার চেষ্টা করবো এবং ৪ তারিখে, অর্থাৎ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, আমরা ইলেকশনের জন্য প্রসিড করবো।’’

তিন সদস‌্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ইলেকশন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে ইফতেখার রহমান মিঠুকে। তার সাথে দুই সদস্য হিসেবে আছেন নাসির আহমেদ নাসু  ও হাবিবুল বাশার সুমন।

কোয়াবের সদস‌্য হওয়ার জন‌্য নতুন ক্রাইটেরিয়াও ঠিক করা হয়েছে। আজীবন সদস‌্যপদ আগে ছিল না। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়রা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই পদ নিতে পারবেন। আর জাতীয় দলের বাইরের খেলোয়াড়দের গুনতে হবে ১ লাখ টাকা। ভোটাধিকার তারা পাবেন। লাগবে না কোনো বাৎসরিক ফি।

স্থায়ী সদস্যপদের ক্ষেত্রে, ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দল, প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ অথবা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছেন এমন ক্রিকেটাররা ৫ হাজার টাকা দিয়ে এই পদ নিতে পারবেন। এই ক্যাটাগরির সদস্যদের বাৎসরিক ফি দেওয়া লাগবে।

এর বাইরে রয়েছে সহযোগী সদস্যপদ। এই ক্যাটাগরির জন্য ২ হাজার টাকা ফি ও বাৎসরিক ফি ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই সদস্যরা ভোটের অধিকার পাবেন না।

ঢাকা/ইয়াসিন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোদির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো
  • মাগুরায় ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিতে সফল উদ্যোক্তা লিজা
  • ট্রুডো ও সোফি: জীবন থেমে থাকে না, হৃদয় আবার ডাকে
  • নাটকীয়তা আর রহস্যে মোড়ানো ফ্রেন সিলাকের জীবন
  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব