আয় বেশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেনে, কক্সবাজার রুটে কত
Published: 13th, August 2025 GMT
দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম। যাত্রাপথে নিরাপত্তা নিয়েও তেমন কোনো শঙ্কা নেই। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে দূরের গন্তব্যে যেতে ও সময়মতো পৌঁছাতে আন্তনগর ট্রেন পছন্দ মানুষের। পরিবার–পরিজন নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় যেতেও লোকজন রেলপথকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। যার একটা ছাপ পাওয়া গেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আয়ে।
বিদায়ী অর্থবছরে (গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত) আন্তনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত দুই জোড়া ট্রেন থেকে। বৃহত্তম সমুদ্রসৈকতের পর্যটন শহর কক্সবাজারে ঘুরতে যান লাখো মানুষ। সড়কপথে নানা ঝক্কিঝামেলা এড়াতে ট্রেনেই যাতায়াত করেন তাঁরা। কক্সবাজার রুটে চলাচলরত চার জোড়া ট্রেন থেকে এক অর্থবছরে আয় হয়েছে শত কোটি টাকার কাছাকাছি। আবার রুটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থেকে। দেশের প্রধান দুই শহরে যাতায়াতের জন্য ট্রেন ব্যবহার করেছেন ৪০ লাখের বেশি মানুষ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করা ছয় জোড়া আন্তনগর ট্রেনের প্রতিটির আয় হয়েছে ২০ কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে তূর্ণা এক্সপ্রেসের আয় হয় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিরতিহীন আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের আয় যথাক্রমে ২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও ২৯ কোটি টাকা।২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে আন্তনগর ট্রেনগুলোয় চড়েছেন ১ কোটি ৫১ লাখ মানুষ। তাঁদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় হয়েছে ৫০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। একটি অঞ্চল যমুনা নদীর পূর্ব পাশে, যা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগ) হিসেবে পরিচিত। আর যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে গঠিত (রাজশাহী-রংপুর-খুলনা বিভাগ)। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে।
চালুর পর থেকে কক্সবাজার রুট খুবই লাভজনক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই রুটের ট্রেনগুলোর টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। আরও ট্রেন চালানো হলে যাত্রীর অভাব হবে না। সিলেট, চাঁদপুর থেকে ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলেও যাত্রী পাওয়া যাবে।এ বি এম কামরুজ্জামান, বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রামযে রুটে যাত্রী ও আয় বেশিরেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ২৯ জোড়া আন্তনগর ট্রেন বিগত অর্থবছরে যাত্রী পরিবহন করেছে ১ কোটি ৫১ লাখ জন। পূর্বাঞ্চলের রুটগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে চলাচল করা ট্রেনগুলোয় সবচেয়ে বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করেছে। এই পথে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা অন্যান্য রুটের চেয়ে বেশি। ছয় জোড়া আন্তনগর ট্রেনে যাতায়াত করেছেন ৪০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৩ জন। তুলনামূলকভাবে এই রুট থেকে প্রতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভাড়া আদায় হয় রেলের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৬৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার ভাড়া আদায় হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করা ছয় জোড়া আন্তনগর ট্রেনের প্রতিটির আয় হয়েছে ২০ কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে তূর্ণা এক্সপ্রেসের আয় হয় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিরতিহীন আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের আয় যথাক্রমে ২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও ২৯ কোটি টাকা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সব সময় বেশি যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশের দুই বড় শহর হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম। ঢাকা হচ্ছে দেশের রাজধানী। আর চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে দেশের প্রধান ও কার্যকর সমুদ্রবন্দর রয়েছে। একে ঘিরে এই অঞ্চলে শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে নানা ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এখানে অবস্থান করেন। দেশের দুই বড় শহরের মধ্যে মানুষ নানা প্রয়োজনে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাঁদের অধিকাংশের পছন্দ ট্রেন।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে চলাচলরত দুই জোড়া ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৪০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর যাত্রী পরিবহন করেছে ১৩ লাখ ৭২ হাজার। ঢাকা-কিশোরগঞ্জে তিন জোড়া ট্রেন থেকে আয় হয় ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যাতায়াত করেছেন ১৬ লাখ ৫৬ হাজার যাত্রী। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে দুই জোড়া ট্রেনে যাতায়াত করেছেন ৯ লাখ ২৮ হাজার জন। আয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম-জামালপুর রুট থেকে রেলের আয় হয় ১৯ কোটি টাকা। ঢাকা থেকে তারাকান্দি রুটে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ঢাকা-নোয়াখালী রুটে ১৪ কোটি ৩৮ লাখ, ঢাকা-জামালপুর রুটে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
কক্সবাজার রুটে আয় প্রায় শত কোটি টাকাচালুর পর থেকে রেলযাত্রীদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে কক্সবাজার রুটের ট্রেনগুলো। ঢাকা থেকে সড়কপথে পর্যটন শহরে যেতে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা লাগে। আবার কখনো কখনো এর চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে যানজটের ভোগান্তি, গাড়ি নষ্ট ও দুর্ঘটনায় পড়ার শঙ্কা। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক কাজ করে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরু মহাসড়কে, যেখানে প্রায় সময় পর্যটকবাহী গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসব ভোগান্তি এড়াতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ট্রেনেই চড়েন।
গত ১২ মাসে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে চলাচলরত দুই জোড়া ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৮৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কক্সবাজার এক্সপ্রেস থেকে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ এবং পর্যটক এক্সপ্রেস থেকে ৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এসব ট্রেনে করে কক্সবাজারে আসা-যাওয়া করেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ২৬৭ জন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট থেকে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই রুটে প্রতিদিন দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এগুলোয় এবার যাত্রী যাতায়াত করেছেন ৩ লাখ ৯৪ হাজার জন।
কক্সবাজারের পরে দেশের মানুষের ভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্র হচ্ছে চায়ের রাজধানীখ্যাত সিলেট। এখানে রয়েছে পাহাড়, ঝরনা, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, রাতারগুল জলাবনের মতো পর্যটন স্পট। নতুন নতুন পর্যটন স্পটও তৈরি হচ্ছে। ফলে সিলেটে বেড়াতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনে যাতায়াত করা মানুষ তো আছেই। পূর্বাঞ্চলের রুটের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভাড়া এসেছে ঢাকা-সিলেট রুট থেকে। রেলওয়ের আয় হয়েছে ৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আয়ে তৃতীয় হলেও যাত্রী পরিবহনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা-সিলেট। এবার আসা-যাওয়া করেছেন ২৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। এই পথে চলাচল করা পারাবত এক্সপ্রেস একক ট্রেন হিসেবে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহন করেছে, যার পরিমাণ ১০ লাখ ২৪ হাজার জন। আয় হয়েছে ২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে দুই জোড়া ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহর। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হচ্ছে এ দুই শহর। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সব সময় যাত্রী পরিবহন হয় বেশি। তিনি বলেন, ‘চালুর পর থেকে কক্সবাজার রুট খুবই লাভজনক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ রুটের ট্রেনগুলোর টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। আরও ট্রেন চালানো হলে যাত্রীর অভাব হবে না। সিলেট, চাঁদপুর থেকে ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলেও যাত্রী পাওয়া যাবে। এ রুটে ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। তবে ইঞ্জিনসংকটের কারণে এই মুহূর্তে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ত য় ত কর ছ ন পর বহন ২৯ ক ট য় হয় ছ সবচ য় র লপথ র বহন
এছাড়াও পড়ুন:
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে
বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।
সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।
মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।
সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।
এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।