রোডক্র্যাশে বেশি মারা যাচ্ছে তরুণরা
Published: 14th, August 2025 GMT
১২ আগস্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হলো। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি”। এই দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রতি বছর পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। কিন্তু রোডক্র্যাশে বেশি মারা যাচ্ছে তরুণরা, সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ রোডক্র্যাশ। তাই দিবসটিতে রোডক্র্যাশ প্রতিরোধে তরুণদের ভূমিকা সম্পর্কে কর্মসূচি রাখা প্রয়োজন।
রোডক্র্যাশে প্রতি বছর বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ লাখ ছুঁইছুঁই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রোডক্র্যাশে বছরে ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয়। রোডক্র্যাশে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২ জন ব্যক্তি এবং দিনে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ২০০ জনের। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সকল বয়সের মানুষের মৃত্যুর ১২তম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। একই সঙ্গে কর্মক্ষম ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুর কারণও রোডক্র্যাশে। প্রতি লাখে এই মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ। মৃত্যুর পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও অনেক। রোডক্র্যাশে দুই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হন।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহের সড়কে ঝরল ২ শিক্ষার্থীর প্রাণ
অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায়, নারীর মৃত্যু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে, ২১ হাজার ৩১৬ জনের। একইভাবে ২০১৮ সালে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫.
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২৪ সালে দেশে প্রাণহানি হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনের। এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে। সেবার সড়কে মৃত্যু হয়েছিল ৫ হাজার ৮৪ জনের।
বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকদিন এক হাজারের বেশি শিশু এবং ৩০ বছরের কম বয়সী যুবক রোডক্র্যাশে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১৪ জন রোডক্র্যাশে প্রাণ হারান। অথচ এই মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমানো সম্ভব।
ওয়ার্ল্ড হেলথ র্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ ব্যতীত দেশে রোডক্র্যাশ কমানো বা রোধ করা সম্ভব নয়। সঠিক আইন ও তার প্রয়োগের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা, যা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা, তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে। তাই সবার জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।
বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আমাদের দাবি, সড়ক নিরাপত্তার সংস্কার ভাবনায় সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য একটি অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ ছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অর্জনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রোডক্র্যাশে প্রাণহানির সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘভুক্ত সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী রোডক্র্যাশে নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ। এ ছাড়াও সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০২১ সালে বেলারুশ, ব্রুনাই দারুসসালাম, ডেনমার্ক, জাপান, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, রাশিয়ান ফেডারেশন, ত্রিনিদাদ, টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভেনিজুয়েলা রোডক্র্যাশে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত পরিবহন সংক্রান্ত আইন। তাই উল্লিখিত বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে এই আইন ও বিধিমালা যথেষ্ট নয়। এ জন্যই প্রয়োজন জাতিসংঘ প্রস্তাবিত বর্ণিত ৫টি স্তম্ভ এবং আচরণগত ঝুঁকির কারণসমূহ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন।
রোডক্র্যাশ প্রতিরোধে আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হলে প্রথমেই সড়কে প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা উদঘাটন করে এর সমাধান করা প্রয়োজন। তাই সড়ককে নিরাপদ করতে আলাদা করে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা জরুরি। সড়ককে নিরাপদ করতে সবার একযোগে কাজ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন হতে হবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন আইন প রণয়ন ব শ বব য প ২০২১ স ল ব যবহ র দ র ঘটন পর বহন ন র পদ বছর ব
এছাড়াও পড়ুন:
এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
রিট আবেদন থেকে জানা যায়, এমফিল/পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য গত ১০ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে ন্যূনতম নম্বর, শ্রেণির সঙ্গে যে জিপিএ/সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করে তা সমন্বয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দেন কয়েকজন প্রার্থী। এতে ফল না পেয়ে সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ উজ্জলসহ তিনজন প্রার্থী রিটটি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জুয়েল আজাদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন আদনান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
পরে আইনজীবী জুয়েল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন কোনো নীতিমালা না থাকায় গ্রেডিং সিস্টেম নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বৈষম্য দেখা যায়। কারণ, সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নীতিমালা নেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাসচিব, উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।