কারো মৃত্যু সংবাদ পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোদাল, দা, চাকু, স্কেল আর করাতসহ কবর খোঁড়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ মনু মিয়া।

শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মনু মিয়ার চাচাতো ভাই আবদুর রউফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনু মিয়া। গত ১৪মে তাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এক রকম মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা হয়েছিল তার। তারপর বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর নিজ গ্রামে ফেরেন। এরপর ভালই ছিল, হঠাৎ তিনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন জানা যায় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরপর আজ সকালে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মনু মিয়া কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কারো কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ নিতেন না। এমনকি খাবারের বেলায়ও ছিল তার একই নিয়ম। নিজের বাড়ি থেকে খেয়ে রওনা না হতে পারলে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েও খেতেন নিজ খরচে।

মনু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামে। তার জন্ম ১৯৫২ সালের ১৫ মার্চ। কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করছিলেন ১৯৭২ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি খবর খুঁড়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মনু মিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেসময় মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ডোবায় মনু মিয়ার ঘোড়াটির মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন।

ধারণা করা হয়, ঘোড়াটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা যায় ঘোড়াটি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে স্ত্রী ও স্বজনরা তার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন।

ঢাকা/রুমন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা

অন্য সব দিনের মতোই গত শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়েছিলেন জাকির শেখ। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় হঠাৎ স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি জাকিরের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঘর থেকে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের খোলা স্থানে। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন কিছু উৎসুক জনতা। তাঁর দুই চোখ খেজুরের কাঁটা আর সুই দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।

জাকির শেখের (৫০) বাড়ি মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকায়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তাঁর দুটি চোখেই ভয়াবহ ক্ষত। চোখ দুটি পুরোপুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাকিরের চোখে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসক।

একই ঘটনায় পিটুনির শিকার আরও দুজন মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

জাকির শেখের বড় মেয়ে এনি আক্তার (২০) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা ভালো নয়। ডাক্তার বলেছেন, তাঁর চোখের ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আব্বুর চোখে বড় অপারেশন আজ হইছে। আব্বুর সঙ্গে আমি আছি। আমার আব্বুকে যারা চুরির মিথ্যে অপবাদ দিয়ে এই অবস্থা করেছে, তাদের বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকার কয়েকটি বাড়িতে সম্প্রতি ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর ‘স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে’ এলাকায় নিয়মিত পাহারায় বসেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বাবুল শিকদার (২৫) নামের এক যুবক তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে চোর সন্দেহে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে আটক করেন। বাবুল একই ইউনিয়নের রায়েরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে বাবুলকে উদ্ধারে তাঁর এক আত্মীয় ইস্রাফিল মাতুব্বর (৪০) গেলে তাঁকেও আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর চোর সন্দেহে দুজনকে রাতভর মারধর করা হয়। এরপর জাকির শেখের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে পিটুনি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

জাকির শেখের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থায়ীয় কোহিনুর মাতুব্বর, কামাল, সজীব, ওমর, শফিকুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।

অভিযুক্ত কোহিনুর মাতুব্বর ও কামাল হোসেন বলেন, ‘চোর সন্দেহে প্রথম যাকে ধরা হইছে, তার স্বীকারোক্তিতে ছিল জাকির শেখের নাম। এখানে চোরদের সঙ্গে আমাদের কিসের শত্রুতা। এগুলো বলে ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ছিঁচকে চোরের আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে গণপিটুনি দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা ক্ষোভ থেকে কাউকে আঘাত করা হয়নি।’

ফেরিওয়ালা জাকিরকে নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চেয়ে সন্তানদের নিয়ে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে মাদারীপুর শহরের একটি বাসায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে জীবনসংগ্রামে নামা সেই বাবা পেলেন রিকশা
  • কুষ্টিয়ায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার
  • মালয়েশিয়ায় আরো বাংলাদেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন: আশা প্রধান উপদেষ্টার
  • ১০ বছরের ছেলেকে বিমানবন্দরে রেখেই বেড়াতে যাচ্ছিলেন বাবা-মা, এরপর
  • ‘বিদায় দেওয়ার সময় বলেছেন, দুজন গাড়িতে ঘুমাবেন, আর ফোন ধরেননি’
  • স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে গুগলের জেমিনি এআই
  • প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে, মুসলিম হয়ে করলেন বিয়ে 
  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
  • শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
  • ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা