ট্রাম্পের শুল্কের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের হীরার বাজারে ভারতের রাজত্ব কি ধসে পড়বে
Published: 13th, August 2025 GMT
আলোর উৎসব দীপাবলির দিনে ভারতীয় ব্যবসায়ী কালপেশ প্যাটেলকে হয়তো তাঁর আট বছরের হীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার বাতি চিরতরে নিভিয়ে দিতে হবে।
৩৫ বছর বয়সী কালপেশ গুজরাটের সুরাট শহরে ছোট একটি হীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালান। সেখানে প্রাকৃতিক অমসৃণ হীরা কেটে এবং পালিশ ও মসৃণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। প্রায় ৪০ জন কর্মী ওই কারখানায় কাজ করেন।
গত কয়েক বছরে নানা সমস্যার মধ্যেও কালপেশ তাঁর ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। তবে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। কালপেশের আশঙ্কা, এ শুল্ক হয়তো তাঁর কারখানার জন্য কফিনের শেষ পেরেক হয়ে উঠবে। কারণ, প্রাকৃতিক হীরাশিল্প খাত আগে থেকেই নানা সমস্যার মধ্যে আছে।
কালপেশ আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের এখনো দীপাবলির জন্য কিছু অর্ডার আছে, সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করব।’
চলতি বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দীপাবলি উৎসব হবে। ভারতীয় হিন্দুদের জন্য এটি একটি বড় উৎসব। এই সময় সাধারণত দেশের ভেতর বেশির ভাগ পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়।
তবে কালপেশের আশঙ্কা, হয়তো উৎসবের আগেই তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় রপ্তানিকারকেরা অর্ডার বাতিল করতে পারেন।
কালপেশ বলেন, ‘অর্ডার কমে যাওয়ার কারণে বেতন দেওয়া এবং অন্যান্য খরচ চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
সুরাটের প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর একজন কালপেশ। সুরাটকে ‘ভারতের হীরা নগরী’ বলে ডাকা হয়। বিশ্বে উত্তোলিত প্রতি ১৫টি প্রাকৃতিক হীরার মধ্যে ১৪টিরই কাটা ও পালিশের কাজ এখানে হয়।
ভারতে হীরাশিল্প খাতের শীর্ষ সংস্থা জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (মার্চ পর্যন্ত) দেশটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০ কোটি ডলার মূল্যের প্রক্রিয়াজাত হীরা রপ্তানি করেছে। এটি ভারতের মোট প্রক্রিয়াজাত হীরা রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।যুক্তরাষ্ট্র তাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। ভারতে হীরাশিল্প খাতের শীর্ষ সংস্থা জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (মার্চ পর্যন্ত) দেশটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০ কোটি ডলার মূল্যের প্রক্রিয়াজাত হীরা রপ্তানি করেছে। এটি ভারতের মোট প্রক্রিয়াজাত হীরা রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (মার্চ পর্যন্ত) বিশ্বে মোট ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার মূল্যের প্রক্রিয়াজাত হীরা রপ্তানি করেছে ভারত।
কলকাতা থেকে হীরা রপ্তানি করেন ডিম্পল শাহ। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ক্রয়াদেশগুলো ইতিমধ্যেই বাতিল হতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বেশি শুল্কের কথা বলে জাহাজ থেকে চালানের পণ্য নামাতে চাইছে না। এটা হীরাশিল্পে আমার দুই দশকের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়।’
ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। আলোচনার পরও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়। এ ঘোষণা গত ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের আলোচনা এখনো চলছে।
তা ছাড়া গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এতে মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই অতিরিক্ত শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ভারতীয় রত্নশিল্প আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ১ শতাংশ শুল্কের আওতায় ছিল। আর এখন মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ১ শতাংশে।ট্রাম্প এ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে ভারতের জন্য অর্থদণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, তিনি যখন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে রাশিয়াকে চাপ দিচ্ছেন, তখন ভারত অনবরত মস্কোর কাছ থেকে তেল কিনে যাচ্ছে।
ভারতীয় রত্ন শিল্প আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ১ শতাংশ শুল্কের আওতায় ছিল। আর এখন মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ১ শতাংশে।
বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল রিসার্চ ট্রেড ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কথা না শোনায় এবং কৃষি ও দুগ্ধ খাতে প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় ভারতের ওপর চটেছেন ট্রাম্প। আর সে ক্ষোভ থেকেই ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছেন তিনি। শ্রীবাস্তব ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা এবং সেখানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে ওয়াশিংটনের বেশি প্রবেশাধিকার চাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধকে ইঙ্গিত করেছেন।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণ যা–ই হোক না কেন, ভারতে আগে থেকেই জর্জরিত হীরাশিল্প খাতের ওপর এর বাজে প্রভাব পড়ছে।
গুজরাটের সুরাট, আহমেদাবাদ ও রাজকোট শহরে হীরার কাটিং ও পালিশের কারখানাগুলোয় ২০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে অনেকেই বেতন কমে যাওয়ার সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।
গুজরাটের ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি রমেশ জিলরিয়া আল–জাজিরাকে বলেন, মহামারির কারণে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে পড়ায় হংকং ও চীনের আন্তর্জাতিক বাজারগুলোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়া থেকে অমসৃণ হীরা আমদানিতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার ওপর জি–সেভেনের নিষেধাজ্ঞার কারণেও ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়ছে।
রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবেই অপ্রক্রিয়াজাত হীরার একটি বড় উৎস।
জিলরিয়া বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত দুই বছরে ৮০ জন হীরাশ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন।
ভারতের সুরাটে হীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে কাজ করছেন এক কারিগর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় জ ত হ র য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প ইউক র ন র জন য ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরের লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে চলছে
বন্দরের ঐতিহ্যবাহী লৌহিয়া খালটি দখল উৎসবে মেতে উঠেছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। যে খাল দিয়ে এক সময় শীতলক্ষা-বহ্মপুত্র নদীতে সংযোগ ছিল।
সেই ঐতিহ্যবাহী খালটি অবৈধভাবে দখল করে পাঁকা স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছে ওই সকল ভূমিদস্যুরা।
খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারনে পয়নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উল্লেখিত খাল দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা ।
এলাকাবাসী ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ রশিদ ও সানাউল্লাহ সানু এবং বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের মদদপুষ্ট হয়ে আদর্শ বিদ্যানিকেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে খাল দখল করে রাস্তা বানিয়েছে।
তেমনি ভাবে গার্মেন্টস, ব্যাটারি ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া খালটি ভরাট করার কারনে বন্দর ইউনিয়নের ৯ নং ওর্য়াডের কদমতলীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ড্রেজার দিয়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাট করতে গিয়ে সরকারি খাল দখল করে নিয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।
বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত হোসেন সৈকত জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রভাবশালী মহল ও ভূমিদস্যুদের কর্তৃক দখলকৃত খালটি উদ্ধার করে পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।