নিউইয়র্ক নগরের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি গতকাল রোববার তাঁর ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিজম’ বা ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’-এর পক্ষে কথা বলেছেন। জোহরানের দাবি, তিনি অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা পুরো ডেমোক্রেটিক পার্টির আদর্শ হওয়া উচিত।

গতকাল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বামঘেঁষা জোহরান এ কথা বলেন। যদিও ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা এখনো জোহরানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।

এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জোহরান বলেন, নিউইয়র্কের শীর্ষ ধনী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর কর বাড়ানোর যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, তা একদিকে যেমন বাস্তবসম্মত, তেমনি শহরের শ্রমজীবী মানুষের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিনা মূল্যে বাস সেবা, ঘণ্টায় ৩০ ডলার ন্যূনতম মজুরি দেওয়া এবং ভাড়া স্থিতিশীল রাখা।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পরাজিত হয়। রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের দুই অংশই এখন রিপাবলিকানদের দখলে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এখনো ঠিক হালচাল বুঝে উঠতে পারছে না।

জোহরান বলেন, এটা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী দেশের সবচেয়ে ধনী শহর। অথচ প্রতি চারজন নিউইয়র্কবাসীর একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন। আর বাকিরা একধরনের দুশ্চিন্তার জালে আটকে আছেন।

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাই পর্বের ভোট হয়। নিউইয়র্ক নগরের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি সাবেক ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে বড় জয় পেয়েছেন।

জোহরানের জয়ের পর ডেমোক্র্যাট দলের একাংশের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকে মনে করছেন, জোহরানের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের চিন্তাধারা রিপাবলিকানদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিতে পারে। এতে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটদের ‘অতি বামপন্থী’ হিসেবে আক্রমণ করার সুযোগ পাবে রিপাবলিকানরা।

জোহরানের অর্থনৈতিক নীতিগুলো নিয়ে ব্যবসায়ী মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পরাজিত হয়। রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের দুই অংশই এখন রিপাবলিকানদের দখলে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এখনো ঠিক হালচাল বুঝে উঠতে পারছে না।

রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট সদস্য মনে করেন, দলে নতুন নেতৃত্ব দরকার এবং দলের উচিত এখন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।

গতকাল সকালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস এবিসির ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি এখনই জোহরানকে সমর্থন দিচ্ছেন না। জোহরানের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি আরও বিস্তারিত জানতে চান।

এ ছাড়া ডেমোক্র্যাট পার্টির নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল, সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাট নেতাও এখন পর্যন্ত জোহরান মামদানিকে সমর্থন দেননি।

নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজের ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস উইথ মারিয়া বার্টিরোমো’ অনুষ্ঠানে বলেন, জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁকে ঠিকঠাকমতো চলতে হবে। না হলে নিউইয়র্ক শহরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে যাবে।

সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন জোহরান মামদানি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প বল ক ন ন উইয র ক অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন মোদি, ট্রাম্পের সঙ্গে কি বৈঠক হবে

আগামী মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই অবসরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্ক গেলে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সফর ঘিরে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এই সফর নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। সরকারি সূত্রের বরাতে সফর সম্ভাবনার খবর করেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সও সরকারি ওয়াকিবহাল সূত্র মারফত পাওয়া খবরে জানিয়েছে, সরকারিভাবে এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রতিবছর সাধারণ পরিষদের বিতর্কে প্রতিটি দেশই তাদের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের জন্য সময় আগে থেকে নির্দিষ্ট করে রাখে। সেই অনুযায়ী এবার ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নির্ধারিত করা রয়েছে। সম্মেলন ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।

অনেক সময় পরিস্থিতির বিচারে বক্তা তালিকায় পরিবর্তন করা হয়। সূত্রের কথায়, প্রধানমন্ত্রী মোদি নিউইয়র্ক যাবেন কি না, তা ঠিক করার সময় এখনো আসেনি।

ভারতীয় রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার অপরাধে ‘জরিমানা’ হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়। অর্থাৎ মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। বন্ধু ট্রাম্পের কাছ থেকে এটা ভারত প্রত্যাশা করেনি। ২৭ আগস্ট থেকে ওই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।

যুক্তরাষ্ট্র অনড় থাকলে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সম্মানজনক না হলে সম্পর্কের হাল কী হতে পারে, সেই জল্পনায় ভারতের নীতিনির্ধারকেরা এখনই প্রস্তুত নন। এটুকু বোঝা যাচ্ছে, সফর হবে কি না, তা নির্ভর করবে এই সময়ের অন্যান্য ঘটনার ওপর।

মোদি এই মাসের শেষের দিকে জাপান যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বুধবার গণমাধ্যমকে তা জানিয়েও দিয়েছেন। জাপান থেকে মোদি যাবেন চীনের তিয়ানজিন শহরে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে মোদির আলাদাভাবে বৈঠক হবে।

চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে নিউইয়র্কে মোদি–ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনা। তিয়ানজিনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন বসছে ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর।

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর আমন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁকে পাশে বসিয়ে ট্রাম্প ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ বললেও সম্পর্ক জোরদারের একাধিক বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের কারণে ভারতকে প্রবলভাবে আশাহত হতে হয়।

ভূরাজনৈতিক সমীকরণের দিকে দৃষ্টি রেখে ভারতও তাই এখন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথে এগোচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। ট্রাম্পের হুমকি অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা মধুর থাকবে, বলা কঠিন।

আপাতত সবার নজর আলাস্কায়। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সেখানে ১৫ আগস্ট ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে রুশ–ভারত সম্পর্ক এবং ভারতের তেল কেনার সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিবেচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আট বছর পর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ
  • বীরকে নিয়ে মিকি মাউসের খোঁজে শাকিব খান
  • জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন মোদি, ট্রাম্পের সঙ্গে কি বৈঠক হবে