দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের টেকসই উন্নয়ন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত সব সেবা একটি মাত্র কর্তৃপক্ষের অধীন নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (টিএফএ) ট্র্যাকিং টুলস মিশন ও শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মধ্যকার এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনটির ঢাকার গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় ব্যবসায়ীরা দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন স্পেশালিস্ট মেলভিন স্প্রেইজ, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কনসালট্যান্ট থেরেসা মরিসে এবং সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট ও টাস্ক টিম লিডার নুসরাত নাহিদ বেবি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ডব্লিউটিওর টিএফএ ট্র্যাকিং টুলস হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যা সদস্যদেশগুলোকে টিএফএর অধীন তাদের বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করে। দেশগুলো যাতে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং টিএফএর সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে তাদের সাহায্য করে বিশ্বব্যাংক।

দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস এবং উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো, লজিস্টিকস ও ল্যাব সক্ষমতা জোরদারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন ব্যবসায়ী নেতারা।

সভায় বিশ্বব্যাংক মিশনের সদস্যরা দেশে বাণিজ্য সহজীকরণ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে শোনেন। ডব্লিউটিওর সদস্যদেশগুলোতে টিএফএ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামতকে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. আবদুল হক, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো.আলমগীর, এফবিসিসিআইয়ের আন্তর্জাতিক শাখার প্রধান মো. জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ফারুক আহম্মেদ, বারভিডার যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জগলুল হোসেন, মেঘনা গ্রুপের এফএমসিজি বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মিথুন কুমার গায়েন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এফব স স আইয় র ব ণ জ য প রক র ব শ বব য ব যবস য় আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমানের জীবন অতীতের আফসোসে বন্দী থাকার নয়

জীবনের পথচলায় আমরা প্রায়ই অতীতের ছায়ায় আটকে পড়ি। ভুল, ক্ষতি বা হারানো সুযোগের জন্য আফসোসে হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে। বর্তমানে অসন্তোষ আর ভবিষ্যতের ভয় আমাদের শান্তি কেড়ে নেয়।

কিন্তু মুসলিমের জীবন এই আফসোসের শৃঙ্খলে বন্দী থাকার নয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে অতীতকে ছেড়ে দিয়ে বর্তমানকে আল্লাহর কদরে গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যৎকে তাঁর রহমতের ওপর সমর্পণ করতে হবে।

কোনো বিপদ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর ওপর ইমান আনে, তিনি তার হৃদয়কে পথ দেখান। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১

এ লেখায় আমরা দেখব কীভাবে ইমানের শক্তি আমাদের অতীতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে, হৃদয়ে শান্তি নিয়ে আসে।

অতীতের আফসোস: মানসিক অশান্তির কারণ

জীবনের কোনো না কোনো মুহূর্তে আমরা অতীতের দিকে তাকাই। একটি ভুল সিদ্ধান্ত, হারানো সম্পর্ক বা উপেক্ষিত সুযোগ—এগুলো হৃদয়ে কাঁটার মতো বেঁধে। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আমরা সেই কষ্টের স্মৃতি চিবিয়ে চলি। ‘যদি তখন এটা করতাম!’ বা ‘যদি সেটা ছেড়ে দিতাম!’—এই কথাগুলো মনে ঘুরপাক খায়।

এক প্রাচীন কবি বলেছিলেন, “আমার জানা নেই ‘যদি’ কোথায়?—এই ‘যদি’ আমাদের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়।” (আলী সাল্লাবি, ইমান বিল কাযা ওয়াল কদার, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ২৯০, দার আল-মা’রিফা, বৈরুত, ২০১১)

মনোবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীরা বলেন, অতীতের আফসোস ভুলে বর্তমানে বাঁচতে হবে, কারণ অতীত ফিরে আসে না।

আরও পড়ুনমুসলিম বিশ্বে আধুনিকতার ধারণা এল যেভাবে২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের একজন অধ্যাপক তাঁর ছাত্রদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে কাঠ কেটেছে?’ অনেকে হাত তুললেন। ‘আর কাঠের গুঁড়ো কেটেছে?’ কেউ হাত তুললেন না। তিনি বললেন, ‘কাঠের গুঁড়ো কাটা যায় না, কারণ তা ইতিমধ্যে অনেক বেশি কাটা। অতীতের আফসোসে ডুবে থাকা তেমনই অর্থহীন।’ (ডেল কার্নেগি, দুশ্চিন্তা ছেড়ে জীবন শুরু করুন, পৃ. ১৭৩)

এই আফসোস কেবল মুখে কুঞ্চনরেখা ফেলে বা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে, কোনো উপকার করে না।

অতীতকে ক্ষমা, বর্তমানকে গ্রহণ

মুসলিমের জীবন অতীতের অনুশোচনায় বন্দী থাকার নয়। ইমানের শক্তি তাকে অতীতের কষ্ট থেকে মুক্ত করবে, বর্তমানকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে গ্রহণ করতে শেখাবে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। প্রতিটিতে কল্যাণ আছে। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো এবং অসহায় হয়ো না। যদি কোনো বিপদ আসে, তাহলে বলো, ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’। কারণ, ‘যদি’ শয়তানের কাজের দরজা খোলে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)

কোরআন বলে, ‘কোনো বিপদ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর ওপর ইমান আনে, তিনি তার হৃদয়কে পথ দেখান। আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)

মুসলিমের স্লোগান হলো: ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’, আলহামদু লিল্লাহি ‘আলা কুল্লি হাল’ (সব অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা)।

এক পারসি নেতা সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আল্লাহর নিয়তি। তিনি আমাদের দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন, আর আমাদের তোমাদের দিয়ে।কেন অতীতের আফসোস অর্থহীন

অতীতের কষ্টে আটকে থাকা যেন ‘পিষে যাওয়া আটা পেষা’ বা ‘কাটা কাঠের গুঁড়ো কাটা।’ কবি বলেছেন, ‘যা চলে গেছে তা গেছে, আশা অদৃশ্য, তোমার কাছে আছে শুধু এই মুহূর্ত।’ (ইউসুফ আল–কারাজাভি, ইমান বিল কদার, পৃ. ১০১, দার আশ-শুরুক, কায়রো, ২০০০)

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অতীতের দুশ্চিন্তা শুধু মুখে কুঞ্চনরেখা ফেলে বা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে। কিন্তু ইমানের দৃষ্টিতে, অতীতের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহর কদরে ঘটে—এটি তাঁর পরীক্ষা। যার ইমান শক্তিশালী, তার হৃদয় আল্লাহর হাতে নিরাপদ।

ইসলামের ইতিহাসে একটি ঘটনা আছে, কোনো একটি অঞ্চল বিজয়ের সময় এক পারসি নেতা সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কারা?’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা আল্লাহর নিয়তি। তিনি আমাদের দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন, আর আমাদের তোমাদের দিয়ে। তুমি যদি আকাশের মেঘেও থাকতে, আমরা তোমার কাছে উঠে যেতাম।’ (ইউসুফ আল–কারাজাভি, ইমান বিল কদার, পৃ. ১০১, দার আশ-শুরুক, কায়রো, ২০০০)

আরও পড়ুনমুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বর্তমানে জীবনযাপন মহানবীর (সা.) শিক্ষা

মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, উপকারী কাজের জন্য চেষ্টা করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে এবং অসহায় হওয়া যাবে না। তিনি বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য চাও এবং অসহায় হয়ো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)

কোরআন আমাদের আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে শেখায়: ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ৫)

শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়তর। যা তোমার উপকারে আসে তার জন্য চেষ্টা করো, আল্লাহর সাহায্য চাও এবং অসহায় হয়ো না।’সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪

কবি বলেছেন, ‘যদি আল্লাহর সাহায্য না থাকে, তবে মানুষের সব চেষ্টা বৃথা’ (আলি সাল্লাবি, ইমান বিল কাযা ওয়াল কদার, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ২৯১, দার আল-মা‘রিফা, বৈরুত, ২০১১)

অতীত থেকে মুক্তির পথ

অতীতের আফসোস থেকে মুক্তির জন্য ইসলাম আমাদের কয়েকটি সহজ পথ দেখায়:

তকদিরে বিশ্বাস আনুন: সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে। অতীতের কষ্টকে তাঁর পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন।

‘যদি’ এড়িয়ে চলুন: এই শব্দ শয়তানের ফাঁদ। পরিবর্তে বলুন, ‘নিয়তি আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তা–ই করেন’।

বর্তমানে কাজ করুন: উপকারী কাজে মনোনিবেশ করুন, আল্লাহর সাহায্য চান। অতীতকে ‘পিষে যাওয়া আটা’ হিসেবে ছেড়ে দিন।

দোয়া করুন: কোরআন তিলাওয়াত করুন, নামাজে আল্লাহর কাছে শান্তি প্রার্থনা করুন।

আসুন, আমরা তকদিরে সন্তুষ্ট হয়ে এবং বর্তমানে কাজ করে আল্লাহর কাছে শান্তি প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে শান্তি দিন, জীবনকে বরকতময় করুন।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ