পাহাড়ে ছয় মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ১০৩টি
Published: 2nd, July 2025 GMT
পাহাড়ে গত ছয় মাসে ১০৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩১৫ জন পাহাড়ি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার, ৩০ জন ম্রো শিশু ধর্মান্তরিত ও ৩০০ একর ভূমি দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি ধর্ষণ, হত্যা এবং ১৬ জন নারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০৩টি ঘটনার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ৪৮টি সংঘটিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২৫ জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। ১৯ জনকে সাময়িক আটক, ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার, ৯ জন মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের চেষ্টা, উত্ত্যক্তকরণ, প্রতারণার ১৫টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের দ্বারা অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মারধর, হত্যা, গুলিতে আহত, তল্লাশি, হত্যার হুমকি, টাকা ও মোবাইল ছিনতাই, চাঁদা দাবির ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩ জনকে হত্যাসহ ৯৫ জন ও ৫টি গ্রামের অধিবাসী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। এর মধ্যে গত ১৫ মে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক লালত্লেং কিম বম (৩০) নামে এক বম হাজতি চিকিৎসার অভাবে মারা যান। সংময় বম নামে আরও একজন গুরুতর অসুস্থ হলে জামিন পাওয়ার একদিন পর ১ জুন মারা যান।
প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে এক প্রকার দেউলিয়া হয়েছে। তবে অপহরণ, মুক্তিপণ ও চাঁদা আদায়, চুক্তির পক্ষের নিরীহ লোকজনকে হত্যা, সাধারণ গ্রামবাসীকে মারধর, হয়রানিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম জোরদার করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা আসার ১১ মাসেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন বা অগ্রগতি হয়নি। পাহাড়িদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিপীড়ন ও বঞ্চনা অবসানে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকর ও আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ নেই।
প্রতিবেদনে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনটির মুখমাত্র অংগ্য মারমা সমকালকে বলেন, ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে গণমানুষের দাবি আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রামের সংগঠন। তবে দেউলিয়া হলো কিনা, না হলো সেটা বুঝা যায় গণমানুষকে নিয়ে কীভাবে সংগ্রাম করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, জনসংহতি সমিতি মানবাধিকার বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং ও ডকুমেনটেশন করে থাকে। এ প্রতিবেদনে মূল সোর্স স্থানীয় লোকজন। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন সোর্স ও ডকুমেনটশনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। তবে আমরা মনে করেছিলাম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব ঘটনা কমবে। কিন্তু আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। আদিবাসী নারীরা ঘরে ও ঘরের বাইরে মোটেই নিরাপদ নয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরল জেএসএস
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় গত ছয় মাসে ১০৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। একই সময়ে পাহাড়িদের ৩০০ একর ভূমি দখল করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী এই আঞ্চলিক দলটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে জেএসএস। আজ মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১০৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ৩১৫ জন পাহাড়ি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩০ শিশুকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।
জেএসএস বলেছে, দীর্ঘ ২৭ বছরেও চুক্তির দুই–তৃতীয়াংশ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়নি। চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারেরও আন্তরিক কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ১২ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠনের পর প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত হলেও উক্ত কমিটির কোনো বৈঠক এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে সব পথ ও অপশক্তিকে ব্যবহার করে চলেছে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন পাঠান জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা।