কীভাবে একটি শহরকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অধিক বসবাসযোগ্য করে তোলা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে এই মুহূর্তে শুনতে হবে জোহরান মামদানির কথা। তিনি আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে ডেমোক্রেট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী।

মামদানি বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ন্যায্য মূল্যের মুদি দোকান খোলা। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নতুন দুই লাখ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ। বাসা ভাড়া আগামী চার বছর বাড়ানো নিষিদ্ধ করা। বিনাখরচে শিশু দিবাযত্নের ব্যবস্থা করা। বিনাভাড়ার সরকারি বাস চালু করা। 

মনে রাখতে হবে, মামদানির বয়স ৩৩। অশ্বেতাঙ্গ। তার ওপর মুসলিম। প্রথাগত রাজনীতিবিদ নন। ছিলেন সংগীতশিল্পী। তিনি যে বাসায় থাকেন এর মাসিক ভাড়া ২ হাজার ২৫০ ডলার। তার কোনো গাড়ি নেই। যাবতীয় সম্পদের মূল্য ২ লাখ ডলার। তার এই সম্ভাব্য মনোনয়নে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন। তার মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। বাবা উগান্ডান পণ্ডিত, বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

ট্রাম্প ও মামদানি পাল্টাপাল্টি খোঁচা

মামদানির বক্তব্য এরই মধ্যে ভোটারদের মনোযোগ কেড়েছে। প্রচারণার কৌশলও ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি বাসা ভাড়ার বিষয় তুলে ধরতে আটলান্টিক সাগরে ডুব দিয়েছেন। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে তুলে ধরার জন্য একটি বারিতো (মেক্সিক্যান খাবার) দিয়ে পাতাল রেলে সাবওয়েতে রমজানের ইফতার করে রোজা ভাঙেন। ভোটের আগের দিন পুরো ম্যানহাটন হেঁটেছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন।

এ সব নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খোঁচা মারতে ছাড়েনি। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি জিতে এখন মেয়র হওয়ার পথে। আগেও কিছু উগ্র বামপন্থি দেখেছি। কিন্তু এবার ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে গেছে। তার চেহারা বিশ্রী, কণ্ঠস্বর বিরক্তিকর, আর বুদ্ধিও কম।’

এদিকে মামদানিও ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী।’ এটা স্পষ্ট যে অভিবাসী ও সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের নীতিতে ট্রাম্প অবিচল, এর বিপরীত মেরুতে মামদানি।

বাংলাদেশি নারীদের ধন্যবাদ

নিউইয়র্ক সিটির ৩৯ নম্বর কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মায়া কর্নবার্গ পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৬৭ ভোট।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে মামদানি এবং শাহানা যৌথভাবে বাংলায় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে সামদানি তার হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণায় অংশ নেওয়া ‘বাংলাদেশি আন্টিদেরও ধন্যবাদ’ দেন।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী আতাউর রহমান সমকালকে বলেন, জোহরান সামদানি মুসলিম এবং সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রী। তিনি নির্বাচনে জিতলে তা হবে বিশাল অর্জন। তিনি ফিলিস্তিন সমর্থক। সামাজিক ন্যায়বিচারের একনিষ্ঠ কর্মী।

মামদানির চমক

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন জোহরান মামদানি। পঁচানব্বই শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে মামদানি ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবারে মামদানির এই জয় নিউইয়র্ক এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রগতিশীল ও তরুণ ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় অর্জন। এটা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে প্রগতিশীল পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধাক্কা

মামদানির এই জয় প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন অনেকে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, রাজনীতিবিদ জিম ক্লাইবার্নসহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা অ্যান্ড্রু কুওমোর পক্ষে ছিলেন। তবে এই পরাজয় দলের মধ্যে প্রজন্ম এবং মতাদর্শের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ড কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলেও মামদানির সমালোচনা করেছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বোর্ড জনমত বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। বোর্ড সদস্য মারা গে লিখেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটিক ভোটাররা জানিয়ে দিয়েছেন তারা নতুন পথে হাঁটতে প্রস্তুত।’

সাবির্ক বিষয়ে প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত সমকালকে বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে আমি নিউইয়র্কে আছি। সাবেক গভর্নর এন্ড্রু কুমোকে আমরা মন থেকে চাচ্ছিলাম না। ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক নারী। সেই ঘটনায় তাকে নির্বাচিত গভর্নরের পদ ছাড়তে হয়েছিল। বিষয়টি আজও আমরা ভুলতে পারিনি। সংগত কারণেই আমরা নতুন মুখ চাচ্ছিলাম। দল থেকে ১১জন প্রার্থী প্রাইমারি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মামদানির পরিকল্পনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে আমি তাকে পছন্দ করছি। তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।’

নিউইয়র্কের ব্রুকলিন প্রবাসী আম্বিয়া বেগম অন্তরা বলেন, মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানিকে পছন্দ করার পেছনে আমার স্পষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। তিনি অভিবাসীবান্ধব, বিলিয়নিয়ারদের নন- সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। গরিব, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর রাজনীতির ভিত্তি। বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে তার পরিকল্পনা স্পষ্ট। তিনি মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির গর্ব। সবমিলিয়ে নিউইয়র্ককে মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জোহরান মামদানির মতো নেতা প্রয়োজন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন উইয র ক ন উইয়র ক ম মদ ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে কে এগিয়ে

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রার্থী বাছাই নির্বাচন আজ (২৪ জুন)। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই করা হবে। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আটজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি ও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর মধ্যে। অপর দিকে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কার্টিস সিলও।

মেয়র নির্বাচন নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আহনাফ আলম নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যান্ড্রু কুমো প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ। তাঁর ৪০ বছরের পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি রাজ্যের গভর্নর ছিলেন, সেখান থেকে আরও নিচের অবস্থানে মেয়র নির্বাচন করছেন রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য।

আহনাফ আলম আরও বলেন, চার বছরের জন্য জীবনযাপন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন অ্যান্ড্রু কুমো। মানুষ তাঁর কথায় বিশ্বাস করছে। বিভিন্ন জনমত জরিপে তিনি এগিয়ে আছেন। ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতারা তাঁকে সমর্থন করছেন। তবে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশির ভাগ মানুষ মামদানিকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত মৌমিতা আহমেদ। তিনি ২০২১ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মৌমিতা বলেন, নিউইয়র্কের তরুণ প্রজন্ম জোহরান মামদানির কথায় আস্থা পাচ্ছেন। তিনি সুলভ আবাসনব্যবস্থা, যাতায়াত, নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

জোহরান মামদানি অভিবাসী সমাজের উন্নয়নে কাজ করবেন, বিশেষ করে অভিবাসীদের ব্যাপক ধরপাকড় থেকে রক্ষা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মুসলিম সম্প্রদায় তাঁর অন্যতম শক্তি। তিনি কতটা জনপ্রিয় তাঁর তহবিল সংগ্রহের পরিমাণ থেকেই বোঝা যায়। তিনি এ পর্যন্ত ৮ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছেন জনগণের মধ্য থেকে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক রানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের প্রাথমিক নির্বাচনে আমেরিকান-বাংলাদেশি ভোটাররা একজন তরুণ ও উদ্যমী প্রার্থী হিসেবে মামদানিকে প্রায় একচেটিয়া ভোট দেবেন। কারণ, তাঁরা চাইবেন মামদানি মেয়র হলে অন্তত সহজে তাঁর কাছে যাওয়া যাবে, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথাগুলো তুলে ধরতে পারবেন। তা ছাড়া মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে বার্ষিক বাড়িভাড়া কমানো ও বিনা মূল্যে বাসে যাতায়াতের সুবিধার কথা বলা হয়েছে।

অপর দিকে অ্যান্ড্রু কুমো বংশগত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা, বিশেষ করে করোনা মহারারিকালীন তাঁর ভূমিকা সারা যুক্তরাষ্ট্র সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ভোটাররা সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক মূলত ডেমোক্র্যাটদের শহর। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলেছিলেন। তাতে রিপাবলিকান প্রার্থী হেরে গেলেও অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় তিনি বেশি ভোট পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুননিউইয়র্ক সিটি কি একজন মুসলিমকে মেয়র নির্বাচিত করবে২১ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউইয়র্ক নগর কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশি শাহানা হানিফ
  • ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ কেন ধন্যবাদ দিলেন জোহরান মামদানি
  • জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিকে চাঙা করছে
  • নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়া জোহরান কেন ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ দিলেন
  • জোহরানকে ‘পাগল কমিউনিস্ট ও ভয়ংকর’ বলে বিদ্রুপ করলেন ট্রাম্প
  • ঠিকানা টিভিতে আসছে ‘ফ্রাইডে নাইট উইথ জায়েদ খান’
  • নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি
  • সাবেক গভর্নর কুমোর হার, নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র মুসলিম তরুণ মামদানি
  • নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে কে এগিয়ে