প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, আলোচনায় ঐকমত্য হয়নি
Published: 22nd, June 2025 GMT
এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন—সংবিধানে এমন বিধান যুক্ত করার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দল একমত হয়েছে। তবে বিএনপিসহ তিনটি দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘ বিতর্ক হলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি। বিষয় দুটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।
গতকাল রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনে এ দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আলোচনা শুরু হয়। এক ঘণ্টার মতো মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে আলোচনা চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। ধারাবাহিক এ আলোচনায় ৩০টি দল অংশ নিচ্ছে। আজ সোমবার ও আগামীকাল আলোচনা মুলতবি থাকবে।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাবটি নিয়ে কিছু সময় আলোচনার পর তা মুলতবি করা হয়।
গতকাল সকালে এ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়। দুই পূর্ণ ‘মেয়াদ’ হবে নাকি দুই ‘বার’ হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক হয়। কেউ কেউ সংসদের দুই মেয়াদের পক্ষে, কেউ কেউ দুবারের (মেয়াদ যত দিন হোক সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারবেন) পক্ষে মত দেন।
যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এভাবে ঐকমত্যে আসা হয়তো সম্ভব হবে না। এর বদলে একজন সর্বোচ্চ কত বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
পরে ঐকমত্য কমিশন বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য সময় দিয়ে বিরতি দেয়। বিরতিতে দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে এবং অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে ভাগ ভাগ হয়ে আলোচনা করেন। বিরতি শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বৈঠকে বলেন, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
পরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, মেয়াদ বা বারের বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, এমনটা বলার ক্ষেত্রে কারও আপত্তি আছে কি না। তখন বিএনপি, এনডিএম ও বাংলাদেশ এলডিপি এ বিষয়ে দ্বিমত জানায়।
ভিন্নমত তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি পপুলার মতামত এসেছে ১০ বছর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তার কাজ কী হবে, এসব বিষয় সম্পর্কিত। এগুলো একসঙ্গে প্যাকেজ আকারে আলোচনা করা উচিত। এ রকম হলে তিনি হয়তো দলের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতে পারবেন।
একপর্যায়ে আলী রীয়াজ বলেন, তিনটি দলের পক্ষে আপত্তি করা হয়েছে। প্যাকেজ আকারে আলোচনা হলে আলোচনা ‘কলাপস’ করার আশঙ্কা আছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, এ বিষয়ে বড় ধরনের ঐকমত্য আছে। তিনটি দল ছাড়া বাকিরা একমত। এ বিষয়ে লিখিত ঐকমত্যে যাওয়া যায় কি না, তা বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাসদের নেতা মুশতাক হোসেন বলেন, ৭০ ধারার ক্ষেত্রে বিএনপি যেভাবে একটি নোট দিয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও নোট দিতে পারে। কিন্তু পরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, এনসিসি, উচ্চকক্ষ এগুলো সম্পর্কিত বিষয়। এগুলো নিয়ে দলে একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাতে চান তিনি।
এ বিষয়ে বিভিন্ন দলের নেতারা নানা যুক্তিতর্ক তুলে ধরলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ঐকমত্য হয়নি। কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে আলোচনা মুলতবি করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
আলোচনা শেষে বিকেলে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বৈঠকের অগ্রগতি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি—এ দুটো বিষয় আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনা শেষে আমরা সুস্পষ্ট এক জায়গায় এসেছি। একজন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এ রকম একটি জায়গায় আসার পর আমরা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। আলোচনার পরে তিনটি দল ভিন্নমত পোষণ করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে। তারা তাদের নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে আবার আলোচনার কথা বলেছে।’
মূলনীতি
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতির উল্লেখ আছে। সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবে মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে। তবে বিদ্যমান মূলনীতি অক্ষুণ্ন থাকবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি কমিশন।
গতকালের আলোচনায় মূলনীতি প্রশ্নে দলগুলো মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। বামপন্থী দলগুলো বিদ্যমান চার মূলনীতি অক্ষুণ্ন রেখে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার যুক্ত করার পক্ষে। বাকি দলগুলোর বেশির ভাগ বিদ্যমান চার মূলনীতি বাদ দিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিস্থাপন করার পক্ষে। আর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রস্তাব হলো মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ও যুক্ত করা হোক। তারা ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরে।
এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ আলোচনায় বলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যেভাবে মূলনীতি ঠিক করা হয়েছিল, তাঁরা তার পক্ষে। এর সঙ্গে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার যুক্ত করতে তাঁদের আপত্তি নেই।
বিদ্যমান মূলনীতির বিপক্ষে জামায়াতে ইসলামী। তারা সাম্য, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিস্থাপনের পক্ষে মত দেয়। দলের অবস্থান তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর নেতা হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, তাঁরা জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ এটিও রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ও সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করার পক্ষে।
বিদ্যমান সংবিধানকে ‘মুজিববাদী’ আখ্যা দিয়ে এনসিপির জাবেদ রাসিন বলেন, এই চার মূলনীতি রেখে আলোচনা চলতে পারে না।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সংবিধান অর্জিত হয়েছে। এই সংবিধানের চার মূলনীতি বাদ দিয়ে এখন অন্য কিছু গ্রহণ করা ঠিক হবে না। আলোচনার একপর্যায়ে বিষয়টি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, এমন মতও আসে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, যারা ক্ষমতায় যাবে তারা ঠিক করবে, এমন হলে ঐকমত্য কমিশনের কোনো প্রয়োজন থাকে না। এ ক্ষেত্রে বরং গণভোটই একটি উপায় হতে পারে।
আলোচনা শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও সেই সময়ের ঘোষণাপত্র। সেই ঘোষণায় সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল। সেটাই ছিল প্রথম সংবিধানের মূল ভিত্তি। এই মূল্যবোধ সামনে রেখে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
দুপুরের বিরতিতে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে একমত হচ্ছি আমরা। কিন্তু এখানে কিছু কিছু দল একবারে নিজেদের অবস্থানে অনড়। এভাবে চলতে থাকলে কেয়ামত পর্যন্ত কোনো ঐক্যের সম্ভাবনা দেখি না।’
আলোচনা শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, বিভিন্ন দলের অনুভূতি ও অবস্থান বিবেচনা করে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব হাজির করা হবে।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আলোচনা সঞ্চালনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ঐকমত য হয়ন র প রস ত ব র অবস থ ন গণতন ত র য ক ত কর ক ত কর র দলগ ল র দ বল ন র বল ন প রব ন কর র প ব এনপ ইসল ম আপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কী
জাতির সামনে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ব্যস্ত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত দুটি বিষয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এ দুটি বিষয় একই বা কাছাকাছি মনে হলেও আসলে তা নয়। ঘোষণাপত্র ও সনদ দুটি পুরোপুরি আলাদা বিষয়।
সহজভাবে বলা যায়, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের একটি দলিল। যার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদ হলো—রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ঐকমত্যের একটি রাজনৈতিক দলিল।
গত বছরের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর থেকেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র, তরুণেরা অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলে আসছেন। তাঁরা একাধিকবার নিজেরা এ ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সরকার বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সোচ্চার। দলটির নেতারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, এই ঘোষণাপত্র না হলে ভবিষ্যতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল’ হিসেবে দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা বা এর মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে এ অভ্যুত্থানের একটি স্বীকৃতি দরকার। এ কাজটিই জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
জুলাই ঘোষণাপত্রে কী থাকছেজুলাই ঘোষণাপত্রে কী কী থাকছে তার একটি খসড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে। খসড়ায় মোট ২৬টি দফার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।
খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে,‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪—এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’
খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
জুলাই সনদ কীগণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি করা হবে একটি সনদ। এটিই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। এই সনদেরও একটি খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
মোটাদাগে, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ। আর তৃতীয় অংশে থাকছে, সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। সেখানে বলা আছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে দলগুলো।
তবে এই অঙ্গীকারের বিষয়ে কোনো কোনো দলের আপত্তি আছে। শুধু এ ধরনের অঙ্গীকার করা হলে শেষ পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অনেকের শঙ্কা আছে। তারা চায় জুলাই জাতীয় সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক।
সংস্কার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে এখন আবার রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর চূড়ান্ত করা হবে জুলাই জাতীয় সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নেয়। সনদে এই দলগুলোর সই করার কথা রয়েছে। আগামী দিনের সংবিধান কেমন হবে, তার রূপরেখা থাকবে এই জাতীয় সনদে।