হেভি মেটাল কিংবদন্তি ওজি ওসবার্ন মারা গেছেন
Published: 23rd, July 2025 GMT
রকসংগীতের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও স্বীকৃত মুখগুলোর একজন ওজি ওসবার্ন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তাঁর মৃত্যু হয়।
ওসবার্ন বিখ্যাত ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জন্ম দেন হেভি মেটাল ঘরানার ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘প্যারানয়েড’-এর মতো গান।
মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই নিজের শহর বার্মিংহামে জীবনের শেষ কনসার্টে গান করেন ‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ নামে পরিচিত ওসবার্ন। মঞ্চে ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা মেটালিকা, গানস এন’রোজেসসহ আরও অনেকে রক ব্যান্ডের কিংবদন্তি শিল্পীরা।
এক বিবৃতিতে ওসবার্নের পরিবার বলেছে, ‘এই খবর জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ওজি ওসবার্ন আজ (মঙ্গলবার) সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি ছিলেন ভালোবাসায় ঘেরা।’
ওসবার্নের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করা হয়নি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৯ সালে ওসবার্নের পারকিনসন রোগ ধরা পড়ে।
ব্ল্যাক সাবাথ থেকে একক ক্যারিয়ার
আসল নাম জন মাইকেল ওসবার্ন। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে নানা অস্থায়ী কাজ করেছেন তিনি। এমনকি চুরি করে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। এরপর তিনি ঝুঁকে পড়েন সংগীতের দিকে।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে গিটারিস্ট টনি ইয়োমি, বেসিস্ট গিজার বাটলার ও ড্রামার বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে গড়ে ওসবার্ন তোলেন ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথ।
ব্লুজঘেঁষা অথচ ভারী, ধীর ও গা ছমছমে সংগীতে উঠে আসে অতিপ্রাকৃত ইঙ্গিত, শুরু হয় হেভি মেটালের পথচলা। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ব্যান্ডটির ব্ল্যাক সাবাথ। এরপর একে একে আসে ‘প্যারানয়েড’, ‘মাস্টার অব রিয়েলিটি’র মতো বহু প্ল্যাটিনাম হিট।
১৯৭৮ সালে ব্যান্ড থেকে ছাঁটাই হলে ওসবার্ন শুরু করেন একক ক্যারিয়ার। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লিজার্ড অব অজ’ নামের অ্যালবাম। এই অ্যালবামে ছিল বিখ্যাত গান ‘ক্রেজি ট্রেইন’। পরের বছর আসে ‘ডায়েরি অব আ ম্যাডম্যান’। বিক্রি হয় ৫০ লাখ কপির বেশি।
রক তারকা থেকে রিয়েলিটি শোতে
মঞ্চে ওসবার্নের আচরণ ছিল পাগলামি দিয়ে ভরা। একটি কনসার্টে তিনি ভুল করে একটি জীবন্ত বাদুড়ের মাথা কামড়ে দেন, ঘটনাটি কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।
মাদকসেবন ও মদ্যপানের আসক্তির কারণে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন ওসবার্ন। এই আসক্তির অন্ধকার দিকও ছিল।
১৯৮৯ সালে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারনকে খুনের চেষ্টা করায় গ্রেপ্তার হন ওসবার্ন। আদালতের নির্দেশে ছয় মাস পুনর্বাসনে কাটাতে হয় তাঁকে। শ্যারন পরে মামলা না করায় দাম্পত্য জীবন টিকে যায়।
২০০০-এর দশকে এমটিভির রিয়েলিটি শো ‘দ্য ওসবার্নারস’ ওসবার্নকে এক ভিন্ন রূপে হাজির করে। ওসবার্ন বলেছিলেন, ‘মঞ্চে আমি যা করি, সেটা শুধু একটা অভিনয়। আমি আসলে একান্তেই পারিবারিক মানুষ।’
শেষ গান, বিদায় অনুভূতি
২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন ওসবার্ন। ২০২০ সালে জানান, তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত।
তবু ওসবার্ন বিদায়ী কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন। ৫ জুলাই বার্মিংহামের অ্যাস্টনের বাড়ির কাছের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে বসে শেষবারের মতো তিনি গাইলেন প্রিয় সব গান। কালো সিংহাসনে বসে, হাত নেড়ে, চোখ বড় করে—এক অনবদ্য বিদায় নেন তিনি।
কিংবদন্তির বিদায়
ওসবার্নের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন অনেক তারকা—রোনি উড (রোলিং স্টোনস), মেটালিকা, স্যামি হ্যাগার (ভ্যান হ্যালেন), ব্রায়ান মে (কুইন), এলটন জন, বিলি জো (গ্রিন ডে)।
এলটন জন বলেছেন, ‘ওজি ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু এবং রক সংগীতের পথিকৃৎ। তিনি থাকবেন গানের দেবতাদের অমর তালিকায়।’
ওসবার্ন রেখে গেছেন স্ত্রী শ্যারন, তাঁদের সন্তান অ্যাইমি, কেলি ও জ্যাক এবং নাতি-নাতনিদের। ওসবার্নের আগের সংসারের সন্তান জেসিকা, লুইস ও এলিয়টও আছেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।