জোহরানকে নিয়ে এখন থেকেই কেন এতটা অসহিষ্ণু ডোনাল্ড ট্রাম্প
Published: 30th, June 2025 GMT
নিউইয়র্ক নগরীর ডেমোক্র্যাটদলীয় মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি যদি নির্বাচিত হয়ে ‘যথাযথ আচরণ’ না করেন, তাহলে সেখানে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রোববার তিনি এই হুমকি দেন।
ফক্স নিউজ উপস্থাপক মারিয়া বার্টিরোমোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি জোহরানের জেতার কথা ভাবতেই পারছেন না। কারণ, তাঁর চোখে তিনি একজন ‘খাঁটি কমিউনিস্ট’।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ধরুন তিনি (জোহরান) মেয়র হয়ে গেলেন, আমি তখন প্রেসিডেন্ট থাকব। তাঁকে যথাযথভাবে কাজ করতেই হবে, না হলে তারা (নিউইয়র্ক) কোনো অর্থ পাবে না। তাঁকে ঠিকমতো চলতেই হবে, না হলে তারা কোনো অর্থ পাবে না।’
নগরের হিসাবরক্ষক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ পেয়েছে নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বাম ঘরানার ডেমোক্র্যাট নেতা জোহরান জোরালোভাবে বলেছেন, তিনি কমিউনিস্ট নন।
গতকাল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী এই তরুণ বলেন, ‘না, আমি কমিউনিস্ট নই।’
জোহরান আরও বলেন, তিনি ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন তাঁর চেহারা, বাচনভঙ্গি, তিনি কোথা থেকে এসেছেন, তাঁর পরিচয় কী—এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। কারণ, তিনি (জোহরান) যেসব বিষয়ের জন্য লড়ছেন, সেগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে চাইছেন ট্রাম্প।
জোহরানের অনুপ্রেরণা হলেন মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। যিনি বলেছিলেন, ‘আপনি একে গণতন্ত্র, ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজম—যে নামেই ডাকেন না কেন, এই দেশে ঈশ্বরের সব সন্তানের জন্য সম্পদের সঠিক বণ্টন দরকার।’
গতকাল ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাটদলীয় নিউইয়র্ক নগরের মেয়র প্রার্থী আবারও বলেন, তিনি নিউইয়র্কের শীর্ষ ধনীদের ওপর কর বাড়াতে চান। এটি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ।
জোহরান বলেন, ‘আমার মনে হয় না সমাজে বিলিয়নিয়ার থাকা উচিত। সত্যি কথা বলতে, এখন সমাজে যেভাবে বৈষম্য বাড়ছে, সেখানে এত টাকা কারও হাতে থাকা ঠিক নয়। আমাদের দরকার নগরজুড়ে, অঙ্গরাজ্যজুড়ে, দেশজুড়ে আরও বেশি সমতা প্রতিষ্ঠা করা।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প
যৌন নিপীড়নকারী কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বানের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রয়াত এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতেই গতকাল শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ আহ্বান জানান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান চেজ এবং হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। ল্যারি সামারস ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এপস্টেইনের নতুন একগুচ্ছ ই-মেইল প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম এসেছে। এতে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই-মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলো এপস্টেইন পাঠিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ওইসব ই–মেইল লিখেছিলেন।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও জোরপূর্বক যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই–মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।
শিশুদের যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও নারী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এপস্টেইন ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ছুটি কাটাতে ফ্লোরিডা যাওয়ার সময় ট্রাম্প উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের এটা অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। বহু বছর ধরে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল।’
নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টএ বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পকে বারবার এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
২০১৯ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নারী পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিচার প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে পরে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমন একটি যৌন চক্র চালাতেন, যেখানে কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মের জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হতো।
আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআইকে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল ক্লিনটন, ল্যারি সামারস, রেইড হফম্যান, জে পি মরগ্যান চেজ এবং আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবেন।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।’
আরও পড়ুনএকই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫