প্রচারে বাংলা-উর্দু, সাবওয়েতে ইফতার, নিউইয়র্কের অন্য রকম মুসলিম মেয়র প্রার্থী
Published: 26th, June 2025 GMT
কিছুদিন আগেও জোহরান মামদানি ছিলেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার (স্টেট অ্যাসেম্বলি) এক অখ্যাত সদস্য। গত বছর তিনি যখন মেয়র পদে নিজেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তখন তিনি ছিলেন এক তরুণ আইনপ্রণেতা, যার পরিচিতি ছিল খুব সীমিত। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে যান, হারান এমন সব পরিচিত ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের, যাঁদের নিউইয়র্ক নগরের ভোটারদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। জোহরান মামদানি এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী।
উগান্ডা থেকে কুইন্স
জোহরান মামদানি জন্মেছেন উগান্ডার কাম্পালায়। সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে চলে আসেন। তিনি নিউইয়র্কের বিখ্যাত ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। পরে বোডইন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানেই তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ নামের একটি ছাত্রসংগঠনের ক্যাম্পাস শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
এই তরুণ প্রগতিশীল রাজনীতিক হতে চলেছেন নিউইয়র্ক নগরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র। তিনি শহরের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের একটি ভিডিও ছিল পুরোপুরি উর্দু ভাষায়। তাতে বলিউড সিনেমার ক্লিপও ছিল। আরেক ভিডিওতে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন।
মামদানির স্ত্রী রামা দুওয়াজি, ২৭ বছর বয়সী একজন সিরীয় শিল্পী। তাঁদের পরিচয় হয়েছিল ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’-এর মাধ্যমে।
মামদানি নিজেকে জনগণের প্রার্থী ও একজন সংগঠক হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর স্টেট অ্যাসেম্বলি প্রোফাইলে লেখা আছে, ‘জীবন নানা দিকে মোড় নিয়েছে—কখনো সিনেমা, কখনো র্যাপ, কখনো লেখালেখির দিকে। তবু সংগঠন করাই তাঁকে হতাশার বদলে কর্মের দিকে নিয়ে গেছে।’
রাজনীতিতে আসার আগে জোহরান কুইন্সে কাজ করতেন গরিব গৃহমালিকদের জন্য। তাঁদের উচ্ছেদ ঠেকাতে আইনি সহায়তা দিতেন তিনি। মুসলিম হওয়াকেও তিনি গর্বের সঙ্গে প্রচারণার অংশ করেছেন। তিনি নিয়মিত মসজিদে গেছেন এবং নিউইয়র্ক শহরে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট নিয়ে বাংলা-উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় ভিডিও করেছেন।
জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন পরিচিত, অভিজ্ঞ এবং ভোটারদের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়িত। তবু তাঁদের হারিয়ে এগিয়ে গেছেন মামদানি। তাঁর প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সংকট। বিশেষত মাথা গোঁজার ঠাঁই ও শিশু দেখাশোনার মতো খরচ দিন দিন যেভাবে বেড়েছে, সেটাই ছিল তাঁর ভাষ্যের মূল সুর।
ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ের ফল প্রকাশের দিন মা মীরা নায়ার, বাবা মাহমুদ মামদানি ও স্ত্রী রামার সঙ্গে জোহরান মামদানি। ২৫ জুন, নিউইয়র্ক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয র ক
এছাড়াও পড়ুন:
সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
লাল–নীল পোশাকে আকাশে উড়ে আসছেন তিনি, দিনে শান্ত স্বভাবের একজন সাংবাদিক, রাতে তিনি নায়ক— দুর্বল মানুষের রক্ষক, অন্যায়ের শত্রু। নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ এই সুপারহিরো হয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেতা ডিন কেইন। তিন দশক আগের সেই জনপ্রিয় সুপারম্যান এখন আর আকাশে ওড়েন না, হাতে নেই অপরাধ দমনের কাল্পনিক শক্তি। তবে নিজের ভাষায় তিনি এখনো ‘ন্যায়ের পক্ষে’। আর সেই ন্যায় রক্ষার নতুন মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। খবর ইউএনবি
৬ আগস্ট ফক্স নিউজের উপস্থাপক জেসি ওয়াটারসের টকশোতে হাজির হয়েই চমকে দেন ৫৯ বছর বয়সী ডিন কেইন।
তিনি জানান, শিগগিরই আইসিইতে একজন অনারারি এজেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আগে থেকেই তিনি একজন রিজার্ভ পুলিশ অফিসার এবং ডেপুটি শেরিফ ছিলেন। ‘আমি আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা আমাকে দলে নিতে রাজি হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আইসিই সঠিক কাজ করছে’ বলেন কেইন।
এই ঘোষণা আসছে এমন একসময়, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করেছেন। আইসিইর বাজেট বেড়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলার, লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে ১০ হাজার নতুন এজেন্ট নিয়োগ। ট্রাম্পের বিখ্যাত ‘বিগ বিউটিফুল ওয়াল’ প্রকল্প থেকেই এসেছে এই বরাদ্দ।
ডিন কেইন প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তাঁর যুক্তি, ‘আমাদের দেশে নিয়মকানুন আছে। সবাইকে চাইলেই ঢুকতে দেওয়া যায় না। হ্যাঁ, সুপারম্যান অবশ্যই এক ‘এলিয়েন’ কিন্তু গল্পের ভেতরে তার আগমনও একপ্রকার শৃঙ্খলার মধ্যে।’
কেইনের এই মন্তব্য ঘিরে অনেকেই তর্ক তুলেছেন, কারণ সাম্প্রতিক সুপারম্যান চলচ্চিত্রে চরিত্রটিকে একজন অভিবাসী হিসেবে সহানুভূতিপূর্ণভাবে দেখানো হয়েছে। কেইন অবশ্য মনে করেন, রাজনৈতিক বার্তা নয়; বরং ‘আইনের শাসন’ই হওয়া উচিত মূল বার্তা।
সমালোচনার ঝড়
এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কৌতুক অভিনেত্রী মার্গারেট চো সরাসরি বলেন, ‘তোমার নিজের পরিবার–ইতিহাসে জাপানি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা আছে, তবু কেন এমন সংস্থায় যোগ দিচ্ছ?’ টকশো ‘দ্য ভিউ’র সহ–উপস্থাপক আনা নাভারো পর্যন্ত তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে বিদ্রূপ করেন—যা আবার অন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আইসিই প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে অভিযান চালায়। অনিবন্ধিত অভিবাসী তো বটেই, কখনো কখনো বৈধ বাসিন্দা ও নাগরিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এসব অভিযানের ভিডিও ধারণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নজিরও রয়েছে।
সুপারম্যান থেকে এজেন্ট—যাত্রার প্রেক্ষাপট
ডিন কেইন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত টেরি হ্যাচারের বিপরীতে ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ সুপারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন। তত দিনে তিনি আমেরিকান পপ কালচারের অংশ হয়ে যান। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
আগে বলা হয়েছে, এখন তাঁর নতুন পরিচয়—আইসিইর ‘অনারারি এজেন্ট’। নিজের ভাষায়, ‘আশা করি, আমার মতো অনেকে এগিয়ে আসবেন এবং এই দেশকে রক্ষায় সাহায্য করবেন।’
বিতর্কের শেষ নেই
কেইনের এই সিদ্ধান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটি আলোচিত অধ্যায় হয়তো, তবে এর প্রভাব দুই মেরুতেই স্পষ্ট। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমী বলছেন, আর সমালোচকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তাঁর সুপারম্যান ইমেজের সঙ্গে বেমানান।
তবে ডিন কেইনের কাছে এই বিতর্কের মূল্য নেই বললেই চলে। তাঁর চোখে, আকাশে উড়তে না পারলেও ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা’ই আসল শক্তি, যা তিনি এবার বাস্তবের মাটিতেই প্রয়োগ করতে চাইছেন।