এনবিআরের চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা করে প্রজ্ঞাপন জারি
Published: 30th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকার প্রকাশ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে রোববার এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিকে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড.
গেজেটে বলা হয়, যেহেতু সরকার অভিমত পোষণ করে যে, এনবিআরের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরি সরকারের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এবং সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা গতিশীল রাখার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৮ এর সেকশন ৩ এর ক্ষমতাবলে সরকার জনস্বার্থ রক্ষায় এনবিআর আওতাধীন সকল কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অভ্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করা হলো।
অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কোনো চাকরি বা কোনো শ্রেণির চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। কখন সেটি করতে পারবে, তা–ও বলা আছে এ আইনে। যেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এমন পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করা যাবে। এ ছাড়া জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে; জনগণের জন্য অসহনীয় কষ্টের কারণ হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমগ্র দেশ বা এর কোনো অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় হলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করা যাবে।
এ ধরনের ঘোষণা সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে প্রয়োজনে এ মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো যাবে। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার চাকরি অর্থ বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে বেতনসহ বা অবৈতনিক, দৈনিক ভিত্তিতে, ধার্য করা ফি বা সম্মানীভুক্ত চাকরিকে বোঝাবে।
অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষিত চাকরির ক্ষেত্রে সরকার ওই চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকা বা এলাকাগুলো ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদেশ দিতে পারবে। কোনো ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা আবশ্যক বিবেচনা করলে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দিয়ে এক বা একাধিক অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে সরকার।
সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেলে কী ধরনের শাস্তি দেওয়া যায়, তা–ও বলা আছে আইনে। চাকরিরত কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করতে বা চলমান রাখতে পারবেন না। কোনো প্রতিষ্ঠানে লকআউট বা লে-অফ ঘোষণা করা যাবে না। এ আদেশ অমান্য করলে অথবা অমান্য করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে প্ররোচিত করলে অথবা কাজ করতে বা কাজ চলমান রাখতে অস্বীকার করলে অথবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকলে বা চাকরি থেকে পরিত্যাগ করলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
অপরাধ অনুযায়ী, ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থারও সুযোগ আছে আইনে। এর আগে অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩ অনুযায়ী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয়সহ বর্তমানে ১৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা রয়েছে। এই ১৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে এখন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকেও অত্যাবশ্যক পরিষেবা করা হলো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর সরক র র র জন য হওয় র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ের গৌরবময় ঐক্যের বিপরীতে গোষ্ঠীস্বার্থের বিভক্তি
চব্বিশের জুলাইয়ের অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের পর বছর ঘুরে আবার এসেছে জুলাই। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ বিক্ষোভ, প্রতিরোধ ও জনবিস্ফোরণ যাবতীয় রাজনৈতিক সমীকরণ ভেঙে দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত-মার্কিন-চীন ইত্যাদি পরাশক্তির ভূমিকা, আওয়ামী লীগ কর্মীদের যুদ্ধংদেহী হিংস্র আচরণ কিংবা পুলিশ বাহিনীর চূড়ান্ত নৃশংসতা– কোনো কিছুই ছাত্র-জনতার দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ থামিয়ে রাখতে পারেনি। খণ্ড খণ্ড মিছিলে প্রতিদিন যুক্ত হতে থাকে ক্ষুব্ধ, অত্যাচারিত মানুষের ঢল।
৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে গুটিকয় শিক্ষার্থীর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে যে সমাবেশ শুরু, তা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে আকারে ও প্রত্যয়ে সুবিশাল হয়ে ওঠে। পর্যায়ক্রমে এই আন্দোলন দেশের ওপর চেপে বসা শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তিতে গর্জে ওঠে। স্বৈরাচারী সরকার নিজের দেশের মানুষের বুকেই নির্বিচারে গুলি ছোড়ে, অন্তত দেড় হাজার নিহত হন। চোখ-হাত-পাসহ নানা অঙ্গহানির শিকার হন আরও ২০ হাজার মানুষ। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা স্বৈরাচারের গুলিতে স্তব্ধ হয় না, এর প্রমাণ মেলে আরেকবার; যত গুলি ছোড়ে পুলিশ, মিছিলে মানুষ তত বাড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশকে পিছু হটতে হয়, মানুষের মিছিল সব কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে। ৫ আগস্ট মহাপরাক্রমশালী শেখ হাসিনার সরকার তাসের ঘরের মতো লুটিয়ে পড়ে; তিনি সরকারি হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। বিজয়ী মানুষের ঢল পৌঁছে যায় গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
চব্বিশের জুলাই কি কেবল শেষ পর্যন্ত সরকারবিরোধী বৃহৎ ও সফল আন্দোলনের স্মৃতিবাহী? না, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান প্রবল ক্ষমতাবানের চোখে চোখ রেখে সাধারণ মানুষের কথা বলবার অপ্রতিরোধ্য শক্তির অনন্য উদাহরণ। চীন থেকে দেশে ফিরে ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে চলমান ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘চাকরি মুক্তিযোদ্ধার নাতিরা পাবে; নাকি রাজাকারের নাতিরা পাবে!’ দাম্ভিক এই উক্তির ভেতরের তুচ্ছার্থে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীদের সুদীর্ঘ মিছিল বের হয় মধ্যরাতে। ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে? কে বলেছে?/ স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ সেই প্রথম রক্তচক্ষু শাসককে সরাসরি স্বৈরাচার হিসেবে প্রকাশ্যে উচ্চারণ করে ছাত্রসমাজ। এরপর দ্রুত ঘটনা ঘটতে থাকে। ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্র আবু সাঈদের বুকে সরাসরি গুলি করে পুলিশ। সেদিন ৬ ছাত্র নিহত হয় সারাদেশে। আন্দোলন ঘন হয়ে ওঠে। ছাত্রদের মিছিলে যুক্ত হতে থাকে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রবল ক্ষমতাবান সরকারের সকল অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ধমক-হুমকি-গুলি কোনো কিছুই আর দমিয়ে রাখতে পারেনি সম্মিলিত ছাত্র-জনতাকে। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ৯ দফা দাবি পেশ করে, যার প্রথমটি ছিল– নিজের বলা কথার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে শেখ হাসিনাকে।
ক্ষমতাকে এত বড় প্রশ্ন করবে সাধারণ মানুষ? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে দম্ভভরে বলেন, ‘এত বড় স্পর্ধা তারা পায় কোথায়?’ স্পর্ধা? দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সাধারণ নাগরিক যে টেবিলের এপ্রান্তে ওপ্রান্তে বসা দু’জন একই সমতলের মানুষ– এই সাধারণ ধারণাই ক্ষমতার দম্ভে তারা বিস্মৃত হয়েছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান কর্তৃত্ববাদী দম্ভের বিরুদ্ধে জনরায়, গুলি-হেলিকপ্টার-গ্রেপ্তার-ক্রসফায়ার-গুম-খুন-চাকরি খাওয়া ইত্যাদি দমনপীড়নে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখবার বিরুদ্ধে জনতার সুস্পষ্ট অবস্থান। এই অবস্থানের মানে সাহস। এই জনরায়ের মানে গণতন্ত্র, নিজের দেশে সব মানুষের মৌলিক অধিকার সমুন্নত করবার প্রতি জনতার অবিচল আকাঙ্ক্ষা।
২.
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই যদি অভ্যুত্থানজয়ী ছাত্ররা জুলাই সনদ তৈরি করে তাতে অটল থাকতে সমর্থ হতো, তবে বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংশয় সৃষ্টি হয় না। সম্ভবত আন্দোলনরত ছাত্ররা নিজেরাই জানত না, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে! অথবা ঘটনার প্রবহমানতা এতই তীব্র ও অবিশ্বাস্য ছিল যে, তাদের পক্ষে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই সরকার ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করে। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কমিশনের সুপারিশের কোন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত কিংবা ভিন্নমত, তা আলোচনার মাধ্যমে অদ্যাবধি সমাধানের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও সংশয়।
জুলাই সনদের আলোচনার মূলে রয়েছে প্রচলিত রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামো এবং পদ্ধতির মধ্যে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতন্ত্রের পথ বিস্তৃতকারী বিধিগুলো বাদ দিয়ে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। আরও সহজ করে বললে, সরকারের প্রধান ব্যক্তি যেন নিজেকে রাজা মনে না করেন, তার উপায় বের করে কিছু বন্দোবস্ত বিহিত করা। যতই বিধি-বিধান তৈরি হোক, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ক্রিয়াশীল না হলে জবাবদিহি দৃশ্যমান হয় না। সুনির্দিষ্ট সময় অন্তর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদে প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্তের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ অবারিত হয়। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির কূট ক্যাচালে নির্বাচন অনিশ্চিত করে, ঢাকঢাক গুড়গুড়ের নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে যেনতেনভাবে ক্ষমতা দীর্ঘ করবার বাসনা সাফল্য পেলে; তাতে যে সনদই তৈরি হোক না কেন, জুলাইয়ের শক্তি ও প্রেরণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথনকশা সরকার দ্রুত দেবে– এ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে ন্যূনতম
ঐক্য তৈরি হলে নির্বাচন-উত্তর সংসদে পরবর্তী ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে আলোচনা ও সমাধান করা সম্ভব।
৩.
যদিও প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে দূরত্ব অনেক, আমরা জানি। একে-তাকে ফ্যাসিস্টের সহযোগী শনাক্ত করে মব সন্ত্রাস থেকে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাই, ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্যে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯টি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে। পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে ৫৮৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৯ হাজার ১০০। ৩০ জুন সমকালে ধর্ষণ-সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের তালিকা: (ক). মুরাদনগরে নিপীড়নের শিকার নারীর আকুতি: সম্মান গেছে, এখন দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই, (খ) গাইবান্ধায় শিশুকে ধর্ষণ, পিটুনিতে নিহত অভিযুক্ত, (গ) নোয়াখালীর হাতিয়ায় কিশোরীকে পাঁচ মাস আটকে ধর্ষণ, (ঘ) চট্টগ্রামে কিশোরীকে ধর্ষণ, (ঙ) ফেনীর দাগনভূঞায় যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগরের নারীকে ধর্ষণের পর মারধর করে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে কয়েকজন।
সংবাদপত্রের দপ্তর পর্যন্ত যে সংবাদগুলো পৌঁছুতে পেরেছে, সেগুলো পড়েই মনে হয়, দেশ কি আদিম অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে? রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ অপরাধ সংঘটনে প্রধান ভূমিকা রাখে, বর্তমানে আদিম যাবতীয় কর্মকাণ্ড গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে ম্লান করে দেয়। সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধ দমনে সরকারের অকর্মণ্য আচরণ যেমন প্রশ্ন জাগায়, অভীষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের দোদুল্যমানতা একই সঙ্গে উদ্বেগ তৈরি করে। জুলাইয়ের সুস্পষ্ট প্রত্যয় ও সাহসের সঙ্গে সরকারের এই আচরণ বেমানান। একইভাবে সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অনাস্থা গণঅভ্যুত্থানের অসামান্য শক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল ও সাহিত্যিক
mahbub aziz01@mail.com