স্বেচ্ছাসেবক দলের ছয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১
Published: 24th, June 2025 GMT
মব সৃষ্টি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনসহ ছয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হানিফ মিয়াকে গত সোমবার রাতে সেনাবাহিনী আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নূরুল হুদার ঘটনা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক মবের ঘটনা ঘটছে।
এর নিন্দা জানিয়ে গতকাল ৩০ বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার ছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষের মানবাধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত রাখা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সেই অঙ্গীকার প্রতিনিয়ত উদ্বেগজনকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.
এ ছাড়া আরেক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, মব ভায়োলেন্সকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আসামি আছে বলে কেউ যেন কারও বাড়িতে হানা না দেয়, ভাঙচুর না করে। আপনারা পুলিশকে খবর দেবেন, আমরা সেখানে যাব এবং আমরা তাদের ধরব। এক্ষেত্রে ঘটনা জানার পরও পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মব ভায়োলেন্সে দলের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নির্বাচন। এসব নির্বাচনে সব নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধী হোক, তাদের বিচার হবে আইনের মাধ্যমে, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়।
আলাদা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের কোথাও মবের ঘটনা ঘটলে শুধু বিবৃতি দিয়ে ‘দায় না সেরে’ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
মামলায় ছয় আসামি
রোববার নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে তাঁকে ঘেরাও করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়। ওই দিন সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। জনগণের ভোট ছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় বর্তমানে নূরুল হুদা রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সজিব হাসান বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন, উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মো. সেলিম ও সদস্য সচিব হানিফ মিয়া, উত্তরা পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাইয়ুম, তুরাগ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি দুলাল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোজাম্মেল হক ঢালীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, এজাহারভুক্ত আসামি হানিফকে সেনাবাহিনী আটক করে গতকাল ভোরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাঁকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার অন্য আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
৩০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
নূরুল হুদাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নিন্দা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই সঙ্গে নূরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতাসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে ৩০ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। মব সহিংসতার স্বাভাবিকতার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন–সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, রাশেদা কে. চৌধুরী, শামসুল হুদা, শিরীন পারভীন হক, শাহীন আনাম, ড. সামিনা লুৎফা, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ড. শহিদুল আলম, তাসলিমা ইসলাম, অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন প্রমুখ।
এদিকে আমরা নাগরিক সংগঠন ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া আলাদা বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মব মব ভ য় ল ন স ব যবস থ গতক ল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
যাচাই ছাড়াই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাসনাতের বক্তব্য মানহানিকর: দুদক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘ঘুষ দাবি’ করা নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছেন সেটিকে ‘যাচাই-বাছাইহীন’ ও মানহানিকর বলে বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাত ৯টায় এনসিপি নেতার এ পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে দুদক বলেছে, কমিশনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংস্থাটিকে দোষারোপ করায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্রতারণার বিষয়ে আগে থেকে দুদক সতর্কবার্তা দিয়ে আসছে তুলে ধরে কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক আরো বলেছে, “এ বিষয়ে সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।”
প্রতারণার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে এতে বলা হয়েছে, এর আগে এমন প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
“এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।”
এর আগে হাসনাত তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব থাকার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।”
এ পোস্টের সঙ্গে তিনি ওই চিকিৎসকের রেকর্ড করা ফোনালাপের তিনটি অডিও ভিডিও আকারে পোস্ট করেন।
হাসনাত তার ফেইসবুক পোস্টে আরও লেখেন, “দুদকের সর্বনিম্ন রেট না কি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চায়, টাকা দিবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের উপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে।”
“দুদকের এইসব কাজকারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই, কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।”
হাসনাত আরো লেখেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের উপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?”
“ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?”
ঢাকা/ইভা