রাজধানী ঢাকার মৌচাকের একটি হাসপাতালের পার্কিংয়ে গাড়ির ভেতরে চালক জাকির হোসেন (২৪) ও তাঁর বন্ধু মো. মিজানের (৩৮) মৃত্যুকে স্বাভাবিক মনে করছেন না স্বজনেরা। জাকিরের স্বজনদের দাবি, দালাল চক্রের হাতে খুন হয়েছেন জাকির ও তাঁর বন্ধু মিজান। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য দালালদের ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন জাকির। কিন্তু টাকা দেওয়ার আড়াই বছরেও সে দেশে যেতে পারেননি তিনি। দালালদের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা মিজানও খুন হন।

গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার মৌচাকের ডা.

সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা গাড়ি থেকে জাকির ও মিজানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় জাকির চালকের আসনে ও মিজান পেছনে বসেছিলেন। জাকিরের বাড়ি চাটখিলের খিলপাড়া ইউনিয়নের লটকরিয়া গ্রামে। বাবার নাম আবু তাহের। আর মিজান চাটখিলের রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লটকরিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় জাকিরের স্বজনদের সঙ্গে। এ সময় জাকিরের মা কুলসুমা আক্তার ও বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন দাবি করেন, টাকার জন্যই খুন করা হয়েছে জাকির ও তাঁর বন্ধু মিজানকে।

জাকির হোসেনের বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে তাঁর ভাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর এক দালাল চক্রকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা লেনদেনের সব কাগজপত্র তাঁদের কাছে আছে। ‍যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার কথা বলে তাঁরা তাঁর ভাইকে ঘুরিয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁদের কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় সম্পর্কের অবনতি হয়। তাঁরা (দালালেরা) তাঁর ভাইকে নানা হুমকি দেন। সর্বশেষ গত রোববার ঢাকায় তাঁর ভাইকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এ কারণে তাঁদের সন্দেহ, ওই দালাল চক্র দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে।

জাকিররা তিন ভাই, এক বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। গ্রামের বাড়িতে থাকতেন তিনি। ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। জাকিরের ভাই শাহাদাৎ বলেন, বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ড্রাইভিং শিখেছিলেন জাকির। এক বছর ধরে গাড়িচালকের কাজ করছেন তিনি।

দুই মায়ের বিলাপ ও আহাজারি

আজ দুপুরে লটকরিয়া গ্রামে জাকিরদের বাড়ির আঙিনায় পা দিতেই ভেতর থেকে বিলাপের শব্দ ভেসে। সামনে যেতেই শোনা যায়, ‘ও বাবারে বাবা, কেমনে মায়ের কলিজা খালি করে চলি গেলি রে। আঁই শার্ট–প্যান্ট ধুই রাইখছি, হুত আঁরে কই গেছে ঢাকাত্তুন বাড়িত আঁই গোসল কইরবো’।

ঢাকা থেকে এসে গোসল করে বিশ্রাম নেবে ছেলে, এ জন্য জাকিরের মা কুলসুমা আক্তার ছেলের কাপড়ও ধুয়ে রেখেছিলেন। এখন সেই কাপড় বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন তিনি। বিলাপ করতে করতেই এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান কুলসুমা।

পাড়াপড়শিদের শুশ্রূষায় জ্ঞান ফিরতেই আবার কুলসুমার বিলাপ শুরু হয়। তিনি বলতে থাকেন, ‘আঁর হুতেরে মারি হালাইসে। আঁর হুত আমেরিকা যাইবার লাই লক্ষ্মীপুরের ফজলুর রহমান ও ফেনীর সুমনসহ দালালগোরে ২৫ লাখ টাকা দিছে। হিগুনে আঁর হুতেরে আমেরিকা নিব নিব বলি গুরাইছে। হরে আঁর হুত টেয়া হিরত চাইলে হেতেরে দালালেরা হুমকি দিছে। হেই দালালেরাই আঁর হুতেরে মারি হালাইছে।’

রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা এই প্রাইভেট কারের ভেতরে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বন ধ ক লস ম

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার ইচ্ছা পূরণে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে গেলেন প্রবাসী তরুণ

চাঁদপুরের সৌদিপ্রবাসী মেহেদী হাসানের (২৫) বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করলেন তিনি।

আজ শুক্রবার বিকেলে স্বজনদের নিয়ে ভাড়া করা হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে কনের বাড়িতে যান মেহেদী হাসান। বিয়ের পর নববধূকে হেলিকপ্টারে নিয়ে ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে। এ ঘটনায় উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী।

মেহেদী হাসান মতলব উত্তর উপজেলার এমএম কান্দি গ্রামের আবদুল বারেক দেওয়ানের ছেলে। মেহেদীর নববধূর নাম আবিদা সুলতানা। তিনি একই উপজেলার রুহিতারপাড় গ্রামের মো. আল আমিনের মেয়ে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় কনের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে মেহেদী হাসান সৌদি আরবে যান। বিয়ে করার জন্য কিছুদিন আগে বাড়ি ফেরেন। কনে দেখা ও বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। আজ শুক্রবার রুহিতারপাড় গ্রামের একটি মাঠে বরপক্ষকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি নামলে স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করেন। হেলিকপ্টার থেকে নেমে স্বজনদের নিয়ে মেহেদী হাসান হেঁটে কনের বাড়িতে যান। বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি তাঁর গ্রামে পৌঁছালে ভিড় করেন এলাকাবাসী।

মেহেদী হাসান বলেন, তাঁর বাবার এই ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে তিনি ও তাঁর পরিবার খুবই আনন্দিত। সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।

মেহেদী হাসানের বাবা আবদুল বারেক দেওয়ান বলেন, ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় ও প্রতিষ্ঠিত হলে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে তাকে বিয়ে করাবেন। আজ তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ হলো। এতে তিনি খুবই আনন্দিত।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, ঘটনা জানার পর হেলিপ্যাড এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবার ইচ্ছা পূরণে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করতে গেলেন প্রবাসী তরুণ
  • ২৬ টুকরা লাশ: নিহতের বন্ধুকে আসামি করে মামলা