‘ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআইয়ের বিরাট ভূমিকা থাকবে’
Published: 28th, June 2025 GMT
চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ‘রিজিওনাল সামার সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাইছার রহমান মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআইয়ের একটা বিরাট ভূমিকা থাকবে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের রাজশাহীর সদস্যসচিব মোহাম্মদ আখতারুল ইসলাম।
রোগনির্ণয়ে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক সাইয়েদুর রহমান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ ও ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আরিফুল বাশার।
সম্মেলনে প্রবন্ধ ও অন্য বক্তাদের কথায় উঠে আসে, এআই চিকিৎসকদের জন্য একটা পরিপূরক ব্যবস্থা হবে। যন্ত্রকে যদি আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, অসংখ্য বইপত্র, মেডিকেল জার্নাল ইনপুট দেওয়া যায়, তাহলে সেসব পড়ে সেখান থেকে একটা উত্তর দিতে পারবে এআই। একটা জটিল রোগীর কেস হিস্ট্রি দিলে সে তা বিশ্লেষণ করে রোগনির্ণয় করে দিতে পারবে। পরবর্তী ব্যবস্থাপত্র কী হতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। এই ক্ষমতা এআইয়ের ইতিমধ্যে হয়েছে। তাকে যদি একটা ছবি, একটা এক্স-রে ফিল্ম, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান ফিল্ম দেওয়া যায়, সে রোগনির্ণয় করে দিতে পারবে। ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এআইয়ের একটা বিরাট ভূমিকা থাকবে।
এআইয়ের ভুল করার আশঙ্কা নিয়ে বক্তারা বলেন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করবে এআইয়ের ভুল করার মাত্রা। চিকিৎসকেরা এমন তথ্য এআইকে দিলেন, যিনি দিচ্ছেন, তাঁর হয়তো এটা পক্ষপাত আছে। তখন এআই তার মতো করে তথ্য দেবে। যেমন চীনের বিশেষজ্ঞরা একটা এআই হাসপাতাল করেছে, সেটার সফলতার হার ৯৩ শতাংশ। তার মানে ৭ শতাংশ ভুল করছে। এই যে ভুলের হার ধীরে ধীরে কমে আসবে। যত দিন যাবে, তত বেশি তথ্য তাঁরা এআইকে দিতে পারবেন, তখন তত বেশি হালনাগাদ হবে এআই। তবে এ জন্য সব সময় তার পাশে মানুষকে লাগবে। মানুষকে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বক্তারা বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা অনেক উদাহরণ পেয়েছেন। যেমন একটা এআই আছে, যার কাজ হচ্ছে মানুষের শরীরের ক্ষত আছে কি না, সে সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া; কিন্তু কয়েক জায়গায় এআই অকৃতকার্য হয়েছে। এই মুহূর্তে একটা অ্যাপ আছে, যে ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। কয়েকটি জায়গায় সে ভুল করেছে। যেহেতু দক্ষ মানুষ তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল, তাঁরা সেটা ধরে ফেলেছেন। যত দিন যাবে, এই ভুলের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে। ভবিষ্যতে মানুষ ও এআই মিলে একটা সুপার ফিজিশিয়ান তৈরি করা যাবে বলে বক্তারা আশা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র ম হ ম মদ এআইয় র বক ত র ভ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
আঁকিবুঁকি আর নয়: ভারতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত
কি–বোর্ডে লেখালেখির যুগে এসে হাতের লেখার গুরুত্ব কি এখনো আছে? ভারতের আদালতের মতে, হ্যাঁ, যদি লেখক হন একজন চিকিৎসক।
ভারতসহ সারা বিশ্বেই চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে রসিকতা চলে। বলা হয়, তাঁদের লেখা শুধু ফার্মেসির কর্মীরাই বুঝতে পারেন। তবে সম্প্রতি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাঁদের আদেশে চিকিৎসকদের হাতের লেখা স্পষ্ট করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
তবে অবাক হলেও সত্য, হাতের লেখার কোনো সম্পর্ক ছিল না, এমনই একটি মামলায় এ রায় দিয়েছেন আদালত। একজন নারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন। বিচারপতি জশগুরপ্রীত সিং পুরি ওই ব্যক্তির জামিন আবেদনের শুনানি করছিলেন।
নারীর অভিযোগ ছিল, আসামি সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। ভুয়া সাক্ষাৎকারও নেন এবং তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালান।
আসামি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক হয় এবং অর্থ নিয়ে বিবাদ থেকে এ মামলা করা হয়েছে।
বিচারপতি পুরি জানান, তিনি যখন ওই নারীর চিকিৎসা–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখেন, তখন সেটি একেবারেই দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন একজন সরকারি চিকিৎসক।
রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।‘এমনকি একটি শব্দ বা অক্ষরও পাঠযোগ্য ছিল না। বিষয়টি আদালতের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে’, রায়ে লিখেছেন বিচারপতি।
বিবিসি যে রায়ের অনুলিপি দেখেছে, তাতে সেই প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের দুই পাতার প্রেসক্রিপশন রয়েছে। প্রেসক্রিপশনের লেখা এতটাই অস্পষ্ট যে কিছুই বোঝা যায় না।
আরও পড়ুনপ্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী করার বিষয়ে নির্দেশ০৯ জানুয়ারি ২০১৭বিচারপতি পুরি লিখেছেন, ‘প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।’
আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে হাতের লেখা উন্নত করার পাঠ যুক্ত করতে। সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন চালুর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। তত দিন সব চিকিৎসককে বড় হাতের অক্ষরে স্পষ্টভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।জশগুরপ্রীত সিং পুরি, ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতিভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সভাপতি দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, সমস্যার সমাধানে তাঁরা সহায়তা করতে ইচ্ছুক। আইএমএর সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
ভানুশালী বলেন, শহর ও বড় নগরে অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনে চলে গেছেন। তবে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে এখনো স্পষ্ট করে লেখা প্রেসক্রিপশন পাওয়া খুবই কঠিন।
আরও পড়ুন'প্রেসক্রিপশন লিখুন বড় হাতের অক্ষরে'১৩ জুন ২০১৫‘সবাই জানেন, অনেক চিকিৎসকের হাতের লেখা খারাপ। এর প্রধান কারণ, তাঁরা অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে ভিড়ে ঠাসা সরকারি হাসপাতালে’, বলেন ভানুশালী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি করে এবং এর ফল ভয়াবহ হতে পারে