মাদারীপুরের রাজৈরে এক ইতালিপ্রবাসীর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত প্রবাসীর নাম হালিম খান (৪৫)। তিনি রাজৈর উপজেলার নগরগোয়ালদি গ্রামের বাসিন্দা। স্বজনদের অভিযোগ, ওই প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ ও নিহত হালিম খানের স্বজনেরা বলেন, চার বছর আগে হালিমের সঙ্গে রাজৈরের উত্তর দারাদিয়া গ্রামের রেশমা বেগমের বিয়ে হয়। রেশমা হালিমের দ্বিতীয় স্ত্রী। হালিম বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় রেশমার বাবাকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা দেন। সম্প্রতি ইতালি থেকে ফেরার আগে নিজের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে হালিম টাকা পাঠালে তাঁর শ্যালকের নামে মোটরসাইকেল কেনা হয়। ইতালি থেকে দেশে ফিরে হালিম পাওনা টাকা ও মোটরসাইকেল ফেরত চান। এ নিয়ে হালিমের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্যালকসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কথা-কাটাকাটি হয়।

স্বজনদের অভিযোগ, গতকাল সোমবার রাতে হালিমকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আজ সকালে তাঁকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করলে লাশ ফেলে তাঁরা পালিয়ে যান। খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

নিহত হালিমের প্রথম পক্ষের মেয়ে হিমু আক্তার বলেন, ‘আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবার মাথার পেছনে ও সারা শরীরে পেটানোর চিহ্ন আছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

হালিমের ভাই আবদুর রাজ্জাক খান জানান, তাঁর ভাইয়ের ৯ বছরের উপার্জনের সব টাকা রেশমা বেগমের কাছে ছিল। অনেক শখ করে একটা মোটরসাইকেল কিনেছিলেন তাঁর ভাই। সেটাও শ্যালকের নামে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে রাতে হালিমের সঙ্গে ঝামেলা হয়। সকালে পুলিশ খবর দেন, ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রেশমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে আমি ও আমার বাবার বাড়ির কেউ মারধর করেনি। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। জানতে পারেন, স্ত্রী ও শাশুড়ি ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তখন তাঁরা লাশ রেখে পালিয়ে যান। ঘটনাটি সন্দেহজনক। পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ব ব প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা প্রবাসী ও স্বজনদের

বিক্ষোভের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্টের ক্ষমা

সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাবন্দী ও আটক হওয়া প্রবাসীদের মুক্তিসহ চার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করায় তাদের আটক করা হয়।

আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার এই ঘোষণা দেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আটজন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁরা সেখানেই অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

‘জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলফেরত ভুক্তভোগী প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের স্বজনেরাও অংশ নিয়েছেন।

এই আন্দোলনকারীরা সকালে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এলে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। এতে বাংলামোটর হয়ে যমুনা অভিমুখের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। অন্যরা সেখানকার সড়কের অবস্থান নেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই বাংলাদেশিদের মুক্তির ব্যাপারে আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতেই সেই ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন ১৪ জন।

আজ সগীর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল সদর কারাগারে ২৫ জন ভাই বন্দী আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করানো হয়েছে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্র বেলালের সন্ধান চায় পরিবার 
  • দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা প্রবাসী ও স্বজনদের
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির কাছে ১৪ জনকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ