এক বছরের অপেক্ষা কবে শেষ হবে
Published: 23rd, September 2025 GMT
এক বছর আগে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফেনী শহর। সেই বন্যায় প্রাণহানি এবং হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শহরের প্রধান সড়কগুলোও তাদের জৌলুশ হারিয়েছিল। একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা এক শহরে পরিণত হয়েছে। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের মতো ব্যস্ততম রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের ৩০টির বেশি অভ্যন্তরীণ সড়কের করুণ দশায় কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে।
এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর কোনো দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলো ডুবে যায়। কারণ, শহরের নিষ্কাশনব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। এই ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো শুধু যানবাহনের গতিই কমিয়ে দেয়নি, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যানবাহনের চালকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, আয় কমছে আর যাত্রীরাও পড়ছেন চরম ঝুঁকির মুখে। শহরের ড্রেনেজব্যবস্থার করুণ দশাও শহরের সাধারণ মানুষের হতাশা তৈরি করেছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ আশার বাণী শোনাচ্ছে যে দ্রুতই সংস্কারকাজ শুরু হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানা গেছে, যার মাধ্যমে ৫০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। তবে প্রশ্ন হলো, এই উদ্যোগ নিতে কেন এক বছরের বেশি সময় লাগল? জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে অন্তত প্রাথমিক মেরামত শুরু করা যেত না কি?
ফেনীর সড়কগুলোর এই বেহাল কেবল আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে নয়, বরং প্রশাসনিক সদিচ্ছা এবং সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবেও হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যদি অরক্ষিত থাকে, তবে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এক বছর আগে যে বন্যা শহরের প্রায় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল, তার ক্ষত এখনো শুকায়নি। অথচ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি কাজগুলোই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হচ্ছে।
নাগরিকদের করের টাকা যখন সড়ক সংস্কারে কাজে লাগে না, তখন তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। আমরা আশা করি, পৌর কর্তৃপক্ষ শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ফেনীকে তার হারানো সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সময় বাড়ে, প্রকল্প শেষ হয় না
চট্টগ্রাম নগর পরিষ্কার রাখা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য সাতটি বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। সাত বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে দুটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও বাকি পাঁচটিরও কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কাজ বন্ধ করে চুক্তি বাতিলের আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন প্রকল্প নয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চলমান আরও তিনটি প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। ৩ থেকে ১১ বছর ধরে প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ঠিক সময়ে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পাশাপাশি নগরবাসীও।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের সুপারিশ করা হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায়। প্রায় ২০ বছর পর ২০১৪ সালে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। নির্ধারিত সময় ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। প্রকল্পটি তিন দফা সংশোধন করা হয়েছে। চার দফায় সময় বৃদ্ধি করা হয় আট বছর।ভবন নির্মাণ ছাড়া অন্য তিনটি প্রকল্প হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বহদ্দারহাটের বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প; নগরের কুলগাঁও এলাকায় বাস টার্মিনাল নির্মাণ এবং নগরের বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। চার প্রকল্পের মোট খরচ হবে ৫ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশনের প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, অপ্রতুল বরাদ্দ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং বাধা-প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ আটকে ছিল। সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলছেন, এখন কাজে গতি এসেছে, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনার ঘাটতিকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ বন্ধ। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের বান্ডেল রোড এলাকায়