রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু, যারা স্কুলে পড়তে গিয়েছিল। এ ঘটনায় পুরো জাতি ব্যথিত। আমাদের সন্তানদের এমন মৃত্যুও দেখতে হলো।
এ ঘটনায় প্রথম প্রশ্ন আসে যে এমন জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এর জবাব চাই। জনবহুল এলাকায় যেকোনো কাজ করতে গেলে একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের চিন্তা করা উচিত, সম্ভাব্য পরিণতি কী কী হতে পারে। কারণ, বিমান প্রশিক্ষণের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছে কেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে কোন এলাকায় কী কী থাকবে, নগরের পরিকল্পনা কী হবে, তা বলে আসছেন। সে অনুযায়ী কিছুই করা হয়নি। বলা হচ্ছে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর দিয়ে নিয়মিত বিমান ওঠানামা করে।
দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই। এবার দুর্ঘটনা ঘটল। তাই এটাকে শুধু দুর্ঘটনা বলা ঠিক হবে না, এটা পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার ফল।
জনবহুল এলাকায় যেকোনো কাজ করতে গেলে একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের চিন্তা করা উচিত, সম্ভাব্য পরিণতি কী কী হতে পারে। কারণ, বিমান প্রশিক্ষণের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই।দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি, ভিডিও ও নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে মৃত্যুর সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। অতীতে আমরা এ ধরনের ঘটনায় লুকোচুরি ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা দেখেছি। তথ্য ও পরিসংখ্যান দ্রুত দেওয়া জরুরি।
আমরা দেখলাম, রাত তিনটার দিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (মঙ্গলবারের) স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হলো। জনগণের পরিস্থিতি, জনগণের বেদনা, জনগণের ক্ষতির প্রতি সরকার দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। বরং খামখেয়ালি আচরণ করেছে। এসব বিগত সরকারের সময় নিয়মিত হতো। এই সরকারের সময় এ ধরনের কার্যকলাপ গ্রহণ করতে পারি না।
এর আগেও দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সময় লাগে। আবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা পাল্টে যায়। জনগণের পক্ষে তো ভরসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছে কেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে কোন এলাকায় কী কী থাকবে, নগরের পরিকল্পনা কী হবে, তা বলে আসছেন। সে অনুযায়ী কিছুই করা হয়নি। বলা হচ্ছে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর দিয়ে নিয়মিত বিমান ওঠানামা করে।মাইলস্টোন স্কুলে সোমবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বিমান বিধ্বস্তে শিশুদের মৃত্যু একটা মর্মান্তিক ঘটনা। এমন ঘটনার পর মানুষ তো বিক্ষুব্ধ হবেই। মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে, আতঙ্কিত হবে; তাদের প্রতি সংবেদনশীল থাকতে হবে। তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা তো দায়িত্বশীল আচরণ নয়। আশা করব, সরকার এটা খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
সরকারের পক্ষ থেকে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ সহায়তা দিতে চাইলে ব্যাংক হিসাব নম্বর উল্লেখ করে একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটা মুছে দেওয়া হয়। এটা একটা হাস্যকর ও দায়িত্বহীন পদক্ষেপ। এসবের অবসান হওয়া দরকার। সরকারের কেন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য চাঁদা তুলতে হবে?
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর সোমবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। এর আগেও তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। অথচ স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাঁকে কেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা রাখা হয়েছে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তনের সূচনা বা অব্যবস্থাপনা ও অপচয় দূর করার কোনো পদক্ষেপ তো দেখা যায় না। সরকার কোন বিবেচনায় একেকজনকে দায়িত্ব দিচ্ছে, কিন্তু তাঁদের কোনো সক্রিয়তা দেখা যায় না, সেই জবাব চাই।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটির অন্যতম একটি কাজ হওয়া উচিত, যে বিমানগুলো প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো এখনো উড়ানের উপযোগী কি না, তা খতিয়ে দেখা। কোথাও কোনো বাত্যয় হয়েছে কি না, কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা–ও দেখতে হবে। থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
আগেও আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। পরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। এটা বিগত সরকারের সময় হয়েছে, আগের সরকারের সময় হয়েছে। এই সরকারের সময়ও আমরা একই ঘটনা দেখেছি। এমন চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত। দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই একই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে।
আনু মুহাম্মদ: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ম ন ব ধ বস ত সরক র র সময় দ র ঘটন র র ঘটন য় জনগণ র র পর ক এল ক য় র পর স র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাথে মিজান খন্দকারের মতবিনিময়
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত কমিটির সাথে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ মতবিনিময় সভা করেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিজান খন্দকার। সভায় নারায়ণগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন, নাগরিক সমস্যা এবং সমাজের দর্পণ হিসেবে গণমাধ্যমের গঠনমূলক ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
রবিবার (২৭ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় মিজান খন্দকার নব-নির্বাচিত কমিটিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
মতবিনিময়কালে মিজান খন্দকার বলেন, “গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে এবং জনগণের সমস্যা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। আমি নিজেও গণমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে দীর্ঘকাল কাজ করেছি।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) থেকে শুরু করে আমেরিকার টাইম টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে আমি দেখেছি একটি শহরকে উন্নত করতে গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা কতটা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধে গণমাধ্যমকর্মীরাই পারেন প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কর্তৃপক্ষ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। আমি আপনাদের এই পথচলায় একজন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতে চাই।” এবং আগামীতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবকে আমি আমার পাশে চাই।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ বলেন, “মিজান খন্দকারকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সবসময়ই একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম। আমরা শহরের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আমরা আশা করি, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে সবাই একযোগে কাজ করবে এবং আমরা সাংবাদিক হিসেবে সেই চিত্রই তুলে ধরব।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, যুগ্ম সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান জুয়েল, কার্যকরী পরিষদ সদস্য প্রণব কৃষ্ণ রায় এবং ক্লাব সদস্য এম আর কামাল, দিলীপ কুমার মন্ডল ও সাইফুল ইসলাম সায়েম প্রমুখ।
সভার শেষে ব্যক্তিগত আলোচনায় মিজান খন্দকার তার রাজনৈতিক ভাবনার কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।