জলবায়ু সংকট নিয়ে নানামুখী গবেষণা হলেও সেটার ফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। গবেষণা শেষ হলেও অভীষ্ট গোষ্ঠীর জীবনে সেটি কী পরিবর্তন এনেছে, সেটার কোনো মূল্যায়ন হয় না। বাস্তবতা হলো, গবেষণার পর এসব বিষয়ে কোনো খবর রাখা হয় না।

আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের সভাকক্ষে এক প্রারম্ভিক কর্মশালায় (ইনসেপশন ওয়ার্কশপ) এসব কথা বলেন বক্তারা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ুসহিষ্ণু ফসল নির্বাচন’ প্রকল্পের বিষয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট (বিসিসিটি)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিসিসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো.

ওয়ালি–উল–হক বলেন, অনেক গবেষণা হলেও সেটার ফলাফল মাঠপর্যায়ে যায় না। জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষমতাসম্পন্ন ফসল উদ্ভাবন করলেও কৃষক সেটার উপকার পায় না। গবেষণার ফল যাতে অভীষ্ট গোষ্ঠীর জীবনে পরিবর্তন আনে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিসিসিটি সচিব শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দুটি প্রাধান্য দেওয়ার জায়গা আছে। ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। সে হিসেবে নোবিপ্রবির এ প্রকল্পে এ দুটি দিককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখানে কৃষক একটা ভালনারেবল গ্রুপ (ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী)। এলাকাটাও ক্ষতিগ্রস্ত।’

বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, বাস্তবতা হলো গবেষণা শেষ হওয়ার পর আর কোনো খবর থাকে না।

কর্মশালায় নোবিপ্রবি উপাচার্য মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ডেলটা প্ল্যানে যে ছয়টি অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে তার মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালীর মেঘনা অববাহিকা অঞ্চল একটি। এখন যে লবণাক্ততা দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০ বছর আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছিল তখনো ছিল না।

মুহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, সহযোগিতা পেলে নোবিপ্রবি গবেষণার জন্য একটা বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক ও নোবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মেঘনা অববাহিকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ৭ মিলিমিটার থেকে ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। ফলে কৃষি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নোবিপ্রবির এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ২১০০ সালের শেষের দিকে মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলে তাপমাত্রা ০.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে।

এ অধ্যাপক আরও বলেন, এ প্রকল্পের অধীন গবেষণার মাধ্যমে ২১০০ সালে মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল বরিশাল, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে তাপমাত্রা আর্দ্রতা ও লবণাক্ততা কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সেটা বের করা হবে।

কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিসিসিটির সহকারী পরিচালক (নেগোসিয়েশন) শাকিলা ইয়াসমিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব প রব প রকল প অবব হ ক পর ব শ জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

মহানবীর তায়েফ যাত্রা: শিক্ষা ও উপদেশ

জীবনের পথ কখনো সমতল নয়। কখনো উত্তল, কখনো অতল। রাসুল (সা.)-এর জীবনও ছিল এমনই—বিজয়ের মধ্যে পরাজয়ের ছায়া, সাফল্যের পাশে কষ্টের কাঁটা। মক্কায় দাওয়াহর পথে বাধা সৃষ্টি হলে, তিনি তাক করেন তায়েফের দিকে। সেখানকার থাকিফ গোত্রের কাছে আশা নিয়ে যান।

কিন্তু যা পান, তা ছিল কঠোর প্রত্যাখ্যান, পাথরের আঘাত এবং গভীর একাকিত্ব। এই যাত্রা শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং ধৈর্য, রহমত এবং ইমানের এক অসামান্য পাঠ।

নতুন আশায় তায়েফের পথে

মক্কা ছিল তখন আগুনের চুল্লির মতো। হযরত খাদিজা (রা.) এবং চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরাইশের নির্যাতন আরও তীব্র হয়। তারা নবীজিকে এবং মুসলিমদের এত কষ্ট দিত যে মক্কার বিশালতা মনে হতো এক হাতমুঠোর মতো সংকীর্ণ। ইসলাম প্রচারের জন্য নতুন আশ্রয় খোঁজা ছাড়া আর উপায় ছিল না।

তাই নবীজি শাওয়াল মাসে, নবুয়তের দশম সালে তায়েফ যাত্রা করেন। সঙ্গে ছিলেন একমাত্র জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)।

তায়েফে পৌঁছে তিনি দশ দিন অবস্থান করেন। সাকিফের সর্দারদের কাছে যান, তাওহিদের দাওয়াত দেন, মূর্তিপূজা ত্যাগের আহ্বান জানান। আশা ছিল, এই শক্তিশালী গোত্র ইসলামকে আশ্রয় দেবে, মক্কার নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু যা ঘটল, তা ছিল হতাশার চূড়ান্ত। (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নবাওয়িয়্যাহ, ১/২৩৪-২৩৬, দারু কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৪)

সর্দারদের উপহাস ও প্রত্যাখ্যান

সাকিফের তিন সর্দার—আবদ ইয়ালিল, মাসউদ এবং হাবিব বিন উমাইর—এর কাছে নবীজি যান। তাঁরা ছিলেন গোত্রের প্রধান। নবীজি তাদের বলেন, ‘আল্লাহর একত্ব স্বীকার করো, আমাকে সাহায্য করো যাতে আমি আমার কওমকে দাওয়াত দিতে পারি।’ কিন্তু উত্তর ছিল অকৃত্রিম উপহাসের।

একজন বললেন, ‘যদি আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে কাবার পর্দা ছিঁড়ে ফেলুন!’ আরেকজন বললেন, ‘আল্লাহ কি তোমাকে ছাড়া কাউকে পাঠাতে পারেননি?’ তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি সবচেয়ে বুদ্ধিমান বলে মনে হয়েছিলেন, বললেন, ‘যদি তুমি সত্যিকারের রাসুল হও, তাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলা বিপজ্জনক। আর যদি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে তোমার সঙ্গে কথা বলার যোগ্য তুমি নও।’

এই প্রত্যাখ্যান নবীজির হৃদয়ে গভীর আঘাত লাগাল। তিনি শুধু একটি অনুরোধ করলেন: ‘যদি আমাকে সাহায্য করতে না চাও, তাহলে অন্তত এই খবর কুরাইশকে দিয়ো না।’ কিন্তু তারা তা-ও নাকচ করে দিল।

সর্দাররা সাধারণ লোকদের উস্কানি দিলেন, যারা নবীজিকে এবং যারা ইবনে হারিসাকে গালাগালি করতে লাগলেন, পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেন। নবীজির পায়ের গোড়ালি কেটে রক্তাক্ত হয়, জুতা রক্তে ভিজে যায়। যারা ইবনে হারিসা (রা.) তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। এভাবে তারা তাদেরকে বিতরণের বাগানে ঠেলে দিয়ে চলে যায়। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১২৮-১৩০, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর সুস্থতার চর্চা থেকে শিক্ষা০৮ আগস্ট ২০২৫কষ্টের চূড়ান্ত হলো যখন

বাগানে প্রবেশ করে নবীজি একটি আঙুর গাছের ছায়ায় বসলেন। ক্লান্তি, ব্যথা, হতাশা—সব মিলিয়ে হৃদয় ভারী। কিন্তু তিনি মাথা তুলে আল্লাহর দিকে চাইলেন। তাঁর ঠোঁট থেকে বের হলো এমন এক দোয়া, যা আজও মুসলিমদের হৃদয় ছুয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তোমার কাছেই আমি আমার দুর্বলতা, অসহায়তা এবং মানুষের কাছে আমার নীচত্বের অভিযোগ করছি। হে সবচেয়ে দয়ালু, তুমি দুর্বলদের রব। আমার রক্ষক তুমি। আমাকে কার হাতে ছেড়ে দিবে? কোনো দূরের ব্যক্তির কাছে, যে আমার প্রতি কঠোর হবে? নাকি আমার শত্রুর হাতে, যার কাছে আমার বিষয় আমাকে সমর্পণ করেছ? যদি তোমার প্রতি আমার বিরুদ্ধে কোনো অসন্তোষ না থাকে, তাহলে আমি কিছুমাত্র চিন্তিত নই। কিন্তু তোমার নিরাপত্তা আমার জন্য আরও বিস্তৃত। আমি আশ্রয় নিচ্ছি তোমার মুখের নূরে, যার আলোয় অন্ধকার উজ্জ্বল হয়েছে, দুনিয়া-আখেরাতের বিষয় সঠিক হয়েছে। যাতে তোমার ক্রোধ আমার ওপর নাজিল না হয় বা তোমার অসন্তোষ আমার ওপর না আসে। তোমারই ক্ষমা চাই যতক্ষণ না তুমি সন্তুষ্ট হও। আর কোনো শক্তি বা সাহায্য নেই তোমার ছাড়া।’ (ইবনে ইসহাক, আস-সিরাতুন নবাওয়িয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৯২, দারুস সালাম, রিয়াদ, ১৯৯৮)।

এই দোয়ায় কোনো অভিযোগ নেই, শুধু ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষা। এটি শেখায়, মুমিনের সবচেয়ে বড় ভয় আল্লাহর অসন্তোষ।

আদ্দাসের ঘটনা

বাগানের মালিক উতবা ও শাইবা ইবনে রাবিয়া মক্কার শত্রু ছিলেন। কিন্তু তারা নবীজির অবস্থা দেখে করুণা অনুভব করলেন। তারা তাদের খ্রিষ্টান কর্মচারী আদ্দাসকে বললেন, আঙুর নিয়ে যাও। আদ্দাস নিনোয়া (ইরাক) থেকে এসেছিলেন। নবীজি আঙুর খেয়ে বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’। আদ্দাস অবাক হয়ে বললেন, ‘এই কথা এখানকার লোক বলে না!’

নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কোথা থেকে? তোমার ধর্ম কী?’ আদ্দাস বললেন, ‘খ্রিষ্টান, নিনোয়া থেকে।’ নবীজি বললেন, ‘ইউনুস (আ.)-এর শহর?’ আদ্দাস চমকে উঠলেন। নবীজি বললেন, ‘তিনি আমার ভাই, নবী ছিলেন। আমিও নবী।’ আদ্দাস আর ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি নবীজির মাথা, হাত, পা চুম্বন করলেন এবং ইমান আনলেন। এই ছিল সংকটের মধ্যে প্রথম আলোর রশ্মি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৩১)

মক্কায় প্রত্যাবর্তন

তায়েফ ছেড়ে ফিরতে গিয়ে নবীজির হৃদয় ছিল ভারী। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে একা রাখেননি। পথে, আকাবা পাহাড়ে, জিবরীল (আ.) এলেন। বললেন, ‘আল্লাহ আপনার কওমের কথা শুনেছেন। তিনি আপনার জন্য পাহাড়ের ফেরেশতা পাঠিয়েছেন। আপনি আদেশ করুন, তিনি দুই পাহাড় মক্কার ওপর চাপিয়ে দেবেন।’

কিন্তু নবীজি বললেন, ‘না। আমি আশা করি, তাদের বংশ থেকে এমন লোক বের হবে যারা আল্লাহর একত্ব স্বীকার করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৩১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭৯৫)।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর জন্মকালের অলৌকিক ঘটনাবলি১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও একটি ঘটনা

নাখলা উপত্যকায় রাত্রিকালীন নামাজে একদল জিন এসে কোরআন শুনলেন এবং ইমান আনলেন। আল্লাহ সুরা আল-আহকাফে এর বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা তোমার দিকে একদল জিনকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যাতে তারা কোরআন শোনে। তারা শুনে বলল, ‘শোনো, শোনো।’ শেষ হলে তারা তাদের কওমকে সতর্ক করে ফিরে গেল।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ২৯-৩২)

মানুষ যখন প্রত্যাখ্যান করল, জিনরা স্বীকার করল—এটি রিসালাতের বিশ্বজনীনতার একটি প্রমাণ।

মক্কায় ফিরতে গিয়ে কুরাইশের ভয়ে নবীজি আল মুতইম বিন আদিয়ের কাছে আশ্রয় চাইলেন। তিনি মুশরিক ছিলেন, কিন্তু রাজি হলেন। সকালে তাঁর ছয়-সাত ছেলের সঙ্গে তরবারি হাতে নিয়ে কাবায় ঘুরে বললেন, ‘ইনি এখন আমার আশ্রয়ে।’

নবীজি এই অনুগ্রহ ভুললেন না। পরে বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্তির প্রসঙ্গে বললেন, ‘যদি আল মুতইম জীবিত থাকতেন এবং এদের মুক্তির জন্য অনুরোধ করতেন, আমি মুক্তি দিতাম।’ (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নবাওয়িয়্যাহ, ১/২৪০, দারু কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৪)

শিক্ষা ও উপদেশ: যাত্রার ফসল

এই যাত্রা থেকে আমরা কী শিখি? প্রথমত, কারণ গ্রহণ এবং আল্লাহর ওপর ভরসা। নবীজি তায়েফকে বেছে নিয়েছিলেন তার শক্তি বৃদ্ধির জন্য, কিন্তু ফিরতে গিয়ে সব ছেড়ে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করলেন। ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি বলেন, এটি মানুষী প্রচেষ্টা এবং ঐশী তাওয়াক্কুলের সমন্বয়। (আস-সিরাতুন নবাওয়িয়্যাহ, ১/৪০১, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০১)

দ্বিতীয়ত, ড. সাইয়্যিদ সাবিক বলেন, নবীজির দোয়ায় কোনো অভিযোগ নেই, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির চাওয়া—এটি সত্যিকারের আবদের চিহ্ন। (ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা ২৫৯, দারুল কিতাব আল-আরাবি, বৈরুত, ১৯৯৯)।

তৃতীয়ত, দাওয়াত রহমতের পথ। পাহাড় চাপা দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নবীজি বললেন, ভবিষ্যতের মুসলিমদের আশা করি। এমনই হওয়া উচিত প্রচারকের মনোভাব—প্রতিশোধ নয়, হেদায়াত।

চতুর্থত, কষ্টের পর স্বস্তি। আদ্দাসের ইমান, জিনদের সাড়া, মুতইমের আশ্রয়—সবই প্রমাণ করে, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে।’ (সুরা শারহ, আয়াত: ৬)

আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেন।’ (সুরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৮)

পঞ্চমত, ইসলাম প্রচারকের নৈতিকতা। নবীজির ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা (মুতইমের প্রতি), মানবিকতা (আদ্দাসের সঙ্গে)—এগুলো হৃদয় জয় করে। ড. সাল্লাবি বলেন, দাওয়াত শুধু কথার বিষয় নয়, চরিত্র একটি বড় অনুষঙ্গ। (আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি, আস-সিরাতুন নবাওয়িয়্যাহ,  ১/৪০৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০১)।

তায়েফের যাত্রা ছিল কষ্টের, কিন্তু তার ফল ছিল অমূল্য। এটি নবুয়তের মর্যাদা প্রকাশ করল, রাসুলের ধৈর্যের পরীক্ষা নিল এবং ইসলামের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করল। আজও এই গল্প আমাদের বলে, সংকটে আল্লাহর কাছে ফিরে যাও, রহমতের পথে চলো।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ কী১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ