মব সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠা ৮০ শতাংশ মানুষের
Published: 12th, August 2025 GMT
দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ মানুষ, যাঁদের ৫৬ শতাংশ পুরুষ আর ৬৬ শতাংশ নারী। পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে উৎকণ্ঠিত ৬৭ শতাংশ মানুষ। তাদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ আর ৭১ শতাংশ নারী।
এমন চিত্র উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, গত ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহুরে।
উত্তরদাতাদের মধ্যে উচ্চমধ্যবিত্ত ও বিত্তবানেরা ছিলেন না, মতামত দিয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। জরিপে রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে টেলিফোনে প্রশ্ন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর আগে অক্টোবরের তথ্যের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জরিপে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৫ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা, ৯ শতাংশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ১৮ শতাংশ মানুষ নির্বাচিত সরকার না থাকার কথা বলেছেন। গত বছরের অক্টোবরের জরিপে ৫০ শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। আর ১০ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসায় মন্দা আর ৭ শতাংশ আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছিলেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নতির প্রয়োজনের কথা বলেছেন ১৬ শতাংশ। ১১ শতাংশ মানুষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ১৬ শতাংশ অর্থনীতি বা ব্যবসা চাঙা করা, ১৩ শতাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো, ১০ শতাংশ বেকারত্ব কমানো এবং ১৭ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি দমনের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কমানো এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছেন ১৯ শতাংশ করে মানুষ।
বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৫ শতাংশ মানুষের মত হলো, দেশ অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। গত বছরের অক্টোবরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে। আর ৪৩ শতাংশ বলেছিলেন, অর্থনৈতিকভাবে সঠিক পথে আছে।
জরিপ অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে ভালোভাবে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন চান ৫১ শতাংশ মানুষ। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচন চান ১৭ শতাংশ। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন দেওয়া ভালো বলে মনে করেন ১৪ শতাংশ মানুষ। আর সংস্কার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত যেসব প্রচেষ্টা, সেগুলোকে আপনি ১০০-তে কত নম্বর দেবেন—এই প্রশ্নে সরকারকে ৬৩ নম্বর দিয়েছেন উত্তরদাতারা। গত অক্টোবরের জরিপে ছিল ৬৮।
কাকে ভোট দেবেন, সিদ্ধান্তহীন ৪৮.৫০% মানুষ
আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন—এই প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীন মানুষের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ৩৮ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। আট মাস পরে বিআইজিডির জরিপে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বলছেন, কাকে ভোট দেবেন, তাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। কাকে ভোট দেবেন, বলতে চান না ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ভোট দেবেন না বলেছেন ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
একই প্রশ্নের উত্তরে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী ও ২ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অক্টোবরে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত ও ২ শতাংশ মানুষ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
অক্টোবরের জরিপে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটি এখন কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ভোট শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ, অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে।
এবার জরিপে নতুন প্রশ্ন ছিল, আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন দলের প্রার্থী জিতবে। জবাবে ৩৮ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। ১৩ শতাংশ মানুষ জামায়াত ও ১ শতাংশ এনসিপির কথা বলেছেন। আর আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন ৭ শতাংশ মানুষ।
জাতীয় নির্বাচন কখন চান—এমন একটি প্রশ্নও ছিল জরিপে। জবাবে ৩২ শতাংশ মানুষ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চেয়েছেন। ডিসেম্বর (২০২৬) অথবা পরে নির্বাচনের কথা বলেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ।
৭০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
‘মব সহিংসতা বন্ধে দরকার আইনের শাসন’জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক এ কে এম ফাহিম মাশরুর।
প্যানেল আলোচনায় মির্জা এম হাসান বলেন, মব সহিংসতা বন্ধে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন-পরবর্তী সরকার আইনের শাসন মেনে চললে এটা কমবে। নির্বাচন হয়ে গেলে সংস্কার নিয়ে আর কোনো কথা হবে না বলে মানুষ মনে করেন। এ জন্যই তাঁরা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা হাসান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিইনি বা বলতে চাই না—এখানে আওয়ামী লীগও লুকিয়ে আছে। ভোটের চিত্র মোটামুটি আগের মতোই আছে।’
রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান আসিফ মোহাম্মদ শাহান। তিনি বলেন, মানুষ হয়তো মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দল কেউই তাঁদের উদ্বেগগুলো নিয়ে চিন্তিত নয়। হয়তো এ কারণেই ভোটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীন মানুষের সংখ্যা বেশি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ম ন ষ বল ব আইজ ড র অন ষ ঠ ন বল ছ ল ন উৎকণ ঠ বল ছ ন ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফুলের সংশয়
এই অবেলায়
ফুলের মাঝখানে মৃত মথ থেমে আছে
আচ্ছন্নতা, প্ররোচনা
এই দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাও
শিমুল একগুচ্ছ
ফুলেদের ঘুরবার অতীত জানা নেই
যেন-বা নিয়তি বিশেষ নয়
নয় হারানো প্রণয়মায়া শুধুই ফিরে পাওয়ার ভেতর
আরোহণ ও বিরাজনে কী নিখুঁত ছাপা ভেতর!
এই মায়া মন ভরে লিখতে চাই
অভ্যন্তর জগতের সব
মেঘমন্দ্র কোনো পুষ্পরেণু নয়
আমি তবে ভ্রমণে কেন রেখে আসি
সুনীল উৎকণ্ঠা আমার—
যে উৎকণ্ঠা আমাকে দৃশ্যের ব্যবধান শিখিয়েছিল
শিখিয়েছিল একমাত্র চোখই তো জলের সন্ধিস্থল
চোখ তারে কোরো না অনুসরণ
ভাবো সে-ও তো
পাতালের দিকে উড়ে চলা পাখি সুপ্রধান
একটি ফড়িং খেলা করে
সেখানে চোখ উড়ে গেল অনর্থক
অথচ গতি তারও নিচে থাকতে পারে
এক নিরাকার পরম সত্তার
দেব-দেবীদের পৃথিবীতে
ও আত্মা আমার; তুমি কি তবে
শাশ্বত ও চৈতন্যের কারণ
কেননা সংকেতের আদৃত জুড়ে ছড়িয়েছে যত
অন্তিমের বেদনাব্যস্ত বাতাস
লিপ্ত ধূলির পথ
অবসন্ন রথের রজনী
যেখানে কোনো জিজ্ঞাসা নেই
নেই সূর্যাস্তের নিচে চাপা পড়া কোনো ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ
তা বলাই বাহুল্য—বিচ্ছেদের ফুলগুলো বড় শীর্ণ
মুথাঘাসে একদল সান্ধ্য জোনাক
পৃথিবীর প্রথম বাতিটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল
শুধু তারার আলোর পূর্বাভাসকে উসকে দিতে
কী তাহাদের বিস্ময় জানা হয় নাই
আমি গাছে হেলান দিয়ে সম্পৃক্ত হতে গিয়ে জেনেছি
মানুষের মতো গাছেদের বেঁচে থাকার জীবনে
কোনো প্রেমিক–প্রেমিকা নাই
চন্দ্র—প্রতাপে যদিও জেনে গেছি
প্রেম একটা ফুলের সাথে একটা প্রজাপতির
নৈমিত্তিক ঘটনা
তবে আমার কী সাধ্য আছে
জমানো দ্বিধার কাছে স্বপ্ন–চাওয়া
যতটা সম্ভব মুছে যাক বিরহের সুর
ফুলেদের ভাষায় বিরহ হয়তো দৈব্য আঁধারে
বাতাসনির্ভর এক সফর—
সেই সফরে পরাগায়নের গান
না হয় থাকুক একটি একলিঙ্গ ফুলের কাছে
কিছুটা সম্মোহন
যে হারায় নিয়ে দ্বৈতবাদ
তার কী কথা! মৃত্যুমুখী সেই তো সুন্দর
এই যে ভাবছি, বলেই
বিম্বাধর ফল সুন্দর, আছে ব্যথা
কিন্তু আমি বলব অনেক গল্প জমে আছে
কামিনীগাছটার বিচ্যুত সন্ধ্যায়
শূন্যতায় কেবল শূন্যতা
কথা আকীর্ণ হয়ে যায় অলৌকিকতায়
আজ বাতাসে অ্যালকোহল
দীর্ঘ পথ উৎস আর ধারা
দুপুর তাই এমন
চঞ্চল পাতারাও মন ভরে বেড়ে উঠছে
যেন সমূহ দ্বার নীত সম্ভাষণ
যতটা দাবি করছি, ইচ্ছেরা তত
অপ্রত্যাশিত থেকে যাচ্ছে
থেকে থেকে মনে পড়ছে
আমার জন্য কী তবে স্মৃতিই যথেষ্ট
সাক্ষাতের দুনিয়ায় আল্লাহ মেহেরবান
মিথ ও মৃত্যুর মধুবন
অন্তঃসুরে চেনা সব গান
ঘুমের ভেতর এত আকর্ষিক হয় কেন?
দুচোখ বন্ধ এই দেহ জমিন
একটি মেরুন নক্ষত্রের চাহনিতে
আকাশে বাড়িয়ে রেখেছি হাত
যদি মেঘ হতো স্বর্ণলতা, নিদেনপক্ষে বাড়াতাম বুক
একটুর জন্য খুব কাছে যাবার অপেক্ষায়
আমি তার দায় এড়াতাম
আজ ফিরে যেতে থামি, দেখি
মেঘ বাড়িয়েছে শাবক এক হাত
মানুষ কেন সমুদ্রে যায়?
মানুষের আছে নাকি অবসর
চাঁদের আলোয় জোয়ার-ভাটায়
দূরে যে সুন্দরের কুঞ্জন
জলের নকশা আর অথির বিন্যাস
সেখানে পৃথিবীর কবে থেকে
অরুণ মাঝিরা জামার ভেতর আঁকতে শিখেছিল
কম্পন রেখার অভিজ্ঞান
যদি ধরি উওলোফ ভাষা
ভাষার ভেতর ততটা অতীত বর্তমান নেই
মেঘের ছায়া এসে থেমে আছে অবিচলতায়
এইসব বিবশ দুপুর
পাতার হরণে উড়োপাতাদের শ্রদ্ধা অশেষ
হাতের সিগারেট পুড়ে যায়
এতক্ষণে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছ তুমি
ভাবছ দুপুর দু প্রহর
তোমার হাতঘড়ি হৃদয়ের পাশে রেখে
কোন রাগ মুছে যায়
কোন তারা নিভে যায় সুষুপ্ততায়
নিদ্রা ভেঙে যদি দেখি ক্রান্তদর্শী চাঁদ
হে আশ্চর্য দরবার
মধ্যরাত চোখ তুলে তাকানো যাবে না
কারণ করুণানির্ভর