রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় একটি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে মারধরের পর জমির মালিকের ছেলে তানজিল জাহান ইসলাম ওরফে তামিম (৩৪) মারা যান। তিনি দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা ছিলেন। নিহত যুবকের বাবা সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার ১০ মাসেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

পুলিশ সূত্র বলছে, মারধরের ভিডিওর যে ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটির ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বা ডিভিআর গায়েব করা হয়েছে। সেটা এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এটা উদ্ধার হলে এ হত্যা মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মারধরের ভিডিওর ফুটেজ উদ্ধার না হলেও মামলার বাদীর বাসার সিসি ক্যামেরার ডিভিআর উদ্ধার করা হয়েছে। সেটার ফরেনসিকের জন্য আদালতের মাধ্যমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে। তবে সিআইডি থেকে এখনো প্রতিবেদন আসেনি।

হাতিরঝিল থানা–পুলিশের পর মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

জাকারিয়া আলম প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন আগে তাঁকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাদীর সঙ্গে কথা হয়েছে, তদন্তকাজ চলছে।

গত বছরের ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা মহানগর প্রজেক্টের বক্ল-ডির নির্মাণাধীন ভবনের অষ্টম তলার করিডরে জমির মালিক সুলতান আহমেদ ও তাঁর ছেলে ও আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে এই হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে হামলায় জমির মালিকের ছেলে তানজিল আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

ঘটনার এক দিন পর হাতিরঝিল থানায় ১৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুনকে। মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয় প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপির নেতা শেখ রবিউল আলমকে। এ ঘটনার পর গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমের সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।

এ মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পিবিআইয়ে হস্তান্তরের আগে মামলাটি তদন্ত করেছে হাতিরঝিল থানা–পুলিশ। হাতিরঝিল থানার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরাফাত বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের অনেকেই এখন জামিনে রয়েছেন।

ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমির মালিক সুলতান আহমেদের। তবে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মামুনকে। আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাঁর শ্বশুরের কেনা একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তিনি। মোহাম্মদ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্ল্যাট নিয়ে জমির মালিকের সঙ্গে আবাসন প্রতিষ্ঠানের ঝামেলা। ঘটনার সময় আমি আমার ফ্ল্যাটের ভেতরে ছিলাম। কিন্তু মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। পরে আমার শ্বশুরের ফ্ল্যাটটিও জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে।’ তাঁর দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিও তাঁর বাসার ক্যামেরার। ঘটনার দিন বাসার দরজা ভেঙে সিসি ক্যামেরার ডিভিআর জোর করে নিয়ে গেছে। এরপর তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ডিভিআরটি উদ্ধার করলে এ হত্যা মামলার রহস্য বেরিয়ে আসবে। এই ডিভিআর উদ্ধারে তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে আদালতে অপর একটি মামলা করেছেন।

ছেলে হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি তিনি জানেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক তদন ত কর ড ভ আর ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

বাড্ডায় মন্দিরে দায়িত্বরত পুলিশের গুলি চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত

রাজধানীর বাড্ডায় একটি মন্দিরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ৩০টি গুলি চুরির ঘটনায় বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও পাঁচজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডার নিমতলীর শ্রীশ্রী মহাদেব আশ্রম ও কালীমন্দিরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের জন্য মন্দিরের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে থাকা একটি নির্মাণাধীন ভবনের দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য ও তিনজন আনসার সদস্যের পাশ থেকে তাঁদের ব্যবহৃত চারটি ব্যাগ, দুটি মানিব্যাগ ও তিনটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর মধ্যে একটি ব্যাগে শটগানের ৩০টি গুলি ছিল। পরে সকাল পৌনে ১০টায় পুলিশ মণ্ডপের পাশের একটি জায়গা থেকে চুরি হওয়া গুলিগুলো অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারী উপপরিদর্শক এবং পাঁচজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ওসি প্রত্যাহারের অফিস আদেশ এখনো পাইনি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাড্ডা থানার নতুন ওসি হাবিবুর রহমান
  • রেললাইনে বিকল যাত্রীবাহী অটোরিকশা, ট্রেনের ধাক্কায় মা-মেয়ে নিহত
  • বাড্ডায় মন্দিরে দায়িত্বরত পুলিশের গুলি চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত