গাজীপুরের কালীগঞ্জে তরুণদের সাহসীকতায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাতে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাদার্ত্তী গ্রাম থেকে তাকে আটক করেন একদল তরুণ।

আটক মাদক ব্যবসায়ীর নাম সজিব শেখ (২২)। তিনি ভাদার্ত্তী মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আরমান শেখের ছেলে।

আরো পড়ুন:

লেবু বাগানে চাষ হচ্ছিল গাঁজা, যুবক আটক

হবিগঞ্জে মদ খেয়ে ৪ জনের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তনিমা আফ্রাদ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস-পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস সড়কে সজিব শেখ মাদক বিক্রি করছিলেন। এ সময় সড়ক দিয়ে গ্রামের কয়েকজন তরুণ হেঁটে আসছিলেন। তাদের দেখে সজিব টর্চলাইট ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তরুণরা তাকে ধাওয়া দিলেলে সজিব আশপাশের ঝোপে লুকিয়ে পড়েন।

পরে ওই তরুণরা ঝোপে তল্লাশি চালিয়ে সজিবকে আটক করে থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে থানা হেফাজতে নেয়।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আলাউদ্দিন বলেন, “ভাদার্ত্তী গ্রামের তরুণরা একজন মাদক ব্যবসায়ীকে দৌড়ে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এটা অত্যন্ত সাহসী ও প্রশংসনীয় কাজ। যেখানে দেশের অনেক তরুণ আজ মাদকের শিকার, সেখানে এখানকার তরুণরা মাদকবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এটা সমাজের জন্য আশার আলো।”

ওসি বলেন, “তরুণ সমাজ যদি পুলিশের পাশে দাঁড়ায়, তবে মাদক ব্যবসায়ীদের ঠাঁই এ সমাজে হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম আরো জোরদার হবে।”

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সজিব শেখকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(৫) ধারায় ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “এ ধরনের সচেতন যুবসমাজ প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজন। তাদের মাধ্যমেই সমাজ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/রফিক/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ