প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেনি। ফলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সংলাপে প্রস্তাব করেছে, কেউ জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর পদ দুইবারে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাবে বিএনপির বিরোধিতার সূত্র ধরেই নতুন এ প্রস্তাব আসে। তবে দলটি এতেও রাজি নয়।

যদিও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ,  গণসংহতি আন্দোলনসহ অধিকাংশ দল প্রস্তাবে একমত। বিএনপির এবারের অবস্থান সমর্থন করেছে এনডিএম ও ১২ দলীয় জোট। সংলাপের পর লেবার পার্টিও বিএনপির পক্ষে অবস্থানের কথা জানায়।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে দলগুলো তাদের এসব অবস্থান জানায়। দলগুলোকে নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করার সুযোগ দিতে দু’দিনের বিরতি শেষে আগামী বুধবার আবারও সংলাপ শুরু হবে।
কমিশন প্রস্তাব করেছিল, কেউ দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দলের প্রস্তাব ছিল, কেউ দুই মেয়াদের বেশি  প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
কমিশনের প্রস্তাব, কেউ একদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলেও, তা একবার গণ্য হবে। রাজনৈতিক দলগুলো মেয়াদ বোঝাচ্ছে ৫ বছর। এ বিতর্ক অবসানে গতকাল সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এর চেয়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে, একজন ব্যক্তি কত বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন? তাহলে কেউ যতবার প্রধানমন্ত্রী হোন না কেনো, নির্দিষ্ট বছরের বেশি পদে থাকতে পারবেন না।’

এ বক্তব্যের বিষয়ে কমিশন দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে বলে। এরপর জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, বাসদসহ অধিকাংশ দল প্রধানমন্ত্রীর পদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব দেয়। তবে বিএনপির প্রতিনিধি এ প্রস্তাবে রাজি হননি। সংলাপ শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, দলের সঙ্গে আলোচনা না করে এককভাবে এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। প্রধানমন্ত্রীর পদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করতে হলে, এনসিসি ও ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের আলোচনা একই প্যাকেজের করতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংলাপের পর বলেন, দীর্ঘ আলোচনায় সুস্পষ্ট জায়গায় এসেছি। তবে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। বিএনপিসহ তিনটি দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। আশা করি, সবাই এ বিষয়ে একমত হতে পারব। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা.

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি সংসদে একাধিক প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তাই জামায়াত প্রস্তাব করে, দু’বারের পরিবর্তে প্রধামন্ত্রী পদের মেয়াদ ১০ বছর করা হোক।’ সংলাপ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফলাফল সম্পর্কে বলতে চাই না। মানুষের অনেক প্রত্যাশা। ন্যূনতম ঐকমত্য জরুরি।’
বাকি অধিকাংশ দলের অভিযোগ, বিএনপির কারণেই ঐকমত্য হচ্ছে না। গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বলা হচ্ছে পরবর্তী সংসদে সংস্কার হবে। তাহলে তো ঐকমত্য কমিশনের প্রয়োজন হত না।’ এ ব্যাপারে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘ঐকমত্যের স্বার্থে অধিকাংশ দল রাজি হলেও তিনটি একমত হয়নি।’ সংলাপে সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আলোচনায় বিএনপি ও জামায়াত ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গায় ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনবর্হাল চায়। কমিশনের প্রস্তাব সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার সংবিধানে যোগ হলে আপত্তি নেই।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র প রস ত ব প রব ন ন ব এনপ র ১০ বছর দলগ ল এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

‘আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয়’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই বলে আসছে আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরেই স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে। এরপর যে কয়েক মাস সময় থাকবে, সে সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

শুক্রবার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ হলরুমে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, আবার কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।’

তিনি জানান, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। এতে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়, প্রেসিডেন্ট সেই দলের হয়ে কাজ করেন। এজন্য তারা প্রস্তাব দিয়েছেন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ সদস্য, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি ইলেকটোরাল কলেজ গঠন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হোক। এতে একজন যোগ্য, সম্মানিত, নিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী পদে দুই মেয়াদের সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি কোনো ব্যক্তি যেন টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। এ বিষয়ে বিএনপি ছাড়া প্রায় সব দল একমত হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রোববার (আগামীকাল) থেকে এ প্রস্তাব নিয়েই আবার আলোচনা শুরু হবে।’

ডা. তাহের জানান, তারা প্রস্তাব দিয়েছেন সংবিধান সংশোধন, অনাস্থা প্রস্তাব ও বাজেট ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে যদি কোনো এমপি নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। এ বিষয়েও একমত হয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক হয়েছে—এটি খুব স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টা সব দলের সঙ্গেই আলোচনা করেছেন। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনের সময় চেয়েছিলেন তারা। এখন যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তাতেও আপত্তি নেই। কারণ এটি তাদের আগের সময়সীমার মধ্যেই পড়ে।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি। তারা তাদের দলীয় অবস্থান থেকে কথা বলছে, আমরাও আমাদের দলীয় অবস্থান থেকে বলছি। সকল দলের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, আলোচনায় ঐকমত্য হয়নি
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত: জোনায়েদ সাকি
  • ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বেশ অগ্রগতি দেখছে জামায়াত
  • ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু যোগ করলে তর্ক থাকবে না: হাসনাত কাইয়ূম
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে বিএনপিসহ তিনটি দল ছাড়া সবাই একমত: আলী রীয়াজ
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে তিনটি দল ছাড়া সবাই একমত: আলী রীয়াজ
  • এভাবে চলতে থাকলে কেয়ামত পর্যন্ত ঐক্যের সম্ভাবনা নেই : নুরুল হক নুর
  • ‘আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয়’
  • গণঅধিকার পরিষদ ত্যাগ করে এনসিপিতে যোগদানের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন