‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের পরিবার। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, ভূমি দখলের অভিযোগ নেই। মেয়র হিসেবে, এমপি হিসেবে আমি মানুষের সেবা করেছি’।

মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে ঢাকা মহানগর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি আদালতে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বলেন, আমাকে হেলমেট পরাবেন না। কেউ যদি আমাকে মারতে চায়, মারুক। হেলমেট পরিয়ে আপনারা আমাকে বাঁচাতে পারবেন না।

আদালতে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী জানান, আদালত প্রাঙ্গণে এ সময় তার কর্মীদের ‘বিপ্লব ভাই, বিপ্লব ভাই’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপি মহাসমাবেশে সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ হারান শামীম। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয়।

শামীম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির ডিবির এসআই ফেরদৌস আলম সোমবার ফয়সাল বিপ্লবকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ প্রতিবাদ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ ছড়ানোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে দুদক জানায়, একটি প্রতারক চক্র দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ইতিমধ্যে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

দুদকের ভাষ‍্য, ‘এর আগেও প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করেন। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’

এ ধরনের ঘটনায় নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতারণামূলক ফোনকল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়া হলে অথবা কোনো অনিয়মের তথ্য জানা থাকলে, তা দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন ১০৬-এ জানানোর অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া যেতে পারে।’

এর আগে এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোন অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তাঁর ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয়, আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকাপয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’

হাসনাত পোস্টে আরও লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান, টাকা দিবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পর। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করা মানুষের কাছ থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’

এনসিপি নেতা পোস্টে লিখেছেন, ‘দুদকের এসব কাজ-কারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’

হাসনাত আবদুল্লাহ পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই। দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?’

হাসনাত লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে, সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে। আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ