বৃন্দাবনী: যে আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বনেদিপনা
Published: 24th, June 2025 GMT
ছোট গড়নের আম। একটু গোলগাল ধরনের। যেখানে রাখা হয়, মুহূর্তেই সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাকলে খোসাটা গাঢ় হলুদাভ হয়। কাটার পর শাঁসের রংটাও মন জুড়ায়। স্বাদে টক-মিষ্টির এক সুন্দর সংমিশ্রণ। রূপে-গন্ধে-স্বাদে অন্য আমের তুলনায় একেবারেই আলাদা। নাম বৃন্দাবনী আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরশাপাতের পাশে বহু বছর ধরেই এক নীরব মর্যাদা নিয়ে আছে বৃন্দাবনী আম। তবে এ আম সহজে চোখে পড়ে না। কারণ, সবাই এই আম সম্পর্কে জানেন না। যাঁরা জানেন, বোঝেন; তাঁরা ঠিকই জোগাড় করেন। নিজেরা খান, স্বজন-বন্ধুদের পাঠান।
এই আম সম্পর্কে চমৎকার সব তথ্য দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইনজীবী আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী। আইনজীবী হয়েও বৃন্দাবনী আম নিয়ে এত জানা-বোঝার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর পারিবারিক ইতিহাস। আনন্দের বাবা রূপেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী (ভুতু উকিল নামে পরিচিত) ছিলেন আইনজীবী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আরেক আইনজীবী সবিতা রঞ্জন পালের (এস আর পাল) সঙ্গে। তাঁরা দুজনই বৃন্দাবনী আমের ভক্ত ছিলেন। আমের মৌসুমে রূপেন্দ্র বৃন্দাবনী আম কিনে পাঠাতেন এস আর পালকে। ছোটবেলা থেকে দেখে, খেয়ে এই আমের প্রতি ভালো লাগা আনন্দ শংকরের।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় এই আমের উৎপত্তি। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে এই আম খুবই জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ একসময় মালদহ জেলার অংশ ছিল।আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী, আইনজীবী ও আমপ্রেমীবাবার মৃত্যুর পর আনন্দ শংকর রায় চৌধুরী বৃন্দাবনী আম নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এর ভিত্তিতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় এই আমের উৎপত্তি। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে এই আম খুবই জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ একসময় মালদহ জেলার অংশ ছিল। আর মালদহ প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের অংশ। কলির কৃষ্ণ হিসেবে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব আন্দোলনের বেশ প্রভাব ছিল গৌড়ে। কোনো বৈষ্ণবভক্ত বৈষ্ণব আন্দোলনের সূতিকাগার বৃন্দাবনের নামানুসারে আমের নাম ‘বৃন্দাবনী’ রেখেছেন বলে জনশ্রুতি আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেড় শ থেকে দু শ বছরের পুরোনো আমবাগানের কোনো কোনোটিতে বৃন্দাবনী আমগাছ আছে। বিশেষ করে বনেদি, শৌখিন ও ধনাঢ্য আমবাগানিদের বাগানে বহুল প্রচলিত ফজলি, ক্ষীরশাপাত ও ল্যাংড়া আমের পাশাপাশি দু-চারটি বৃন্দাবনী আমের গাছ আছে। সাধারণত নিজেদের খাওয়ার জন্য, প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য তাঁরা এই জাতের গাছ লাগাতেন। একসময় জমিদার, কুলীন হিন্দু ও মুসলিম পরিবারগুলোর বিশেষ পছন্দের আম ছিল বৃন্দাবনী, এমনটাই ভাষ্য আনন্দ শংকর রায় চৌধুরীর।
সব বাগানে বৃন্দাবনী জাতের আম নেই। মাত্র কয়েকটি পুরোনো আমবাগানে এই আমের গাছ আছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ম লদহ জ ল ব ন দ বন আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনে পেলেন বেরোবির শিক্ষক মাহমুদুল হক
রংপুরে জুলাই আন্দোলন চলাকালে মুদি দোকানি ছমেস উদ্দিন হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক।
রবিবার (২২ জুন) বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) মার্জিয়া ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ (হাজীরহাট আমলী আদালত)-এর বিচারক মো. সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন। মাহমুদুল হক শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার আইনজীবীরা গত বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুনরায় আবেদন করেন।
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে চার ঘণ্টার ব্যবধানে জোড়া খুন
‘মুক্তিপণ’ না পেয়ে শিশুকে হত্যা, খালে মিলল মরদেহ
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দায়রা জজ আদালতে সেই আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত মানবিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাহমুদুল হক রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
কারামুক্তির পর রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে মাহমুদুল হকের আইনজীবী শামীম আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “মাহমুদুল হক শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। দুপুরে জামিন আবেদনের সময় আমরা তার অসুস্থতার বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরি। কারা কর্তৃপক্ষও আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করে। আদালত মানবিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। জামিনের পরপরই পরিবারের সদস্যরা তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।”
এদিকে মাহমুদুল হকের জামিনের শুনানি ঘিরে আজ সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন হাতে অবস্থান নেন এবং ‘মাহমুদুল হকের মুক্তি চাই’, ‘গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ চলবে না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা মাহমুদুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান এবং এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দেন।
কারাগার থেকে প্রিয় শিক্ষক মুক্ত হলে আনন্দে ফেটে পড়েন সবাই। এসময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, “তিনদিন পর স্যারকে ফিরে পেয়ে আমরা আনন্দিত। যেভাবে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটি আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে ছমেস উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ