ভোঁদড়পল্লির শিশুদের রঙিন ক্যানভাসে গ্রামবাংলার চিত্র
Published: 17th, August 2025 GMT
চিত্রা নদীর ঘাটে বাঁধা মাছ ধরার নৌকা। পাশে খাঁচায় শান্তভাবে বসে আছে ভোঁদড়। সেই নদীর পাড়েই রঙে রঙে ক্যানভাস ভরিয়ে তুলছে প্রত্যন্ত ভোঁদড়পল্লির শিশুরা। কেউ আঁকছে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে, কারও তুলিতে ফুটে উঠছে কৃষকের ঘামে ভেজা দেহ ও ধানের মাঠ। আবার কারও ছবিতে নদীর বুকে পাল তুলে ভেসে চলেছে নৌকা, কারও রঙের আঁচড়ে ভোরের আকাশ জেগে উঠছে আগুনঝরা সূর্যের লাল-কমলা আভায়।
১০ আগস্ট ছিল এস এম সুলতানের ১০১তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে নড়াইল সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গোয়াইলবাড়ির জেলেপল্লিতে গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে দুই দিনব্যাপী সুলতান উৎসবের। ওই পল্লির শিল্প সংগঠন ‘চারু প্রাঙ্গণ শিল্পালয়’ এ উৎসবের আয়োজন করে। এ উৎসবে সহযোগিতা করে এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন ও অটার ফিশিং কমিউনিটি বাংলাদেশ।
গত শুক্রবার সুলতানের জীবন নিয়ে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের শুরু, আর শেষ হয় গতকাল সন্ধ্যায়। শিল্পচর্চা, প্রদর্শনী, আলোচনা সভা আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভোঁদড়পল্লিতে প্রথমবারের মতো সুলতান উৎসবের আয়োজন করা হলো।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ভোঁদড়পল্লির শতাধিক শিশু। তাদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলে, ‘শিল্পী সুলতানের জন্মদিন উপলক্ষে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এখানে আমি সুলতানের একটি ছবি এঁকেছি। আমার খুব ভালো লাগছে।’
গ্রামবাংলার চিরচেনা এক দৃশ্য এঁকেছে শিক্ষার্থী লেখা বিশ্বাস। সে বলে, ‘আমার সঙ্গে আরও অনেকে এসেছে ছবি আঁকতে। আমার ছবিতে একটি গ্রামের ছবি এঁকেছি। ছবিতে কয়েকটি ঘরবাড়ি রয়েছে। তাঁর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। সেখানে চলছে নৌকা। আকাশে পাখি উড়ছে। আমরা সবাই মিলে খুবই আনন্দ করছি।’
চিত্রাঙ্কনের সময় শিশুদের পাশে থেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন তাঁদের প্রশিক্ষক চিত্রশিল্পী ডিডি মল্লিক। তিনি বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শিষ্য। গুরু সুলতানের শিক্ষা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘চারদেয়ালের মধ্যে থেকে মনে করে কিংবা অনুমান করে ছবি আঁকা যায় না। আমি চাই ছেলেমেয়েকে প্রকৃতির মাঝে নিয়ে আসতে। যাতে ফুল-পাতা সে ছুঁয়ে দেখতে পারে। তাহলে তার শেখাটা ভালো হয়। সে আরও সুন্দর করে ছবিটা ফুটিয়ে তুলতে পারে৷ এ কারণেই নদীর পাড়ে খোলা পরিবেশে এ আয়োজন।’
আয়োজক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করা জেলেদের এই পল্লির শিশুরা বেশির ভাগ সময়ই নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রেও তারা অবহেলিত। তাই তাদের কথা ভেবে ৯ মাস আগে ওই পল্লিতে ‘চারু প্রাঙ্গণ শিল্পালয়’ নামে একটি শিল্প সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সামছুল ইসলাম (স্বপন)। এর পর থেকে বিনা পারিশ্রমিকে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোঁদড়পল্লির শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখানো হচ্ছে।
সামছুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিনব্যাপী এ উৎসব করার উদ্দেশ্য শিশুদের সঙ্গে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পরিচয় করানো, যাতে সুলতানের চিত্রকর্ম দেখে শিশুরা অনুপ্রাণিত হতে পারে, নিজ অঞ্চল ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিশুরা জানতে পারে।’
দেয়ালে টানানো হয়েছে শিশুদের হাতে আঁকা ছবি। গতকাল শনিবার বিকেলে নড়াইল সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গোয়াইলবাড়িতে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পল ল র শ শ উৎসব র এ উৎসব স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
২০১০ সাল থেকে ৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও হয় মাউন্টেন ফেস্টিভ্যাল। ২১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বসবে এবারের আসর। উৎসবে প্রিমিয়ার হবে বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘সামিট ইজ আ ওমেন’। তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন মুনতাসির মামুন। এ ছাড়া উৎসবে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, স্পেন ও ফ্রান্সের ৭টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট জয় সহজ ছিল না। এ জন্য নিতে হয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি, যাওয়ার পর নানা শারীরিক ও মানসিক বাধা টপকে এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেছেন নিশাত। নির্মাতা জানান, ১৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ‘সামিট ইজ আ ওমেন’-এ উঠে আসবে সেই গল্প।
‘সামিট ইজ আ ওমেন’–এর পোস্টার। নির্মাতার সৌজন্যে