Prothomalo:
2025-08-10@20:57:01 GMT

বিনিয়োগে চাই স্থিতিশীল নীতি

Published: 10th, August 2025 GMT

বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বিনিয়োগের পথে বড় বাধা তৈরি করছে। গতকাল রোববার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বিনিয়োগ বাড়াতে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন না করার সুপারিশ করেন তাঁরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কার্যক্রমের পর্যালোচনা নিয়ে সংলাপটি আয়োজন করা হয়। রাজধানীর এক হোটেলে এই সংলাপ হয়। সংলাপে বক্তারা বলেন, নীতি সংস্কারের পাশাপাশি প্রশাসনিক জটিলতা কমানো, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং স্বয়ংক্রিয় সেবা চালু করলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন সবাই মন খুলে কথা বলতে পারছেন; কাউকে গুম, খুন করা হচ্ছে না।

সংলাপে রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। বক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা ধরনের বাধার কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সরকারের সমালোচনাও করেন।

সংলাপে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন সমস্যা ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। সরকারের এক বছরে জাদুকরি কিছু দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে ঠিক করতে চাইলে নীতি সংস্কার করতে হবে। যে ব্যাংকগুলো টাকা পাচার ও লুটের সঙ্গে জড়িত ছিল, সেগুলো সচল রাখার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়ে ব্যাংকগুলো বন্ধ করা হোক। এসব ব্যাংকের মালিকানা কখনো নষ্ট হবে না। কোনো না কোনো সময় আবার ফিরে এসে ছোবল মারবে তারা।

তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, প্রতিনিয়ত নীরবে পোশাক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। এর বড় প্রমাণ, শুধু বিজিএমইএর সদস্য ৭ হাজার ২০০ থেকে এখন ৩ হাজারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিসহ সার্বিক নীতির কারণে এসব কারখানা বন্ধ হচ্ছে।

দেশে প্রতিনিয়ত নীতি পরিবর্তনে বিনিয়োগ সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহমুদ হাসান খান বলেন, প্রতিবছর বাজেটে পরিবর্তন হয়। বাজেট ঘোষণার সময় কিছু নীতি প্রণয়ন করা হয়। যার ওপর ভিত্তি করে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু দেখা যায় পরের বছরই সেই নীতি পরিবর্তন হয়ে গেছে।

কাঠামোই ভেঙে পড়েছে

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিপ্লবের পর পুরো কাঠামোই ভেঙে পড়েছে। এখনো সেই কাঠামো দাঁড়াতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, এমনকি সেনাবাহিনীরও কাঠামো ঠিক নেই। পুরোটাই ফ্যাসিজমের কবলে।

রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়টি উল্লেখ করে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ১৬টি ব্যাংক এবং ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে একটি কোম্পানি। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে তারা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পালিয়ে যাওয়ার কথা কেউ কখনো শোনেনি। বাংলাদেশের তিনজন সাবেক গভর্নরকে পাওয়া যাচ্ছে না।

এমন অবস্থার মধ্যেও সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানান শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে একটি কাঠামো কোনোভাবে দাঁড় করাতে। যেন পরবর্তী সরকার এসে অন্তত একটি কাঠামো পায়। ভঙ্গুর কাঠামোয় নতুন সরকারের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে না।

সংলাপে পুলিশের কাঠামো পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের কাঠামোতে পরিবর্তন না হলে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ চলতেই থাকবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন না আনলে আগে যেভাবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী সরকারও একই কাজ করবে।

বিনিয়োগের প্রত্যাশা কাল্পনিক

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা এলেও রাজনৈতিক খাতে আসেনি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয়। সবকিছু মিলিয়ে এখনই কেউ বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমন প্রত্যাশা কাল্পনিক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সরকারের দুটি চ্যালেঞ্জ ছিল। একটি হলো সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আর সংস্কারের এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, তারা যেন এটাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আরও সুদৃঢ়ভাবে আর্থিক খাতকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

রেস্টুরেন্ট খুলতে ১৯টি লাইসেন্স নিতে হয়

দেশের অর্থনীতি অতিমাত্রায় বিধিবিধানে আবদ্ধ উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটি রেস্টুরেন্ট খুলতে ১৯টি লাইসেন্স নিতে হয়—এটি বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নিয়মনীতি ও বিধিবিধান সহজ করতে হবে। সরকারের ভূমিকা কমিয়ে বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দায়িত্ব বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করলে দুর্নীতি কমে আসবে।

আমীর খসরু বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন বুঝতে না পারলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি টিকতে পারবেন না।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন দূর করা না গেলে মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে না। গত এক বছরে সরকার সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারেনি।

সরকারের সংস্কার আলোচনায় শিক্ষা, কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত স্থান পায়নি উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, নারী সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলেও দক্ষিণপন্থী রাজনীতির ভয়ে চুপসে যেতে হলো।

শিক্ষা ও শিল্পের চাহিদার সংযোগ শূন্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষা ও শিল্পের চাহিদার সংযোগ প্রায় শূন্য। তিনি আরও বলেন, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক দর্শনের কোর্সের নম্বর দেন। অনেক কলেজে গবেষণাগার নেই, অথচ রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের পরীক্ষায় ১০০ নম্বর দেওয়া হয়। আবার গবেষণাগার থাকলেও ব্যবহৃত হয় না।

শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি বিরাজ করছে উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ১০ জন শিক্ষকের মধ্যে গ্রুপ তিনটি। ফলে দায়িত্বশীল শিক্ষক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার সুপারিশ করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। প্রাথমিক পর্যায় অবৈতনিক হতে পারে, তবে মাধ্যমিক পর্যন্ত কেন নয়, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সংলাপে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সাংবাদিক জিমি আমির বলেন, কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। আমলারা চাননি বলেই এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিনিয়োগ আসছে না, এটা উদ্বেগের বিষয়

সংলাপের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন: ফিরে দেখা অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের ৩৮টি করণীয় বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, আমদানি সহজীকরণ, প্রবাসীদের জন্য সাশ্রয়ী ব্যাংকঋণ, কৃষি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি, আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসন, মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল শক্তিশালীকরণ, জুলাই আন্দোলনে শ্রমিকদের আত্মত্যাগ—এই ৯ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা গেছে। মাদ্রাসাশিক্ষাকে মূল ধারায় আনতে না পারা, স্বাস্থ্য খাতের রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে না পারাসহ ১১টি বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। এবং বাকি ১৮টি করণীয় বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যথাযথ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রবন্ধে। এর মধ্যে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ, শিক্ষকদের জন্য আলাদা পে–স্কেল তৈরি ইত্যাদি।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত, কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে। মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ পর্যায়ে। খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

এ সময় ফাহমিদা খাতুন বলেন, এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতে সংস্কারসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ রপ্তানি খাতকে ভালো অবস্থায় রেখেছে এবং বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। এগুলো উদ্বেগের বিষয়।

সংলাপে বক্তব্য দেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ম.

তামিম, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন। আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বাসদের কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ন বল ন র জন ত ক র সদস য প রবন ধ সরক র র এক বছর র জন য কর ন স ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি

জুলাই ঘোষণাপত্রকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক প্রহসন উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছেন গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ৬০ ছাত্রনেতা। তারা শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণকে অংশীদার করে নতুন ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।

রোববার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান ছাত্র নেতারা। এতে বলা হয়, হাজারো শহীদ এবং আহত ভাইবোনের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংঘটিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক পুলিশ, আদালত, আইন-সংবিধান তথা পুরোনো ব্যবস্থার কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের জুলাই ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের মতো সামরিক শাসনকে মেনে নেয়নি। আবার নব্বইয়ের মতো কেবল ব্যক্তি স্বৈরাচারীর অপসারণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি বরং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙক্ষার মধ্য দিয়ে গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের বৈপ্লবিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আকাঙক্ষা অনুসারে নতুন কল্যাণমূলক, গণবান্ধব রাষ্ট্র তৈরির দায়িত্ব পালনে অগ্রসর ভূমিকায় হাজির হয়ে গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা যাদের ডাকে বিশ্বাস স্থাপন করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ আগস্ট পুরোনো শোষণমূলক আমলাতন্ত্র, লুটেরা শক্তি ও পুরোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সমর্থনে একটি প্রতারণামূলক ও অর্থহীন ডকুমেন্টকে জুলাই ঘোষণাপত্র নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা, জুলাই ঘোষণা ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানায়। পাশাপাশি শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও প্রকৃত ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন গণবান্ধব সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানায়।

এসব দাবি বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা তথা পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারীসমাজ, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীসহ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদ ও আহত গাজী ভাই-বোনদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তাদের অপরিসীম সাহস ও দেশপ্রেমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা সত্যিকার গণবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে চলমান রাখবো।’

বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল্লাহ সালেহীন, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, হামজা মাহবুব, মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবলী সাদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল তানভীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব হোসাইন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজিফা জান্নাত, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল, ঢাকা কলেজের মো. রাকিব, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ বিন রনি, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, স্টেট ইউনিভার্সিটির মিশু আলী সুহাস, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সিনথিয়া জাহিন, বিএল কলেজের (খুলনা) সাজিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ