দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো গুগলের ক্লাউড সেবা ‘ফায়ারবেস’-এ সংরক্ষণ করছিল ‘ক্যাটওয়াচফুল’ অ্যাপ। বিষয়টি গত মাসে গুগলকে জানায় প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ। অবশেষে এক মাস পর ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগে অ্যাপটির ফায়ারবেস অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে গুগল। এ বিষয়ে এক ই–মেইল বার্তায় গুগলের মুখপাত্র এড ফার্নান্দেজ বলেন, ‘আমরা ফায়ারবেস–সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং সেবার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট অ্যাপের অপারেশন স্থগিত করেছি।’

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ক্যাটওয়াচফুল অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ইনস্টল করলেই গোপনে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত বার্তা, ছবি, অবস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করত এবং সেগুলো গুগলের ফায়ারবেস সার্ভারে সংরক্ষণ করা হতো। গুগলের নিজস্ব নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, তাদের ক্লাউড সেবা কোনো ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা নজরদারি অ্যাপ চালানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তা সত্ত্বেও গুগলের ক্লাউড সেবা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে অ্যাপটি।

গুগলের নতুন এ সিদ্ধান্তের পর গত শুক্রবার থেকে ক্যাটওয়াচফুল অ্যাপটি আর কোনো তথ্য আদান-প্রদান করছে না, কার্যত এটি বন্ধ রয়েছে। অ্যাপটি শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে অভিভাবকদের সহায়তা দেওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে এটি ‘স্টকারওয়্যার’ বা ‘স্পাউসওয়্যার’ ক্যাটাগরির একটি নজরদারি করা অ্যাপ। এ ধরনের অ্যাপ সাধারণত নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করতে ব্যবহার করা হয়।

প্রসঙ্গত, ক্যাটওয়াচফুল গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায় না। আর তাই অ্যাপটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে ফোনে ইনস্টল করতে হয়, যাকে বলা হয় ‘সাইডলোডিং’। অর্থাৎ এটি ইনস্টল করতে হলে ফোনে সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হয়। ইনস্টল হওয়ার পর অ্যাপটি নিজেকে ‘সিস্টেম অ্যাপ’ হিসেবে লুকিয়ে ফেলে।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ য় রব স ব যবহ র নজরদ র গ গল র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান

জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’

টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’

জাতিসংঘের বিশেষ এই র‍্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’

ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি