মামদানির জয় মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত
Published: 26th, June 2025 GMT
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানির বিস্ময়কর বিজয় মার্কিন রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ। বংশসূত্রে তিনি উগান্ডা-ভারতীয়। তাঁর এ জয় নিশ্চিত করে, বছরের পর বছর নীরবে নতুন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। একটি নতুন অভিবাসী শ্রমিক শ্রেণির প্রকাশ ঘটছে রাজনীতিতে, যার ভিত্তি সংগঠন, সংহতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জোরালো তৎপরতা। এর সবই ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। মামদানির প্রচারণায় ইচ্ছামতো বাসা ভাড়া বাড়াতে না পারা, সর্বজনীন শিশুযত্ন, গণপরিবহন ও সবুজ অবকাঠামোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা শহরজুড়ে বিভিন্ন জাতির শ্রমিক শ্রেণির জোটকে শক্তিশালী করেছিল। তাঁর বিজয়ে করপোরেট প্রভাব ও স্থানীয় দুর্নীতি প্রত্যাখ্যাত হলো এবং তা ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত অভিবাসীদের গড়ে তোলা রাজনীতির পক্ষে এক জোরাল সমর্থন। এই আন্দোলন কেবল নিউইয়র্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কংগ্রেসে শরণার্থী, সাবেক নিরাপত্তারক্ষী ও সোমালি অভিবাসীদের কন্যা ইলহান ওমর এই নতুন বামপন্থাকে ব্যাখা করতে সাহায্য করেছেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রাশিদা তালাইব, যিনি কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রথম ও একমাত্র ফিলিস্তিনি মার্কিন নারী।
তালাইব, ওমর ও মামদানি এমন একটি রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করেন, যা কেবল মার্কিন বৈষম্য দ্বারা নয়, বরং গ্লোবাল সাউথের অস্থিতিশীলতা, কঠোরতা ও দমনপীড়নের ব্যক্তিগত বা পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতা দ্বারা সুগঠিত। জনসাধারণের একটি বৃহত্তর পটভূমিতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। যেমন অভিবাসী হওয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজনীতিবিদরা বিদ্রোহী ডেমোক্রেটিক বামপন্থির মেরুদণ্ড গঠনে ভূমিকা রাখছে। অভিবাসনের এই সংস্করণটির কথা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনে নেই।
২০১৯ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিনিয়াপোলিসে একটি প্রচার সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। মিনিয়াপোলিস শহরজুড়ে বিপুলসংখ্যক সোমালি লোক বাস করে। সমাবেশে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ইলহান ওমর। পরিচিত ভাষাগত অলংকার মাথায় রেখে ট্রাম্প সতর্ক করেছিলেন, অভিবাসী ও শরণার্থীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বক্তব্যের নেপথ্য উদ্দেশ্য স্পষ্ট ছিল। এটি ছিল বিপুলসংখ্যক ভোটারদের প্রতি বিশেষ রাজনৈতিক বার্তা, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের জন্য, যারা দেশটির পতনের জন্য অভিবাসনকে দায়ী করেছিল। প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের ভাষণের মাত্র এক বছর আগে মিনিয়াপোলিসের উপকণ্ঠে অ্যামাজনে শোষণমূলক শ্রমনীতি প্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রমিক ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। মূলত সোমালি অভিবাসীদের নেতৃত্বে এসব পদক্ষেপ
নতুন একটি জাতীয় শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠতে অনুঘটক হিসেবে সাহায্য করেছিল। একটি গুদাম ঘর থেকে আন্দোলনের সূচনা এবং তা শিগগিরই ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য অ্যামাজন কারখানা ও শিল্পও তাদের অনুসরণ করে।
এই কারণেই মামদানির মেয়র পদে প্রাথমিক জয় এত তাৎপর্যপূর্ণ। ওমরের মতো ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি তিনি এক নতুন ধরনের নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন, যা জীবন্ত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে, তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠন দ্বারা পরিচালিত এবং জটিল নীতিকে ন্যায়বিচারের সরল দাবিতে রূপান্তর করতে সক্ষম। তাঁর প্রচারণা অর্থনৈতিক মর্যাদা, ভাড়াটেদের অধিকার, শিশুযত্ন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও ধনীদের ওপর কর আরোপে জোর দিয়েছিল, যার সবকিছুই শ্রমিক শ্রেণির জীবনের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। আফ্রিকান অভিবাসীদের কথাই ধরুন, যেখানে মামদানি ও ওমরের শিকড়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২.
নাইজেরিয়ার এন্ড এসএআরএস এবং উগান্ডার ওয়ার্ক টু ওয়ার্ক থেকে শুরু করে আরব বসন্ত ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিস মাস্ট ফল পর্যন্ত আফ্রিকান কর্মীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী সমালোচনা তুলে
ধরেছেন। এসব আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য সংগ্রামকে প্রভাবিত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান অভিবাসী অনেকের জীবন এই প্রতিরোধের ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। মামদানি ঋণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিউইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সঙ্গে শরিক হয়েছিলেন। মামদানি ও ওমর উভয়ে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া সম্প্রদায়ের কথা শুনে এবং তাদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছেন।
ট্রাম্প যুগের বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ এবং বৈষম্যের কবলে থাকা এ জাতির মধ্যে নতুন এই নেতারা আশাব্যঞ্জক বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরছেন। তারা অভিবাসী ও স্থানীয় বংশোদ্ভূত, মুসলিম ও অমুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও নতুন আগত আফ্রিকান এবং অন্যত্র থেকে আসা অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের বিদ্যমান বিভেদের মধ্যে সংহতি গড়ে তুলছেন। তাদের এই সংহতি আত্তীকরণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। বরং অভিজ্ঞতাসঞ্চিত সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
রাজনৈতিক তাত্ত্বিক কোরি রবিন সম্প্রতি বলেছেন, মামদানি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের ছাঁচে একজন ‘সুখী যোদ্ধা’। তিনি তীক্ষ্ণ, দৃঢ়; প্রকৃত বিতর্কে জড়াতে ভয় পান না। তিনি মুসলিম এবং দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের মাধ্যমে রূপান্তরিত একটি শহরে ও জাতির মধ্যে তাঁর গুরুত্ব আরও জোরাল করে তোলেন। তিনি আমূল পরিবর্তনকামী গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করেন, যা রক্ষণশীলরা ধরে রাখতে বা বুঝতে পারে না।
শন জ্যাকবস: নিউইয়র্ক সিটির দ্য নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক; আলজাজিরা
থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ওপর ভ ত ত ন উইয র ক ম মদ ন র কর ছ ল র জন ত ন র জন
এছাড়াও পড়ুন:
বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
ঢাকার সাভার উপজেলার সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার ভোরে আশুলিয়ায় বেরন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসটির অধিকাংশ আসন পুড়ে গেছে।
চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার যাত্রী পরিবহন শেষে রাতে আশুলিয়ার বেরন এলাকায় সড়কের পাশে গ্রামীণ পরিবহন নামের মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ভোর চারটার দিকে চালকের সহকারী বাসটি ধুয়েমুছে টয়লেটে যান। ফিরে এসে তিনি দেখেন বাসটিতে আগুন জ্বলছে। পরে আশপাশের লোকজন পানি দিয়ে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে গভীর রাতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন, তাপে চালক জেগে ওঠায় রক্ষা১ ঘণ্টা আগেচালক মো. পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি রাতেই ওই এলাকায় গাড়ি রাখি। এরপর ভোর পাঁচটায় গাড়ি বাইর করি। কাইল রাইতে হেলপার বাস পরিষ্কার কইরা ওয়াশরুমে গেছে, এরপর আইসা দেখে আগুন জ্বলতাছে। তখন পৌনে পাঁচটার মতো বাজে। বাসের সব সিট (আসন) পুইড়া গেছে। এটা ৩২ সিটের গাড়ি। দুই লাখ টাকার মতো ক্ষতি হইছে।’
দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হলেও কয়েকটি আসন পুড়ে গেছে বলে জানান আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যিনি বা যাঁরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’