ইতালিপ্রবাসীর লাশ হাসপাতালে ফেলে ‘পালালেন’ স্ত্রী
Published: 24th, June 2025 GMT
মাদারীপুরের রাজৈরে এক ইতালিপ্রবাসীর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত প্রবাসীর নাম হালিম খান (৪৫)। তিনি রাজৈর উপজেলার নগরগোয়ালদি গ্রামের বাসিন্দা। স্বজনদের অভিযোগ, ওই প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ ও নিহত হালিম খানের স্বজনেরা বলেন, চার বছর আগে হালিমের সঙ্গে রাজৈরের উত্তর দারাদিয়া গ্রামের রেশমা বেগমের বিয়ে হয়। রেশমা হালিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। হালিম বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় রেশমার বাবাকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা দেন। সম্প্রতি ইতালি থেকে ফেরার আগে নিজের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে হালিম টাকা পাঠালে তাঁর শ্যালকের নামে মোটরসাইকেল কেনা হয়। ইতালি থেকে দেশে ফিরে হালিম পাওনা টাকা ও মোটরসাইকেল ফেরত চান। এ নিয়ে হালিমের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্যালকসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কথা-কাটাকাটি হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, গতকাল সোমবার রাতে হালিমকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আজ সকালে তাঁকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করলে লাশ ফেলে তাঁরা পালিয়ে যান। খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহত হালিমের প্রথম পক্ষের মেয়ে হিমু আক্তার বলেন, ‘আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবার মাথার পেছনে ও সারা শরীরে পেটানোর চিহ্ন আছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
হালিমের ভাই আবদুর রাজ্জাক খান জানান, তাঁর ভাইয়ের ৯ বছরের উপার্জনের সব টাকা রেশমা বেগমের কাছে ছিল। অনেক শখ করে একটা মোটরসাইকেল কিনেছিলেন তাঁর ভাই। সেটাও শ্যালকের নামে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে রাতে হালিমের সঙ্গে ঝামেলা হয়। সকালে পুলিশ খবর দেন, ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রেশমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে আমি ও আমার বাবার বাড়ির কেউ মারধর করেনি। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। জানতে পারেন, স্ত্রী ও শাশুড়ি ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তখন তাঁরা লাশ রেখে পালিয়ে যান। ঘটনাটি সন্দেহজনক। পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যাঁদের টানে দেশে ফিরলেন, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার
ওমানপ্রবাসী আবদুল বাহার স্বজনদের সঙ্গে ফিরছিলেন বাড়িতে। মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানি, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের মেয়ে সবাই ছিলেন সঙ্গে। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে অনেক হাসিঠাট্টা, খুনসুটি চলছিল। কিন্তু কে জানত মুহূর্তেই এই আনন্দের পরিবেশ পরিণত হবে বিষাদে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে এসে পৌঁছায় বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমি আক্তার (১০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০) এবং লাবনীর মেয়ে লামিয়া আক্তারের (৯) মরদেহ।
ওমান থেকে দেশে ফেরা আবদুল বাহারকে আনতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেশে ফেরা আনন্দে শেষতক নেমে এল মৃত্যুর ছায়া। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর এলাকায় বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি একটি খালে পড়ে। বাহার ছাড়া পরিবারের কেউই ফিরে আসেননি।
গতকাল সকালে বাহারদের বাড়ির ছোট উঠানজুড়ে সারি সারি সাতটি লাশ এনে রাখা হয়। খবর পেয়ে সকালেই লোকজন জড়ো হয়েছেন। শেষযাত্রার কিছু আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছে। এক পাশে গোসলের জন্য টানানো হয়েছে শামিয়ানা। উঠানে পাতা হয়েছে চেয়ার। সবকিছুর মধ্যে নিদারুণ এক শোকের বার্তা।
যাঁদের জন্য প্রবাস থেকে ফেরা, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার। দুই বছরের মেয়ে মীমকে ভালো করে একটু বুকে জড়িয়ে আদরও করা হলো না। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একসঙ্গে জানাজা হয় ছয়জনের। বাহারের নানি ফয়জুন নেসার লাশ নেওয়া হয় পাশের ইউনিয়ন হাজির পাড়ায়। বাকিদের দাফন হয় জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে।
পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে দুটো কবর, সামান্য দূরেই চারটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানেই একে একে মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীমসহ নিহত স্বজনদের শুয়ে দেন বাহার।
চৌপল্লী গ্রামে মানুষের ভিড়। এত মৃত্যু একসঙ্গে আর দেখেনি কেউ। শোকে স্তব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা। গতকাল বিকেলে