দালাল চক্রের হাতে জাকির ও তাঁর বন্ধু খুন হয়েছেন, দাবি স্বজনদের
Published: 12th, August 2025 GMT
রাজধানী ঢাকার মৌচাকের একটি হাসপাতালের পার্কিংয়ে গাড়ির ভেতরে চালক জাকির হোসেন (২৪) ও তাঁর বন্ধু মো. মিজানের (৩৮) মৃত্যুকে স্বাভাবিক মনে করছেন না স্বজনেরা। জাকিরের স্বজনদের দাবি, দালাল চক্রের হাতে খুন হয়েছেন জাকির ও তাঁর বন্ধু মিজান। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য দালালদের ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন জাকির। কিন্তু টাকা দেওয়ার আড়াই বছরেও সে দেশে যেতে পারেননি তিনি। দালালদের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা মিজানও খুন হন।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার মৌচাকের ডা.
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লটকরিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় জাকিরের স্বজনদের সঙ্গে। এ সময় জাকিরের মা কুলসুমা আক্তার ও বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন দাবি করেন, টাকার জন্যই খুন করা হয়েছে জাকির ও তাঁর বন্ধু মিজানকে।
জাকির হোসেনের বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে তাঁর ভাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর এক দালাল চক্রকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা লেনদেনের সব কাগজপত্র তাঁদের কাছে আছে। যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার কথা বলে তাঁরা তাঁর ভাইকে ঘুরিয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁদের কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় সম্পর্কের অবনতি হয়। তাঁরা (দালালেরা) তাঁর ভাইকে নানা হুমকি দেন। সর্বশেষ গত রোববার ঢাকায় তাঁর ভাইকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এ কারণে তাঁদের সন্দেহ, ওই দালাল চক্র দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে।
জাকিররা তিন ভাই, এক বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। গ্রামের বাড়িতে থাকতেন তিনি। ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। জাকিরের ভাই শাহাদাৎ বলেন, বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ড্রাইভিং শিখেছিলেন জাকির। এক বছর ধরে গাড়িচালকের কাজ করছেন তিনি।
দুই মায়ের বিলাপ ও আহাজারিআজ দুপুরে লটকরিয়া গ্রামে জাকিরদের বাড়ির আঙিনায় পা দিতেই ভেতর থেকে বিলাপের শব্দ ভেসে। সামনে যেতেই শোনা যায়, ‘ও বাবারে বাবা, কেমনে মায়ের কলিজা খালি করে চলি গেলি রে। আঁই শার্ট–প্যান্ট ধুই রাইখছি, হুত আঁরে কই গেছে ঢাকাত্তুন বাড়িত আঁই গোসল কইরবো’।
ঢাকা থেকে এসে গোসল করে বিশ্রাম নেবে ছেলে, এ জন্য জাকিরের মা কুলসুমা আক্তার ছেলের কাপড়ও ধুয়ে রেখেছিলেন। এখন সেই কাপড় বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন তিনি। বিলাপ করতে করতেই এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান কুলসুমা।
পাড়াপড়শিদের শুশ্রূষায় জ্ঞান ফিরতেই আবার কুলসুমার বিলাপ শুরু হয়। তিনি বলতে থাকেন, ‘আঁর হুতেরে মারি হালাইসে। আঁর হুত আমেরিকা যাইবার লাই লক্ষ্মীপুরের ফজলুর রহমান ও ফেনীর সুমনসহ দালালগোরে ২৫ লাখ টাকা দিছে। হিগুনে আঁর হুতেরে আমেরিকা নিব নিব বলি গুরাইছে। হরে আঁর হুত টেয়া হিরত চাইলে হেতেরে দালালেরা হুমকি দিছে। হেই দালালেরাই আঁর হুতেরে মারি হালাইছে।’
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা এই প্রাইভেট কারের ভেতরে দুজনের লাশ পাওয়া গেছেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো মৃত বাবার মুখ দেখলেন মেয়ে
যশোরের শার্শা উপজেলায় সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো ভারতীয় নাগরিক মৃত বাবাকে দেখেছেন বাংলাদেশে থাকা তাঁর মেয়ে ও স্বজনেরা। আজ বুধবার দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ওই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ শেষবারের মতো বাংলাদেশি স্বজনদের দেখানো হয়।
মৃত ব্যক্তির নাম জব্বার মণ্ডল (৭৫)। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা থানার বাশঘাটা গ্রামের বাসিন্দা। জব্বার মণ্ডলের মেয়ে রিতু মণ্ডল ও তাঁর স্বজনেরা যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল গ্রামে বসবাস করেন। বাংলাদেশি স্বজনদের শেষবারের মতো মরদেহ দেখানোর পর কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনায় নিয়ে ওই ব্যক্তিকে দাফন করা হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বার্ধক্যের কারণে গত মঙ্গলবার জব্বার মণ্ডলের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাঁর স্বজনেরা শেষবারের মতো মরদেহ দেখতে আবেদন করেন। বিষয়টি বিএসএফের মাধ্যমে বিজিবির কাছে পৌঁছালে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বুধবার দুপুরে শার্শা সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জব্বার মণ্ডলের মরদেহ তাঁর স্বজনদের দেখানো হয়। পরে মরদেহ ফিরিয়ে নিয়ে দাফন করা হয়।
কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সুবেদার মো. সেলিম মিয়া ও বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এসি সঞ্জয় কুমার রায়। এ বিষয়ে যশোর বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (৪৯ বিজিবি) সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তের কোনো মানুষ মারা গেলে দুই দেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজন থাকলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শেষবারের মতো মরদেহ দেখানোর রীতি আছে। সেই অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জব্বার মণ্ডলের মরদেহ তাঁর মেয়েসহ স্বজনদের দেখানো হয়েছে। পতাকা বৈঠকে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ও আলোচনা হয়।