দেশের বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর দিয়ে মাদক পাচার ঠেকাতে নেই পর্যাপ্ত নজরদারি। গুরুত্বপূর্ণ ১৬ বন্দরের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কার্যক্রম রয়েছে। তবে জনবল সংকটসহ আরও কিছু কারণে তারা পুরোদমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। বন্দর হয়ে বিভিন্ন রুটে চলে যাচ্ছে মাদকের চালান। এমন পরিস্থিতিতে মাদক পাচার রোধে ডিএনসির ‘পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক’ নামে নতুন ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

ডিএনসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদ সমকালকে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং কূটনৈতিক এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করে তুলতে ‘পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক’ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি অনুমোদন হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আরও গতি আসবে। এ ছাড়া কার্যকরভাবে মাদকদ্রব্য শনাক্ত করার সুবিধার্থে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন স্ক্যানার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।

ডিএনসি সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলায় সমুদ্রবন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিএনসির কার্যক্রম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব ইউনিট পরিচালিত হয়। তবে বন্দরের কার্যক্রম জেলা বা মহানগর কার্যালয়ের চেয়ে আলাদা। বন্দরগুলো সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা সময়সূচির বদলে বন্দরে তিন পালায় কাজ চলে। সেই সঙ্গে বন্দরগুলোয় কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, সিভিল এভিয়েশন, এপিবিএন, কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ের দরকার হয়। এ কারণে জেলা বা মহানগর কার্যালয়ের পক্ষে বন্দরে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা কঠিন। ফলে আলাদা একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। 

ডিএনসির এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান বেড়ে গেছে। মিথ্যা ঘোষণায় সমুদ্রবন্দর দিয়ে অ্যালকোহল এবং স্থলবন্দর দিয়ে ‘প্রিকারসর কেমিক্যাল’ (শিল্পের কাঁচামাল, যা দিয়ে মাদক তৈরিও সম্ভব) আমদানি করা হচ্ছে। দেশে বন্দরসংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের এ-সংক্রান্ত আলাদা ইউনিট আছে। অন্যান্য দেশেও বন্দরে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত দপ্তরের শক্তিশালী ইউনিট থাকে। কিন্তু দেশের বন্দরগুলোয় ডিএনসির কার্যক্রম নগণ্য। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা ও জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া কোকেনের মূল গন্তব্য ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। সংশ্লিষ্ট চোরাকারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোয় সহজে মাদক চোরাচালান সম্ভব হওয়ায় তারা এই রুট বেছে নেয়। এ কারণে নজরদারি বাড়াতে পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক ইউনিট গঠন করে প্রতিটি বন্দরে ডিএনসির কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আকাশপথে ইয়াবা পাচার বেড়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় ২৯ হাজার ৮৮৩ পিস ইয়াবা জব্দ করে ডিএনসি। এর অর্ধেকই এসেছে এপ্রিলের দুটি চালানে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিমানে আসা বড় চালান ধরা পড়ে। তখন এক মাসেই ২১ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএনসির অধীনে দেশের বিভিন্ন বন্দরে ২০টি ডিউটি ফ্রি শপ এবং ঢাকায় ছয়টি শুল্কমুক্ত বিদেশি মদের ডিপ্লোম্যাটিক ওয়্যারহাউস আছে। এসব শপ ও ওয়্যারহাউস ডিএনসি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পরিচালনার নিয়ম থাকলেও সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এগুলো থেকে প্রচুর বিদেশি মদ খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিপণন হচ্ছে। এতে বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
ঢাকায় ডিএনসির হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইউনিট থেকে পাঠানো ওই প্রস্তাবে পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক ইউনিটটি সংস্থার অপারেশন অধিশাখার অধীনে গঠনের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নতুন ইউনিট গঠনের আগে গোয়েন্দা ইউনিট বা যে কোনো ইউনিটের অতিরিক্ত পরিচালকের অধীনে বন্দরগুলোয় আভিযানিক কার্যক্রমের ক্ষমতা দেওয়া  যেতে পারে।
দেশের ১১টি বন্দরে এখনও ডিএনসির ইউনিট এবং নিয়মিত কার্যক্রম নেই। সেগুলো হচ্ছে– সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সাবাজার বিমানবন্দর (আন্তর্জাতিক হিসেবে চালু হতে যাচ্ছে), পায়রা সমুদ্রবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, আখাউড়া স্থলবন্দর, হিলি স্থলবন্দর, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, তামাবিল স্থলবন্দর, বুড়িমারী স্থলবন্দর, সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর। সব মিলিয়ে ১৬ বন্দরে ২৫০ জনের জনবল কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র টস অ য ন ড ড প ল ম য ট ক ইউন ট গঠন র র প রস ত ব ড এনস র নজরদ র পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন

ভারত আরও চারটি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ১৫ শতাংশের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা থাকলেও এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। তাই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাতে সমস্যা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ আছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে গতকাল সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি।

এদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আপগ্রেড হচ্ছে সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, সক্ষমতা বাড়ছে বিএসইসির
  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
  • ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন
  • গাজীপুরের পাঁচ এলাকায় বেপরোয়া অপরাধীরা, বাসিন্দারা আতঙ্কে
  • বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ ভারতের