মাদক পাচার ঠেকাতে বন্দরে নেই নজরদারি
Published: 27th, June 2025 GMT
দেশের বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর দিয়ে মাদক পাচার ঠেকাতে নেই পর্যাপ্ত নজরদারি। গুরুত্বপূর্ণ ১৬ বন্দরের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কার্যক্রম রয়েছে। তবে জনবল সংকটসহ আরও কিছু কারণে তারা পুরোদমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। বন্দর হয়ে বিভিন্ন রুটে চলে যাচ্ছে মাদকের চালান। এমন পরিস্থিতিতে মাদক পাচার রোধে ডিএনসির ‘পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক’ নামে নতুন ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডিএনসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদ সমকালকে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং কূটনৈতিক এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করে তুলতে ‘পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক’ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি অনুমোদন হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আরও গতি আসবে। এ ছাড়া কার্যকরভাবে মাদকদ্রব্য শনাক্ত করার সুবিধার্থে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন স্ক্যানার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিএনসি সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলায় সমুদ্রবন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিএনসির কার্যক্রম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব ইউনিট পরিচালিত হয়। তবে বন্দরের কার্যক্রম জেলা বা মহানগর কার্যালয়ের চেয়ে আলাদা। বন্দরগুলো সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা সময়সূচির বদলে বন্দরে তিন পালায় কাজ চলে। সেই সঙ্গে বন্দরগুলোয় কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, সিভিল এভিয়েশন, এপিবিএন, কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ের দরকার হয়। এ কারণে জেলা বা মহানগর কার্যালয়ের পক্ষে বন্দরে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা কঠিন। ফলে আলাদা একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ডিএনসির এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান বেড়ে গেছে। মিথ্যা ঘোষণায় সমুদ্রবন্দর দিয়ে অ্যালকোহল এবং স্থলবন্দর দিয়ে ‘প্রিকারসর কেমিক্যাল’ (শিল্পের কাঁচামাল, যা দিয়ে মাদক তৈরিও সম্ভব) আমদানি করা হচ্ছে। দেশে বন্দরসংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের এ-সংক্রান্ত আলাদা ইউনিট আছে। অন্যান্য দেশেও বন্দরে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত দপ্তরের শক্তিশালী ইউনিট থাকে। কিন্তু দেশের বন্দরগুলোয় ডিএনসির কার্যক্রম নগণ্য। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা ও জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া কোকেনের মূল গন্তব্য ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। সংশ্লিষ্ট চোরাকারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোয় সহজে মাদক চোরাচালান সম্ভব হওয়ায় তারা এই রুট বেছে নেয়। এ কারণে নজরদারি বাড়াতে পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক ইউনিট গঠন করে প্রতিটি বন্দরে ডিএনসির কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আকাশপথে ইয়াবা পাচার বেড়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় ২৯ হাজার ৮৮৩ পিস ইয়াবা জব্দ করে ডিএনসি। এর অর্ধেকই এসেছে এপ্রিলের দুটি চালানে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিমানে আসা বড় চালান ধরা পড়ে। তখন এক মাসেই ২১ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএনসির অধীনে দেশের বিভিন্ন বন্দরে ২০টি ডিউটি ফ্রি শপ এবং ঢাকায় ছয়টি শুল্কমুক্ত বিদেশি মদের ডিপ্লোম্যাটিক ওয়্যারহাউস আছে। এসব শপ ও ওয়্যারহাউস ডিএনসি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পরিচালনার নিয়ম থাকলেও সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এগুলো থেকে প্রচুর বিদেশি মদ খোলাবাজারে অবৈধভাবে বিপণন হচ্ছে। এতে বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
ঢাকায় ডিএনসির হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইউনিট থেকে পাঠানো ওই প্রস্তাবে পোর্টস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাটিক ইউনিটটি সংস্থার অপারেশন অধিশাখার অধীনে গঠনের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নতুন ইউনিট গঠনের আগে গোয়েন্দা ইউনিট বা যে কোনো ইউনিটের অতিরিক্ত পরিচালকের অধীনে বন্দরগুলোয় আভিযানিক কার্যক্রমের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।
দেশের ১১টি বন্দরে এখনও ডিএনসির ইউনিট এবং নিয়মিত কার্যক্রম নেই। সেগুলো হচ্ছে– সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সাবাজার বিমানবন্দর (আন্তর্জাতিক হিসেবে চালু হতে যাচ্ছে), পায়রা সমুদ্রবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, আখাউড়া স্থলবন্দর, হিলি স্থলবন্দর, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, তামাবিল স্থলবন্দর, বুড়িমারী স্থলবন্দর, সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর। সব মিলিয়ে ১৬ বন্দরে ২৫০ জনের জনবল কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র টস অ য ন ড ড প ল ম য ট ক ইউন ট গঠন র র প রস ত ব ড এনস র নজরদ র পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন
পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি