রাজধানীতে দুই মরদেহ নিয়ে চাঞ্চল্য, স্বজনদের অভিযোগ ‘হত্যা’
Published: 12th, August 2025 GMT
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুই বন্ধুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, এটি একটি পরিকল্পিত ‘হত্যা’।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। আপাতত এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করা হবে।”
আরো পড়ুন:
সাংবাদিক হত্যায় পুলিশের অবহেলা রয়েছে: ইসলামী আন্দোলন
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: ‘শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৯ গভীর ক্ষত’
স্বজনেরা বলছেন এটি পরিকল্পিত হত্যা, তাহলে কিভাবে অপমৃত্যু মামলা হয়-এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, “আমরা ময়নাতদন্ত করছি। সেরকম কিছু পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কারণে এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
পুলিশ ও স্বজনদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে জাকির তার বন্ধু মিজানুর এবং গাড়ির মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভের সঙ্গে ঢাকায় আসেন।তাদের উদ্দেশ্য ছিল সৌরভের এক আত্মীয়কে ইতালি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া। সে কাজ শেষে তারা মৌচাকের ডা.
সৌরভ গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার ভোরে তিনি বাসায় ফিরে যান, জাকির ও মিজানুর গাড়িতেই ছিলেন। পরের দিন (রবিবার) সকাল থেকে জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোন করে জানায় যে হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জাকিরের বাবা মো. আবু তাহেরের অভিযোগ করেন বলেন, “প্রায় দুই বছর আগে জাকিরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এক দালালের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এই টাকা পল্টনের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামের এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা জাকিরকে আমেরিকা পাঠাতে ব্যর্থ হয় এবং পরে তাকে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয়। সেই টাকা ফেরত চেয়ে জাকির দীর্ঘদিন ধরে ফজলু এবং তার সঙ্গীদের পেছনে ঘুরছিলেন। কয়েকদিন আগে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চলতি মাসের ১০ তারিখের সময়সীমা দেয়। কিন্তু ঠিক সেই দিনই জাকিরকে হত্যা করা হয়। টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।”
ঢাকা মেডিকেল মর্গের সামনে নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, “মামা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি তার বন্ধু জাকিরের সঙ্গে প্রায়ই ঢাকা আসতেন এবং গাড়ি চালানো শিখতেন। তারা কেবল একজন রোগীকে নিয়ে গ্রামে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন।”
রমনা থানা পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ও ফোসকা দেখা গেছে এবং মুখ লালচে ও ফোলা ছিল। তবে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃত্যুর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য র মরদ হ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নিহত শিশুর গোসলের সময় গলায় দাগ দেখে পুলিশে ফোন স্বজনদের, সৎমা আটক
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন থেকে তিন বছর বয়সী এক কন্যাশিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শিশুর নাম সুমাইয়া আক্তার। স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার বেলা পৌনে দুইটার দিকে ইউনিয়নের খানপুর গ্রামের চাপরাশি বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত শিশুর সৎমা শিউলী আক্তারকে আটক করেছে।
নিহত শিশু সুমাইয়া আক্তারের চাচা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই ফয়সাল আহমেদ সৌদিপ্রবাসী। দুই বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। পরে বিয়ে করেন শিউলী আক্তারকে (২৪)। সুমাইয়া তাঁর ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। ফয়সাল বিদেশে যাওয়ার সময় বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে যান। তাঁরা সেখানেই থাকতেন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁর ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলীর বক্তব্য অনুযায়ী কয়েক দিন ধরে তাঁর ভাতিজি সুমাইয়া অসুস্থ ছিল। গতকাল দুপুরে তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শিউলী আক্তারকে ঘুম ভাঙাতে গিয়ে দেখেন তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান প্রায় ৩০ মিনিট আগে শিশুটি মারা গেছে।
সাইফুল ইসলাম জানান, ভাতিজির মৃত্যুর পর লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আজ সকালে লাশ গোসল করানোর সময় সেখানে উপস্থিত স্বজনেরা সুমাইয়ার গলায় দাগ দেখতে পান। পরে তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে বেগমগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বেগমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় মৃতদেহের ডান কানের গোড়ায় কালো দাগ দেখেছেন। এ ছাড়া শিশুটির শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। উদ্ধার করা লাশ তাঁরা ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে হত্যা বলে মনে হচ্ছে। শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির সৎমা শিউলী আক্তারকে আটক করা হয়েছে। শিশুর স্বজনদের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।