এই প্রথম দেশের রাজস্ব আয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বেশি হতে যাচ্ছে। ফলে সরকারকে ঋণ করে বেতন, ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাই অর্থনীতির স্বার্থে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের (পিআরআই) বাজেট পর্যালোচনা সভায় এই উদ্বেগের কথা জানান অর্থনীতিবিদেরা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জাইদি সাত্তার ও আশিকুর রহমান যৌথভাবে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় আশিকুর রহমান বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সরকারের পরিচালন ব্যয় মোট রাজস্ব আয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তার মানে ঋণ করে আমাদের বেতন, ভর্তুকি ও সুদ ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য খুবই উদ্বেগের। আমাদের এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ও কমে আসছে। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ছয় লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। এ অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা হবে সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। নানা মহল থেকে প্রতিবাদ হলেও ব্যাংক একীভূত করতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে বর্তমান সরকারকেই।

জাইদি সাত্তার বলেন, প্রতিবছর ২৪ লাখ তরুণ কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে ১০ লাখ তরুণ কাজের সন্ধানে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাকি ১৪ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসার ক্ষেত্রে উচ্চ করহার রপ্তানিপণ্য বৈচিত্র্যকরণের পথে প্রধান বাধা। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমলেও সেটি সমন্বয়ে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে দেশের বিনিময় হার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।

জাইদি সাত্তার আরও বলেন, দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে জিডিপির ১ শতাংশে নেমেছে। সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যও ইতিবাচক হবে আশা করা যায়। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। এটি ইতিবাচক দিক। এর ফলে বছর শেষে বৈদেশিক আয় একটি ভালো অবস্থানে থাকবে। তারপরও অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, দেশের সড়ক, নৌ, বিমান ও রেল বিভাগ এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসা উচিত। বর্তমানে এ খাতের পরিকল্পনা, নকশা, ক্রয়–প্রক্রিয়া সব আলাদা বিভাগের মাধ্যমে হয়। তাতে ক্রয়–প্রক্রিয়াতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রকল্প অনুমোদন থেকে নির্মাণ শুরু করতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। এতে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

চারটি মন্ত্রণালয়কে এক করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত, হয়তো সময় লাগবে; কিন্তু এমন পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমি ঢাকার সড়ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এখানে দুটি সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, হাইওয়ে পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতিসহ নানা সংস্থা জড়িত। তাই এখানকার সড়ক ব্যবস্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক জটিল।’

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমি খুলনা গিয়ে দেখেছি, সেতু আছে কিন্তু সড়ক নেই। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। তাই দেশের যোগাযোগব্যবস্থার কৌশলপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকদের নেতৃত্বে হওয়া উচিত।’

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান কমেছে। ভালো ব্যবসায়ীরাও এখন সংগ্রাম করছেন। কারণ ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ব্যবসার খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন; কিন্তু সরকার রাজস্ব ব্যয় বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় তাই স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্তকে কোনো ব্যবসায়ী সমর্থন করছেন না। রপ্তানিকারকেরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। আবার এসএমই খাতও এই উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এমনিতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে এসএমই খাতে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তাহলে এ খাতের উদ্যোক্তারা কীভাবে টিকে থাকবেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের উপপ্রধান ক্লিনটন পোবকে, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন সরক র র ন বল ন ব যবস করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক-নৌ-বিমান ও রেল এক মন্ত্রণালয়ে থাকা উচিত: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

দেশের সড়ক, নৌ, বিমান ও রেল বিভাগ এক মন্ত্রণালয়ের অধীন বা এক ছাদের নিচে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন । তিনি বলেন, আমাদের সমন্বিত পরিকল্পনা ও একটি মন্ত্রণালয় দরকার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের (পিআরআই) বাজেট পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ মইনউদ্দিন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার। উপস্থিত ছিলেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ার রাহমান প্রমুখ।  

শেখ মইনউদ্দিন বলেন, এখানে পরিকল্পনা, ডিজাইন, ক্রয় প্রক্রিয়া সব আলাদা বিভাগের মাধ্যমে হয়। দীর্ঘ সময় লাগে ক্রয় প্রক্রিয়ায়। প্রকল্প অনুমোদন থেকে নির্মাণ শুরু করতে ৪-৫ বছর সময় লাগে। এতে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ছাড়া সেতু বিভাগ, সড়ক বিভাগ ও রেল বিভাগ আলাদা আলাদা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে। সবাই নিজেরটা নিয়ে ভাবছে। কিন্তু এখানে সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন। সমন্বিতভাবে মহাপরিকল্পনা করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

চারটি মন্ত্রণালয় এক করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত, হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু এমন পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমি ঢাকার সড়ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এখানে দুটি সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, হাইওয়ে পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতিসহ নানা সংস্থা জড়িত। তাই এখানকার সড়ক ব্যবস্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক জটিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ খাত আরও বিশাল। আমি সেখানকার পরিবহন ও লজিস্টিক নিয়ে কাজ করেছি।’

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমি খুলনা গিয়ে দেখেছি, সেতু আছে, কিন্তু সড়ক নেই। সেখানে সমন্বয়ের অভাব আছে। তাই দেশের যোগাযোগব্যবস্থার কৌশলপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকদের নেতৃত্বে হওয়া উচিত।’

সভায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ার রাহমান বলেন, জুলাই ডিসেম্বরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। কর্মসংস্থান কমেছে। ভালো ব্যবসায়ীরাও সংগ্রাম করছেন; কারণ, সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ব্যবসার ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সরকার রাজস্ব ব্যয় বাড়াচ্ছে। কর কর্মকর্তাদের কমিশনের কথা বলা হচ্ছে, এটা বৈষম্যমূলক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়ক-নৌ-বিমান ও রেল এক মন্ত্রণালয়ে থাকা উচিত: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী