মব সৃষ্টি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনসহ ছয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হানিফ মিয়াকে গত সোমবার রাতে সেনাবাহিনী আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

নূরুল হুদার ঘটনা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক মবের ঘটনা ঘটছে। 
এর নিন্দা জানিয়ে গতকাল ৩০ বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার ছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষের মানবাধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত রাখা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সেই অঙ্গীকার প্রতিনিয়ত উদ্বেগজনকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। 
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.

জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বন্ধ করা যাচ্ছে না, তবে অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। সাবেক সিইসির সঙ্গে যে ঘটনা এর জন্য আমরা সবাই দুঃখিত। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
এ ছাড়া আরেক অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, মব ভায়োলেন্সকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আসামি আছে বলে কেউ যেন কারও বাড়িতে হানা না দেয়, ভাঙচুর না করে। আপনারা পুলিশকে খবর দেবেন, আমরা সেখানে যাব এবং আমরা তাদের ধরব। এক্ষেত্রে ঘটনা জানার পরও পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মব ভায়োলেন্সে দলের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার একক নির্বাচন। এসব নির্বাচনে সব নির্বাচন কমিশনারই ফ্যাসিবাদের অংশ। তবে তারা যত বড় অপরাধী হোক, তাদের বিচার হবে আইনের মাধ্যমে, মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়। 
আলাদা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের কোথাও মবের ঘটনা ঘটলে শুধু বিবৃতি দিয়ে ‘দায় না সেরে’ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। 

মামলায় ছয় আসামি 
রোববার নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে তাঁকে ঘেরাও করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়। ওই দিন সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। জনগণের ভোট ছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচন করার অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় বর্তমানে নূরুল হুদা রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে নূরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় গতকাল উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সজিব হাসান বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন, উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মো. সেলিম ও সদস্য সচিব হানিফ মিয়া, উত্তরা পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কাইয়ুম, তুরাগ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি দুলাল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোজাম্মেল হক ঢালীকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, এজাহারভুক্ত আসামি হানিফকে সেনাবাহিনী আটক করে গতকাল ভোরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাঁকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মামলার অন্য আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। 

৩০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
নূরুল হুদাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নিন্দা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই সঙ্গে নূরুল হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতাসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে ৩০ নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। মব সহিংসতার স্বাভাবিকতার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা। 
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন–সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, রাশেদা কে. চৌধুরী, শামসুল হুদা, শিরীন পারভীন হক, শাহীন আনাম, ড. সামিনা লুৎফা, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ড. শহিদুল আলম, তাসলিমা ইসলাম, অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন প্রমুখ। 
এদিকে আমরা নাগরিক সংগঠন ‘মব ভায়োলেন্স’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া আলাদা বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মব মব ভ য় ল ন স ব যবস থ গতক ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু আগামীকাল

আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু হবে। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীরা ১২ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৯ আগস্ট বেলা ৩টা।

প্রার্থীরা সশরীর বিশ্ববিদ্যালয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করতে পারবেন। একই সময়ে হল সংসদের মনোনয়নপত্র প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট হল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সশরীর সংগ্রহ ও দাখিল করতে হবে।

ডাকসু ও হল সংসদ আচরণ বিধিমালা-২০২৫ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়া যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরও তালিকায় বহিষ্কৃত ও মামলায় অভিযুক্ত কোনো শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচ এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। ২৮ বছর পর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ